নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইমরান খান

নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ইমরান খান

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আগামী নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে চরম আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির চেয়ারম্যান ইমরান খান। এদিকে ইমরান খানের দলের আরেক শীর্ষ নেতা ফাওয়াদ আহমেদ হুসাইন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বছর ক্ষমতায় ফিরে আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী পাকিস্তানের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে এবং ঋণ খেলাপির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অব্যাহত ভূমিকাকে সমর্থন করবেন বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।

সাবেক এই ক্রিকেট তারকা গত বছর এক অনাস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। দেশটিতে আগামী আগস্টের পরই নির্বাচন হওয়ার কথা। তিনি আরো বলেন, তিনি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ‘মৌলিক’ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন। যেখানে এর আগে তিনি পূর্বাভাস দিয়ে বলেছিলেন, ততদিনে দেশের অর্থনীতি আরো খারাপ অবস্থায় চলে যাবে।

৭০ বছর বয়সি ইমরান খান পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোরে তার বাসভবনে সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, আমরা যদি ক্ষমতায় যাই, তবে আমাদের হাতে বেশি সময় থাকবে না। গত বছর নভেম্বরে তিনি বিক্ষোভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে ঐ বাড়িতে রয়েছেন এবং সেরে উঠছেন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সরকারকে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে বিক্ষোভের নেতৃত্বও দিচ্ছেন। তার পরিকল্পনা আইএমএফ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের হাতে এখন কোনো বিকল্প নেই। যেখানে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে বহুবার পিছিয়েছে আইএমএফ।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি কয়েক মাস ধরে বিপজ্জনকভাবে ঋণ খেলাপির কাছাকাছি চলে গেছে। ইমরান খানের উত্তরসূরি, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, তহবিলের চাহিদার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ানো এবং ট্যাক্স ইস্যুতে। গত অক্টোবর থেকে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন এক মাসের আমদানির জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নেই দেশটির। এখনো গত বছরের বিপর্যয়কর বন্যার কারণে ভুগছে পাকিস্তান। মুদ্রাস্ফীতিতে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের।

ইমরান খান বলেন, আমাদের দেশে আগে কখনো হয়নি এমন নীতি তৈরি করতে হবে। তিনি পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রতিবেশী দেশের ঋণ খেলাপির কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি।

ক্ষমতায় গেলে ইমরান খানের প্রশাসন আবারও শওকত তারিনকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় নিয়োগ দেবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তার সিদ্ধান্ত রাশিয়া থেকে ছাড়ে জ্বালানি পাওয়ার ভিত্তিতে ছিল। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যেদিন ইউক্রেন আক্রমণ করে সেদিন ইমরান খান পূর্ব নির্ধারিত সফরে মস্কোতে ছিলেন। তিন ঘণ্টার কথোপকথনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সে সময় পাকিস্তানকে জ্বালানি সরবরাহে সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছিলেন।

ইমরান খান বলেন, তিনি একটি স্বাধীন বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করবেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো কোনো একক দেশের ওপর নির্ভর করবে না। তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের উদাহরণও টেনে বলেন, যার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে কিন্তু তবুও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং চীনের সঙ্গেও ব্যবসা-বাণিজ্য করে।

ইমরান খান বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি দুর্দান্ত সম্পর্ক উপভোগ করেছিলেন তিনি। তবে তার উত্তরসূরির অধীনে সম্পর্কের অবনতি হয়। তিনি বলেন, বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর তিনি কিছু কারণে ‘অনাগ্রহ’ অনুভব করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, এটি ঘটার কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে না কাউকে দায়ী করার প্রয়োজন ছিল। এদিকে পাকিস্তানের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) আরেক শীর্ষ নেতা ফাওয়াদ আহমেদ হুসাইন চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার লাহোরে নিজ বাসভবন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার সকালে টুইটারে তার গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পিটিআই নেতা ফারুক হাবিব। ইসলামাবাদ পুলিশও ফাওয়াদ চৌধুরীকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সচিব ওমর হামিদ খানের অভিযোগে মঙ্গলবার ইসলামাবাদের কোহসার থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। ইসিপি ও এর সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর দায়ের করা হলো।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *