পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আজ মঙ্গলবার, ১৪২৮ বঙ্গাব্দের আষাঢ়ের প্রথম দিন। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে শুষ্কপ্রায় প্রকৃতিকে সজীবতার ভিন্ন মাত্রা দিতে প্রতিবছর ষড়ঋতুর পরিক্রমায় ঘুরে ঘুরে আসে বর্ষা ঋতু।
অবিরাম বারি বর্ষণে স্নিগ্ধ সজীব পরশ বুলিয়ে দিয়ে প্রকৃতিতে প্রশান্তি এনে দেয় বর্ষা। প্রকৃতি রক্ষার ব্রত নিয়ে আসা বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিবছরই বর্ষা উৎসবের আয়োজন করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা।
বর্ষাকালের শুরু আজ। যদিও এবার বর্ষার আমেজ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মের শেষদিকে তীব্র দাবদাহের বিপরীতে বৃষ্টিঝরা প্রহরের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে। কদম ফুটেছে আগেভাগেই। তার পরও বৃষ্টি হোক বা না হোক আজ পহেলা আষাঢ়। বর্ষা ঋতুর প্রথম দিন।
যদিও করোনার অতিমারি গতবারের মতো এবারও অন্যান্য উৎসব অনুষ্ঠানের সঙ্গে বর্ষা উৎসবকেও স্বাস্থ্যবিধির আওতায় অনেকটাই ঘরবন্দি করে রাখছে, তবু আজ অনেকেরই মনে পড়বে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘নীল অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় সম্বৃত অম্বর হে গম্ভীর! বনলক্ষ্মীর কম্পিত কায়, চঞ্চল অন্তর’। অথবা ‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে।’
আষাঢ়-শ্রাবণের বহুমাত্রিক রূপবৈচিত্র্য বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। রচিত হয়েছে অজস্র গান আর কবিতা। আবার অতি বর্ষা ক্ষতিকরও। বন্যার শঙ্কা থাকে সব সময়ই। তাই প্রার্থনা, পরিমিত বৃষ্টি হোক। করোনার অতিমারির সংকটের মধ্যে অতিবৃষ্টি কারো কাম্য নয়।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে সর্বশেষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দে আষাঢ়ের প্রথম দিনে আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় শারীরিক উপস্থিতির প্রকাশ্য বর্ষা উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। ওই উৎসবে বর্ষা ঋতুর ওপর দেশের অগ্রগণ্য দলগুলো ও বরেণ্য শিল্পীরা বর্ষা কথন পর্ব, আদিবাসীদের পরিবেশনা, যন্ত্রসংগীত, শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা, দলীয় আবৃত্তি, দলীয় সংগীত ও দলীয় নৃত্য, একক আবৃত্তি, একক সংগীতে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ৭টায় বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগর সংসদ আয়োজনে ছিল বর্ষা উৎসব। এবার গত বছরের মতো করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শারীরিক উপস্থিতির প্রকাশ্য তেমন অনুষ্ঠান নেই। বর্ষাকে স্বাগত জানাতে এবারও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেই বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। কেউ বা অনুমতি না পেয়ে মূল অনুষ্ঠানস্থল থেকে দূরে কোথাও এর আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এবার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের ফেসবুক পেজে সংগঠনটির বর্ষা উৎসব সম্প্রচারিত হবে।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদ করোনার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজনের অনুমতি না পাওয়ায় আজ সকালে গেণ্ডারিয়ার ১৭/১, দীননাথ সেন রোডস্থ (গেণ্ডারিয়া মহিলা সমিতি স্কুলের পাশে) ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন পাঠাগার সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে এ উৎসবের আয়োজন করেছে।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট গতরাতে জানান, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় প্রবীণ হাওয়াইন গিটার শিল্পী হাসানুর রহমান বাচ্চুর গিটারে বর্ষার সংগীত বাদনের মধ্য দিয়ে এ উৎসবের শুভ সূচনা হবে। বর্ষাকথন পর্বে অংশগ্রহণ করবেন অত্র এলাকার সমাজসেবক এবং ক্রীড়াব্যক্তিত্ব মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও তিনি নিজে। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করবেন শিল্পী মহাদেব ঘোষ (রবীন্দ্রসংগীত), কানন বালা সরকার (লোকসংগীত), প্রিয়াংকা গোপ (নজরুলসংগীত), অনিমা রায় (রবীন্দ্রসংগীত), বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি (নজরুলসংগীত), টিটু আলী (আধুনিক সংগীত), শ্রাবণী গুহ রায় (আধুনিক সংগীত) ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী (নজরুলসংগীত)। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবে বাফা, ওয়াইজঘাট ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন বাফা ও স্পন্দন। একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলি ও আহসান উল্লাহ তমাল।