পাথেয় রিপোর্ট : টাঙ্গাইল-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আসন্ন জাতীয় একাদশ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
২৩ ডিসেম্বর রোববার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এসে সিইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংসদ। পরে সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, আমি আর নির্বাচন করছি না। কারণ, মাঠ নির্বাচন করার মতো সমতল নয়। মাঠ এমনই সমতল যে পুলিশের বুটের তলে পড়তে হয়। আর সন্ত্রাসীদের লাঠির আঘাত খেতে হয়। আমার অফিস ভেঙে দিয়েছে। আমার নিরীহ লোকদের প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করছে। যারা সমর্থক, তাদের পুলিশ প্রতিনিয়ত টেলিফোন করে ভয় দেখাচ্ছে। এরপর ইলেকশন করা যায় নাকি?
১৬ ডিসেম্বর কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি এলাকায় নির্বাচনী জনসংযোগে গেলে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলা করে চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ওই দিন দুপুর থেকেই তিনি এ ঘটনার বিচারের দাবিতে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনে অনশন শুরু করেন। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথম টাঙ্গাইলের হাসপাতালে ও পরে গত বুধবার ঢাকায় নেওয়া হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার লতিফ সিদ্দিকীর গাড়িবহরে হামলাকারী চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ইলেকশনটা তো বাণিজ্য নয়। আমি জীবনে অনেক ইলেকশন করেছি। ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করেছি, আজকে ২০১৮ সাল। এ রকম নির্বাচন আমার এলাকায় আমি জীবনেও দেখিনি। আমি আর শাহজাহান সিরাজ ছিলাম দুই প্রতিপক্ষ। কিন্তু আমাদের মধ্যে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছি। কিছুই চাইনি। আমি কিছু চাওয়ার লোক না। আমি বলে আসলাম, আপনি যে পরিচালনাটা করছেন, এই পরিচালনায় আপনি ব্যর্থ। এই পরিচালনায় নির্বাচন হতে পারে না। তাই আমি মাঠ ছেড়ে দাঁড়ালাম।
লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৭০, ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ থেকে ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীও হন। ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে একটি সভায় ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে আসনটি শূন্য হওয়ার পর ২০১৭ সালের জানুয়ারির উপনির্বাচনে হাসান ইমাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। হাসান ইমাম খান এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
লতিফ সিদ্দিকী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর ওপর হামলা হাসান ইমামের সমর্থকেরাই করেছে। তিনি কালিহাতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়ী করে তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি করেন। আজও লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ওসির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
এখন ওসির প্রত্যাহার চান কি না জানতে চাইলে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এখন আর কিছুই চাই না। এখন আর সময় আছে নাকি? আমি নিজেকেই মাঠ থেকে সরিয়ে নিয়েছি। কার কাছে কী চাইব? এ দেশে চাইলেই কিছু হয় না। ঘটনাক্রমে ঘটে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, এখন তো আর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তাই আমি সরে দাঁড়ালাম। আমি নিরীহ মানুষকে আহত–নিহত হওয়ার সুযোগ কেন করে দেব? যারা আহত নিহত হবে, তাদের দায় আমাকে নিতে হবে। আমি সেই দায় নেব না। আমি এত বড় বীরপুরুষ হতে চাই না। এটা স্বাধীনতাযুদ্ধ না যে মুখোমুখি লড়াই করব। যার সঙ্গে লড়াই করব, সে আমারই কর্মী কিংবা কর্মীর সন্তান। আমি কেন যাব এই ধরনের হানাহানিতে? যদি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে না পারে।