নিত্যপণ্য সবই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

নিত্যপণ্য সবই বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরেও বাজারে সংকট কাটছে না। আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান শুরু করা হলেও এর প্রভাব কমই দেখা যাচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, চিনির মতো অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মূল্য চড়া মাছ-মাংসের, সবজিও কিনতে হচ্ছে বেশ দাম দিয়ে। সব মিলিয়ে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাজার থেকে সুখবর নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পলাশী ও নিউমার্কেট বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে নিত্যপণ্যের দামে বড় রকমের হেরফের হয়নি। বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানের পর নিত্যপণ্যের দাম কমেনি; বরং এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম কমার বদলে বাজারে এই দুই পণ্যের সরবরাহে টানাটানি দেখা গেছে, কারণ অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে এই দুই পণ্য দোকানে তুলছেন না।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করা সম্ভব হবে। অন্যথায় বাজারে সংকট বাড়তে পারে। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় অনেক ব্যবসায়ীই বেশি মুনাফা করতে চান।
গোলাম রহমান, সভাপতি, ক্যাব

পলাশী বাজারের রাসেল স্টোরের বিক্রেতা মো. হাবিব বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। চাল ও ডালের দাম আগেই বেড়েছিল, এখনো সেই দামেই স্থির হয়ে আছে। সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলেও পাইকারিতে আমাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে। সে জন্য আমরাও সেভাবে কম রাখতে পারছি না।’

গতকাল বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দেশি পেঁয়াজের দাম রাখা হয়েছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ১৪ সেপ্টেম্বর আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা ও পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের ডজন ১৪৪ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে। কোনো কোনো বাজারে ডিম ওই দামে, আবার কোথাও ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল সম্প্রতি প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নতুন তেল এখনো সব বাজারে পৌঁছেনি। প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা পর্যন্ত।

পলাশী ও নিউমার্কেট, এই দুই বাজারেই প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম একটু বেশি, প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। মাছের মধ্যে রুইয়ের কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আর চাষের পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দাম ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে।

সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের পরেও বাজারে সংকট কাটছে না। আলু, দেশি পেঁয়াজ ও ডিম—এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার পাশাপাশি মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজারে অভিযান শুরু করা হলেও এর প্রভাব কমই দেখা যাচ্ছে।

সবজির মধ্যে এসব বাজারে বেগুন ও করলা বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। ঢ্যাঁড়স, পটোল, ধুন্দুল ও ঝিঙের মতো সবজির দাম ছিল ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে টমেটো ও গাজর প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ ১২০ টাকার আশপাশে বিক্রি হয়েছে।

নিউমার্কেট বাজারে পণ্য কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রেজওয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, সব পণ্যের দামই বেশি। দু–একটা পণ্যের দাম মাঝেমধ্যে হয়তো একটু কমে, কিন্তু যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, সেভাবে কখনোই কমে না।

বাজারে পণ্যের দামে বড় কোনো পরিবর্তন নেই। চাল ও ডালের দাম আগেই বেড়েছিল, এখনো সেই দামেই স্থির হয়ে আছে। সরকার আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিলেও পাইকারিতে আমাদের বাড়তি দামেই কিনতে হচ্ছে।
মো. হাবিব, বিক্রেতা, রাসেল স্টোর, পলাশী বাজার

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর সরবরাহ-সংকট, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের দাম বাড়ানোর কারণে পণ্যের উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পণ্যের দাম। মূল্যস্ফীতি এখন ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ১০ সেপ্টেম্বর জানায়, গত আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর করা সম্ভব হবে। অন্যথায় বাজারে সংকট বাড়তে পারে। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় অনেক ব্যবসায়ীই বেশি মুনাফা করতে চান।

সূত্র: প্রথম আলো  

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *