কাউসার মাহমুদ : পৃথবিীর এক অমোঘ বিধান হল ‘মৃত্যু’। সবাইকেই একদিন চলে যেতে হয়। বিদায় জানাতে হয় এই নশ্বর পৃথিবীর সমস্ত কিছুকেই। কিন্ত এই যাওয়াটা, এই বিদায় জানানোটাকে রাঙাতে পারে কয়জন! যারা পারে তারা সফল। তখন আমরা বলি, একজন সফল মানুষ ওপারেও সফল হতে তার প্রভুর ডাকে বিদায় জানিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। যেমন ১৯ অক্টোবর শুক্রবার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত অালেম, বুযুর্গ সিলেট জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজারের প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান রহ.। তার বর্ণিল জীবনে তিনি একজন সফল মানুষ। ইসলাম ও দ্বীনের জন্য তার কণ্ঠ ছিল সদা সুউচ্চ। বাতিলের বিরুদ্ধে তার উচ্চকিত কণ্ঠে বারবার কেঁপেছে বাংলার রাজপথ। মানুষকে শাশ্বত সুন্দরের দিকে আহবান করতে করতেই নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন এই মহীরূহ।
কেমন ছিলেন খেলাফত মজলিসের আমির প্রিন্সিপাল হাবিবুর রহমান রহ.। হাদীসের দরসে কতোটা আবেগাপ্লুত হতেন পড়াতে পড়াতে। তারই স্মৃতিচারণ করেছেন প্রিন্সিপাল রহ.-এর ক’জন ছাত্র।
দারুল হাদীস দুর্লভপুর মাদরাসা ও দারুর রাশাদ জন্তিপুর মাদরাসার শিক্ষা সচিব মুহতামিম মাওলানা কাউসার আহমদ বলেন, আমি হুজুরের কাছে অনেক কিতাব পড়েছি। কুরআন তরজমা, জালালাইনসহ আরো বেশ কিছু কিতাব হুজুরের কাছে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। দরসে খুব ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বসতেন তিনি। কিন্ত এর বাইরে হুজুর যেন অন্য মানুষ। সহজ হয়ে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। এই মানুষটি শিশুদের সাথে যেন একদম শিশু হয়ে যেতেন। অনেক বিকেল এমন দেখেছি, মাঠে ছেলেরা বল খেলছে। সেই বল কাছে এলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন প্রিন্সিপাল রহ. হুজুর।
হুজুরের আরেক ছাত্র সিলেটের বিশিষ্ট আলেম মুফতি আখতার হুসাইন বলেন, হুজুরের কাছে শামায়েলে তিরমিজী পড়েছি আমি। তিনি হুজুরের দরসের স্মৃতিচারণ করে বলেন, হাদীসের মসনদে পরম শ্রদ্ধার সাথে বসতেন হাবীবুর রহমান রহ.। আলোচনায় একরকম গাম্ভীর্য চলে আসতো হুজুরের। পরে একজীবনে উনার সাথে সফরের সৌভাগ্যও হয়েছিল আমার। একজন খাঁটি দ্বীনদার, আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ হিসেবেই দেখেছি হুজুরকে। হুজুর শুধুমাত্র রাজনৈতিক ব্যক্তিই ছিলেন না। তিনি একজন খাঁটি মুজাহিদ ছিলেন। বাংলাদেশে ইসলামকে আঘাত করে যে ক’জন নাস্তিক মুরতাদ কথা বলেছেন, তাদের সবার বিরুদ্ধেই প্রথম ডাক দিয়েছিলেন তিনি। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন রাজপথে। এ ইতিহাস আর খুলে বলবার দরকার নেই।
তিনি বলেন, তেমনিভাবে তাসাউফের ময়দানে আল্লাহর ওলি ছিলেন হাবিবুর রহমান রহ.। তিনি ছিলেন আসামের জলিল বদরপুরী রহ.-এর খলীফা। তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর খলীফা। মাদানী সিলসিলার ছিলেন প্রিন্সিপাল রহ.। আমি অনেক জায়গায় তার সাথে সফর করেছি। কখনো এমন হয়েছে যে ফিরতে মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে, তখন আর বিছানায় যেতেন না তিনি। ইবাদাতে মশশুল হয়ে পড়তেন। নামাজ, তেলাওয়াত আর জিকিরেই কাটিয়ে দিতেন রাতের বাকী সময়টুকু। একবারে আমল শেষে ফজরের পর ঘুমাতে যেতেন তিনি।
শীলন বাংলাদেশের সভাপতি ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মা্ওলানা মাসউদুল কাদির বলেন, মা্ওলানা হাবিবুর রহমান একজন রাজপথের কামেল সাধক ছিলেন। যার হুংকারে বাতিলের হৃদয়স্পন্দন কেঁপে উঠতো। আল্লাহ তাআলা তার সুউচ্চ মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।
তরুণ আলেম মাওলানা তাওহীদুল ইসলাম। বেশ ক’বার হুজুরের সান্মিধ্য লাভ হয়েছ তার। হুজুরের খেদমত করেছেন। হুজুরও খুশী হয়ে দিল ভরে দোয়া করেছেন তাকে। মাওলানা তাওহীদের কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি জানান, হযরতকে একদম কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে দু’বার! তিনি এমন একজন মানুষ, যার কাছে সব বয়সি ছাত্র সমানভাবে মূল্যায়িত হত৷ তার ভাবগাম্ভির্যপূর্ণ কথা যে কারো মনে রেখাপাত করতো ৷ তার বিনয় আমার চোখে এখনও ভাসে। কত বড় আলেম তিনি অথচ তার বিনয় দেখলে কেমন শিশু মনে হত তাকে। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলার অনন্য এক গুণ ছিলো তার মধ্যে। তিনি আমাদের হৃদয়ের এক অনন্য শ্রদ্ধার সাথে চিরকাল থাকবেন। আল্লাহ হুজুরকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন।
শীলন বাংলাদেশের সভাপতি ও বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মা্ওলানা মাসউদুল কাদির বলেন, মা্ওলানা হাবিবুর রহমান একজন রাজপথের কামেল সাধক ছিলেন। যার হুংকারে বাতিলের হৃদয়স্পন্দন কেঁপে উঠতো। আল্লাহ তাআলা তার সুউচ্চ মর্যাদা বাড়িয়ে দিন।