নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমানো যাচ্ছে না

নিউমোনিয়ায় মৃত্যু কমানো যাচ্ছে না

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: দেশে নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুর হারে অগ্রগতি হয়নি। প্রায় পাঁচ বছর আগের চিত্র এখনো বিরাজ করছে। ২০১১ সালে জন্ম নেওয়া প্রতি হাজার শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যেত ১১.৪ জন। ২০১৮ সাল নাগাদ এই মৃত্যুর হার আটজনে কমে আসে।

পরের পাঁচ বছরে মৃত্যুহার দশমিক ৬ শতাংশ কমে হয় ৭.৪ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা না গেলে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব নয়। অপুষ্টি, অপরিণত শিশুর জন্ম, শিশুকে বুকের দুধ পানে মায়ের অনীহা, বায়ুদূষণ, পরিবেশদূষণ, অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময়ে শনাক্ত করতে না পারা ইত্যাদি কারণে নিউমোনিয়া আক্রান্ত ও মৃত্যু কমানো যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতির মধ্যে আজ রবিবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস।

এবার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন, প্রতিটি প্রশ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ’। নিউমোনিয়া এখনো বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই রোগের ফলে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ শিশুর মৃত্যু হয়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সব মৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ।

আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতি ঘণ্টায় দুই থেকে তিনজন শিশুর মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায়, যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। বছরে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৪০ লাখ শিশু। এর মধ্যে মাত্র ছয় লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ২৪ হাজার শিশু, যা পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যুর ২৪ শতাংশ।

গতকাল শনিবার আইসিডিডিআরবি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় এ গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়।

বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত দুই-চার সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হৃৎপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী বলেন, বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে একটু আলাদা। ২০১৯ ও ২০২১ সালে আইসিডিডিআরবির গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে এরা আবির্ভূত হচ্ছে। এ ছাড়া শৈশবকালীন অপুষ্টি, যা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ গুণ বাড়িয়ে দেয় এবং এটি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা, যেখানে ৮ শতাংশ শিশু ওয়েস্টিং বা উচ্চতার তুলনায় কম ও জনসম্পন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়।

তিনি বলেন, ঘরের মধ্যে বাতাসের গুণগতমান ভালো হলে নিউমোনিয়া মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। হাত ধোয়ায় রোগ কমে ২১ শতাংশ। শিশুর জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা ১৫ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটারের প্রাপ্যতা নিউমোনিয়া রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অক্সিজেন থেরাপির তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ মৃত্যুহার হ্রাস করতে সক্ষম।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, শ্বাসের গতি থেকে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কি না। শিশুর বুক ভেতরে দেবে যায়। এর সঙ্গে শিশুর প্রচুর জ্বর থাকে। শিশু নেতিয়ে যায়, খেতে পারে না, কাশতে কাশতে বমি করে। এই লক্ষণগুলো দেখলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া থাকতে পারে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। নিউমোনিয়া যত দ্রুত শনাক্ত হবে ও চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি ততই কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *