নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বছরজুড়ে

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বছরজুড়ে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : করোনা মহামারি জয় করে ২০২১ নতুন বছরে সাধারণ মানুষের আশা ছিল জীবনে স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু করোনার প্রতাপ কমলেও সাধারণ মানুষের জীবনধারায় ভিলেন বা খলনায়ক হয়ে দাঁড়ায় নিত্যপণ্যের বাজার।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, দেশের বাজারে সিন্ডিকেট, অতি মুনাফা ইত্যাদি কারণে বছরজুড়ে দাম বেড়েছে চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাংস, পেঁয়াজ, মসলাসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের। কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীদের হিসাবেই বাজারের এই অস্থির চিত্র আগে কখনো দেখা যায়নি। চলতি বছর কিছু পণ্যের দাম দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে আসে। ফলে বছরজুড়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা দুশ্চিন্তায় ভুগেছে কিভাবে সংসার চালাবে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টিসিবির ট্রাকের সামনে দীর্ঘ লাইন থেকেই বোঝা যায় নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে মানুষ কতটা কষ্টে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার নজরদারির ব্যবস্থাও ছিল ঢিলেঢালা। কঠোর নজরদারি থাকলে নিয়ন্ত্রণ করা যেত বাজার।

কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) বলছে, ২০২০ সালে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৭ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু চালের দাম বেড়েছিল ১৯ শতাংশ। চলতি বছর চালের দাম আরো বেড়েছে। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ও আরো বেড়েছে। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে চাল কিনতে মানুষের প্রতিদিন ১৯ টাকা বেশি খরচ হয়েছিল। ২০২১-এ খরচ হয়েছে তারো বেশি।

২০২০ সালে গড়ে মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬২ টাকা কেজি। চলতি বছরের শুরুতেই তা হয়ে যায় ৬৬ টাকা। বছরজুড়ে এই দাম কিছুটা ওঠানামা করলেও বেশির ভাগ সময় ৬৬ টাকা কেজিই ছিল। একই অবস্থা নাজিরশাইল, আটাশ, স্বর্ণা, পাইজামসহ অন্য চালের দামেও। ২০২০ সালে নাজিরশাইলের কেজি ছিল ৬৯ টাকা। ২০২১-এর শুরুতেই তা ছাড়িয়ে যায় ৭০ টাকা।

চালের মতো এ বছর দামের প্রতাপ ছড়িয়েছে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম। ২০২০ সালে খোলা সয়াবিনের গড় দাম ছিল ১০১ টাকা কেজি। চলতি বছর তা দাঁড়ায় ১৫৫ টাকায়। চিনি ছিল ৬৮ টাকা কেজি, বর্তমানে ৮০ টাকা কেজি। করোনা মহামারি শুরুর পর ৬০ টাকা কেজির মসুর ডাল ৯০ টাকায় ওঠে। ২০২১ সালের মাঝামাঝিতে তা দাঁড়ায় ৯৫ টাকা কেজি। উৎপাদন খরচ ২২ থেকে ২৪ টাকা হলেও চলতি বছরজুড়ে পেঁয়াজের কেজি ছিল গড়ে ৭০ টাকার ওপরে।

চলতি বছরের শেষ দিকে ফার্মের মুরগির বাজারও অস্থির হয়ে ওঠে। বছরের বেশির ভাগ সময় ব্রয়লার মুরগি ১২০ টাকা কেজির মধ্যে ছিল। অক্টোবরে এসে ১৯০ টাকা কেজিতে ওঠে। সোনালি ছিল ২৫০ টাকা কেজি, অক্টোবরে তা ৩৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে অবশ্য কিছুটা কমেছে।

ক্যাব সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেইন বলেন, বাজারের এমন পরিস্থিতিতেও কার্যকর নজরদারি দেখা যায়নি। সরকারি হিসাবে চালসহ অনেক পণ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও ক্রমাগত দাম বেড়েছে। টিসিবি চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাংস, দুধসহ ৫২টি পণ্যের নিয়মিত বাজারদরের তথ্য রাখে। এর মধ্যে আগের বছরের তুলনায় ৪০টির দাম বেড়েছে। কমেছে মাত্র ৯টির। যেসব পণ্যের দাম কমেছে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পণ্য নেই। টিসিবির তথ্যে ১১টি পণ্যের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশের বেশি, আটটির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশে বেশি আর আটটির বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। ১ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে ১৪টি পণ্যের দাম।

ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আবুল হাশেম বলেন, এ বছর তেল-চিনির দাম যে হারে বেড়েছে, তা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিই এর মূল কারণ।

টিসিবির হিসাবে বেশি দাম বেড়েছে তেজপাতা, লবঙ্গ, আমদানির পেঁয়াজ-রসুন, আদাসহ মসলাজাতীয় পণ্যের। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ৬৮ শতাংশ পর্যন্ত। করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মসলাজাতীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে দেশের ব্যবসায়ীরা চলতি বছর কয়েক দফায় ২৯ থেকে ৪০ শতাংশ দাম বাড়িয়েছেন। তৃতীয় স্থানে থাকা আটা ও ময়দার দাম বেড়েছে ২৩ থেকে ৩৭ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা মসুর ও ছোলার ডালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৫ ও ৩১ শতাংশ।

চিনি ও রডের দাম বেড়েছে ২২ থেকে ২৬ শতাংশ। দাম বাড়ার তালিকায় আরো রয়েছে গুঁড়া দুধ, ডিম, গরু ও মুরগির মাংস, চাল, মাছসহ প্রায় সব পণ্য। অন্যদিকে ৯টি পণ্যের দাম কমেছে। সবচেয়ে বেশি ৪৫ শতাংশ কমেছে আলুর দাম। গত বছর চার দফা বন্যায় আলুর বিলম্বিত আবাদ ও করোনায় অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে আলু বিতরণ—এ দুই কারণে বাজারে চাহিদা বেড়ে যায়। গত বছর আলুর দাম সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *