নির্বাচন কমিশনের সংলাপের ফল নিয়ে সংশয়

নির্বাচন কমিশনের সংলাপের ফল নিয়ে সংশয়

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পর-বিরোধী অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আজ শনিবার নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসি চূড়ান্ত সংলাপে বসতে চাইছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসির সংলাপের এই উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে, সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এ ছাড়া ইসি এমন সময়ে এই উদ্যোগ নিয়েছে, যখন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে কিংবা পালিয়ে আছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার দুই দফায় সংলাপের জন্য ৪৪টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে ইসির অমন্ত্রণপত্রই পায়নি বিএনপি। তাই দলটিকে চিঠি দেওয়ার ঘটনাকে ‘লোকদেখানো’ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা নির্বাচন ও রাজনীতিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে এবং সুপারিশ জানাতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় পাবে।

ইসির সংলাপ আয়োজন প্রসঙ্গে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, এর মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে একটা আগাম ধারণা পেতে চায় কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য কারা কতটুকু এবং কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সেই ধারণা পেতেই এই উদ্যোগ। একই সঙ্গে নিজেদের অবস্থানকেও যাচাই করতে চায় ইসি।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো। এক দফা কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ হয়। এর পর থেকে বন্ধ আছে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। দলটির মহাসচিব এবং জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাসহ সারা দেশের অসংখ্য নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। ধরপাকড় ও মামলার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অন্য নেতা-কর্মীরা।

সংলাপের চিঠি প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কিসের সংলাপ, কার জন্য সংলাপ? এটা লোকদেখানোর জন্য তামাশা হচ্ছে? দলের মহাসচিব কারাগারে, গুরুত্বপূর্ণ নেতারা ঘরছাড়া। মিথ্যা মামলা দিয়ে শারীরিক-মানসিকভাবে নাজেহাল করছেন, আর বিএনপিকে চিঠি পাঠাচ্ছেন! সরকারের নির্দেশেই সংলাপের নামে এই তামাশাগুলো করা হচ্ছে।’

বিএনপির কাছে সংলাপের চিঠি পাঠানোর সমালোচনা করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামও। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি নোটিশ, সমন না। নির্বাচন কমিশন কি বিএনপির বিরুদ্ধে সমন জারি করে দিল নাকি? হাজিরা সমন!’ তিনি বলেন, ‘সংলাপের জন্য সমন জারি করে দেয় না, দাওয়াতপত্র দিতে হয়। দাওয়াতপত্র যাকে আমরা দিলাম তার বাড়িতে কোনো লোক না থাকলে সেই চিঠিটা বিলি হয়নি বলে ফেরত চলে আসবে। এভাবে সমনের মতো করে বাড়ির দরজায় ঝুলিয়ে দিয়ে সমনকে কার্যকর করা হয়। তাহলে কি ধরে নেব যে, বিএনপিকে আসলে ডাকা হয়নি, তাদের বাধ্য করার জন্য চিঠিটি দেওয়া হয়েছিল? এটি কিন্তু অত্যন্ত বাজে একটি উদাহরণ হয়ে থাকল পরবর্তী কালের সবার জন্য।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন করতে হলে প্রয়োজন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তদারকি সরকার। তিনি বলেন, ‘এখন একটাই কাজ—কীভাবে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তদারকি সরকার গঠন করা যায়, সেটি নিয়ে আলোচনা করা। এ ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা এখন অপ্রয়োজনীয়। তাই এই আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না।’

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘যখন অনেক দলই দৌড়ে বেড়াচ্ছে, অনেকে জেলে আছেন। সমস্ত দেশেই একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, এই সময়ে তারা কী আলোচনা করবেন, এটা তো আগেই বলতে পারব না। আলোচনা করলে বোঝা যাবে, কাদের সঙ্গে আলোচনা করছে, কী বিষয়ে আলোচনা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইসির এই সংলাপ এমন সময়ে হচ্ছে যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কথা বলে গেলেন, তারপরই এই প্রোগ্রাম দেওয়া হলো। প্রোগ্রামটি আগে ছিল বলে আমি শুনিনি।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *