নুরানী আবহে ভরে যায় ময়দান

নুরানী আবহে ভরে যায় ময়দান

  • আমিনুল ইসলাম কাসেমী

আহ, কী বলবো প্রাণ ছুঁয়ে যাওয়া তাড়াইলের বেলংকার ইসলাহী ইজতেমার কথা। মনমুগ্ধকর গ্রামীণ পরিবেশ। গাছে গাছে পাখির কলরব। আম্র কাননে নতুন মকুলের সুঘ্রাণ। মাঝে মাঝে হাওড় থেকে উঠে আসে হিমেল হাওয়া। নিকোষ কালো আঁধার চিরে বেলংকার জামিয়াতুল ইসলাহ ময়দান যেন নুরানী আবহে ভরে যায়।

কী যে মায়া-মমতা সেখানে। অচেনা-অপরিচিত জায়গা। কিন্তু সেখানকার আয়েজকদের প্রাণখোলা আতিথেয়তা এবং ভালবাসা মন কেড়ে নেয়। মনে হয় বারবার ছুটে যাই সেখানে। আত্মশুদ্ধির মিলনমেলা। খোদাপ্রেমিকদের যেন তীর্থস্থান।

ফেদায়ে মিল্লাতের খলীফা, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাতবারাকাতুহুম। তাঁর জন্মভূমি বেলংকা। সেখানে এখন বিশাল জামেয়া। দৃষ্টিনন্দন জামেয়ার ভবন। সে জায়গাতে প্রতিবছর ইসলাহী ইজতেমা বসে। আল্লামা মাসঊদ সাহেবের মুতাআল্লেক-মুহিব্বিন হাজির হয় দুর-দুরান্ত থেকে। সেই সাথে হাজারো আলেম এবং লাখো আমজনতা। এ যেন আত্মশুদ্ধির পীঠস্থান। বড় আবেগ উচ্ছাসের অবগাহন। প্রেম-ভালোবাসার ঝর্ণাধারায় হাজির হয় সবে।

বেলংকার ইসলাহী ইজতেমা মনে রাখার মতো। সেটা এমন এক পরিবেশ। এ যেন আশেকানদের মহামিলন। যেখানে নেই দাম্ভিকতা। নেই কোনো লৌকিকতা। নেই অহমিকা। যেন নুরানী মঞ্জিল। তায়াল্লুক মায়াল্লাহর ফিকির নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সবাই। হম্বি-তম্বি কোনো ওয়ায়েজ সেখানে নেই। মনগড়া কেচ্ছা-কাহিনীর বর্ণনা সেখানে হয় না। নির্ভরযোগ্য আলেমগণ সেখানে বয়ান করে থাকেন।

আত্মশুদ্ধির মারকাজ বেলংকার জামিয়াতুল ইসলাহ ময়দান। নামের মধ্যেই যেন আছর আছে। ইসলাহ তথা সংশোধনের ময়দান হলো বেলংকা। আসলেই সেখানে ইসলাহ বা সংশোধনের বড় সুবর্ণ সুযোগ।দলভারি বা মতাদর্শের লোকদের সংখ্যা ভারি করা নয়। কোনো শোডাউন সেখানে নয়। নিছক মহান রবের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার প্রচেষ্টা। সেখানে শায়েখের প্রশংসা নেই। কেউ মঞ্চে উঠে শায়েখের ছিফাত বা কারামাতি জাহির করার চেষ্টা করে না।

অনেকের মধ্যে প্রশ্ন জাগে কেন যাই বেলংকা? অনেকে নানান প্রশ্নবানে আমাকে জর্জরিত করেন। কেউ মুখ টিপে হাসে। নতুন প্রজন্মের বহু আলেমের কাছে বহু জবাবদিহী করতে হয়। কেউ দূর থেকে আমাকে এবং আমার শায়েখকে নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলে থাকেন। আসলে দুর থেকে অনেক কিছু মনে হয়। অনেক প্রশ্ন জেগে উঠতে পারে। বিশেষ করে এই একাবিংশ শতাব্দীতে যাদের জন্ম। বা যারা দেওবন্দী হালকার মধ্যে ভিন্ন চিন্তা-চেতনার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন, তাদের কাছে তো অনেক ইশকালাত জমা হয়ে আছে।

আসলে অনলাইনে তো সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না। তবে মনে রাখতে হবে, শাইখুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দামাতবারকাতুহুম তিনি ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়্যেদ আসআদ মাদানী এর খলিফা। আর ফেদায়ে মিল্লাত সরাসরি তাঁর পিতা কুতবুল আলম শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী থেকে খেলাফত-ইযাজাত প্রাপ্ত। সেই সাথে শাইখুল হাদীস জাকারিয়া (রহ.) থেকেও ইজাযত গ্রহণ করেছিলেন। সেই মহান ফেদায়ে মিল্লাতের খলিফা হলেন আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। সুতরাং যেনতেন ব্যক্তি তিনি নন।

মানুষের তো এমন জায়গা যাওয়া দরকার যেখানে ইসলাহ বা সংশোধন হওয়া যায়। তাড়াইলের বেলংকা তো এমন এক পরিবেশ যেখানে নিছক আল্লাহর জন্য এক মহামিলন। লাখো মানুষ এবং হাজারো উলামায়ে কেরাম যেখানে আত্মার পরিশুদ্ধতার সংগ্রাম করে থাকেন। কাউকে খুশি করা নয়। দুনিয়াবী কোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। প্রভুরপ্রেমে ডুবে যাওয়ার মানসে বেলংকার জামিয়াতুল ইসলাহতে সবাই জমবেত হয়। এমন মোবারক জায়গাতে তো যাওয়া সকলের জরুরী।

সবচেয়ে বড় কথা, আল্লামা মাসঊদ সাহেবের কাছে যাওয়া দরকার। সেখানে গেলে দূর হবে সব ইশকালাত। মনের প্রশ্ন। নিরসন হবে সকল ব্যাথাবেদনা। তাই আসুন, তাড়াইলের ইজতেমাতে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কবুল করুন। আমিন।

  • লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *