নূর নবীজীর দেশে || পর্ব-৬

নূর নবীজীর দেশে || পর্ব-৬

  • মুহাম্মাদ আইয়ুব

মাকামে ইবরাহিমের পিছনে দু’রাকাআত নামাজ শেষ হলো, দোয়া শেষ হলো কিন্তু বহুল আকাঙ্ক্ষিত জমজমের পানি পান করে এখনো প্রাণ শীতল করতে পারিনি। পুলিশের ব্যরিকেড পড়ে গেছে। যোহরের নামাজের সময় হয়ে গেছে।

পৃথিবীর কোন কলমের শক্তি নেই কা’বা শরীফকে সামনে রেখে নামাজ আদায়ের অনুভূতি কাগজে ফুটিয়ে তোলে।

আলহামদুলিল্লাহ, কা’বা শরীফকে সামনে রেখে জীবনের প্রথম ফরজ নামাজ আদায় করছি। এর অনুভূতিটা কেমন হতে পারে বুঝতে হলে এই আঙিনায় আসতে হবে। পৃথিবীর কোন কলমের শক্তি নেই কা’বা শরীফকে সামনে রেখে নামাজ আদায়ের অনুভূতি কাগজে ফুটিয়ে তোলে।

সুন্নতে দাঁড়িয়ে গেলাম কিন্তু নামাজের মনোযোগে কিছুটা ভাটা পড়ল।
সাধারণত নামাজের সামনে দিয়ে যাতায়াত কঠোরভাবে নিষেধ। কিন্তু এখানে পুরোপুরি ব্যতিক্রম। দেদারসে সবাই নামাজির সামনে দিয়ে যাচ্ছে।
দুরুদুরু বুকে ভাবছি, হাজ্বী সাহেবানদের পায়ের স্পর্শ মাথায় লাগলে ধন্য হয়ে যাবো। কিন্তু তেমন সৌভাগ্য এ যাত্রায় হলো না।

সেজদার জায়গায় চোখ আটকে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার চোখ চলে আচ্ছে মহান আল্লাহ’র মহা সম্মানিত ঘরের দিকে।

এই সেই ঘর, পৃথিবীর শুরু লগ্ন হতেই জন্ম অস্তিত্ব যার। আজ অবধি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সর্বোচ্চ সৌন্দর্য নিয়ে।
নির্মাণ করেছেন হযরত ইবরাহীম ও তাঁর পুত্র ইসমাইল। আ.। কিন্তু এর শ্রীবৃদ্ধি শেষ হল কোথায়?

আজও চলছে হেরেম শরিফের সীমানা বর্ধন, সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। চলতে থাকবে কতকাল কতযুগ তা বা ক’জনের জানা?

ইকামাত শুরু হয়েছে। সবকিছু মনে হচ্ছে নতুন শুনছি।এই ইকামাত ও নতুন লাগছে। দরাজ কন্ঠের সুমধুর সুর।
চারিদিক থেকে হেরেম শরিফের সাউন্ড মনে হয় আমার অপবিত্র কানকে পবিত্র করার আয়োজন চলছে। সাউন্ড সিস্টেমটা খুবই উন্নতমানের।

কা’বা শরীফকে সামনে রেখে জীবনের প্রথম নামাজ। সাদা কাপড়ের জান্নাতি রঙে নিজেকে আবিষ্কার করতে পেরে আশা জাগছে মহন রবের দিদার পাওয়ার। যিনি তাঁর ঘরে এনেছেন তিনি সাক্ষাৎ দিবেন না এমন চিন্তা করা তো নিরেট বোকামি।

আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে তাকেই স্মরণ করা হচ্ছে মূল কাজ, কিন্তু এখনও ঈমানী পরীক্ষায় পোক্ত হতে না পারলেও যিনি আল্লাহর দেয়া সব পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে আগুনে বসে জান্নাতি নেয়ামত উপভোগ করেছেন তাঁর হাতে গড়া ঘর দেখছি।

হয়তো এই উসিলায় ঈমান রাঙবে সতেজ সুন্দর খাটি রঙে।

আহ !কা’বা শরীফে আদায় করা প্রথম নামাজের কেরাত যদি সরাসরি ইমাম সাহেবের জবানে শুনতে পারতাম!

আমি তো এখানে কুরআনের স্বাদ ও নিতে এসেছি। শুনেছি হারামাইন শরিফাইনের কুরআন তেলাওয়াতের মাধুর্যতা কল্পনাকে ও হার মানায়।
কেন হবে না শুনি! কুরআন যে এই পবিত্র আঙিনায়, এই সম্মানিত নগরীতে অবতীর্ণ হয়েছে সর্বোচ্চ মাধুর্যতা আর বিশুদ্ধতা নিয়ে!

যোহরের নামাজে ইমাম সাহেব কেরাত আস্তে পড়ছেন তবে কল্পনায় আমাকে স্বান্তনা দিয়ে গিয়েছেন যে, আর এক ওয়াক্ত পরেই মাগরিবের নামাজ।
তখন কান খুলে হৃদয়কে শান্ত করে শুনবে পরিশুদ্ধ নগরীর শ্রুতিমধুর আল কুরআনুল কারিমের কেরাত।

জমজমের পানি পান করার মাহেন্দ্রক্ষণ চলে এলো। আলী মিয়া নদভীর রহ. “কাসাসুন নাবিয়্যিন” এ কি চমৎকার ভাষায় পড়ছিলাম ‘বি’রু যমযম”

আর আজ আল্লাহ এই পাপি অধমকে কান ধরে নিয়ে এসেছেন। পবিত্র কূপের পাড়ে, কিন্তু আজ আর এখানে কুপের নাম গন্ধ নেই, দেয়ালের সাথে অত্যাধুনিক ট্যাব লাগানো। হাতের আলতো ছোয়াঁয় বের করলাম হযরত যবিহুল্লাহর পদাঘাত আর প্রিয় নবীজীর সা. মোবারক থুথু মিশ্রিত যমযম আর ঢকঢক গিললাম।

কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে তার সৌন্দর্য দেখছি আর আল্লাহর কুদরতি শূতল পানি পান করছি।

আইয়ুব পান করো! যত মন চায় পান করো আজ। আকণ্ঠ পান করে নাও।
আজ আর কেউ বলবে না পানি মিশিয়ে খাও। আরও এক ঢোক খাও, আরো অনেকে বাকি। এক গ্লাস দুই গ্লাস তিন গ্লাস চার গ্লাস। মন চায় আরো পান করি আরো আরো। আশ্চর্য! কি শীতল পানি।ৎ

বুকের বাম পাশ ধুয়ে নিলাম। কারণ, হৃদয়টা এখানেই। কতবার বিপদে ফেলছে নফসে আম্মারা। তাই জমজম হতে পারে তাকে নিষ্কলুষ করার সর্বোত্তম ঔষধ।

পাঁচ নম্বর গ্লাসটি নিয়ে মাথায় ছিটালাম। খুশকির যন্ত্রণায় অস্থির অনেক বছর ধরে, দেশ থেকে এই বিশ্বাস বহন করে নিয়ে এসেছি। জমজমের পানি সর্বোত্তম সমাধান।

বুকের বাম পাশ ধুয়ে নিলাম। কারণ, হৃদয়টা এখানেই। কতবার বিপদে ফেলছে নফসে আম্মারা। তাই জমজম হতে পারে তাকে নিষ্কলুষ করার সর্বোত্তম ঔষধ।

চোখ দুটো ধুয়ে নিলাম এই সুযোগে।
চোখের অপরাধ ও কম হয়নি।
পানি ব্যবহারের সবগুলো প্রক্রিয়া হয়েছে আল্লাহ পাকের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।

বাংলাদেশ থেকে বয়ে আনা সবগুলো দুআ করেছি এই পাঁচ গ্লাস পানির মাঝে।
প্রবল বিশ্বাস আর ভরসা ছিল দোআর প্রতিটি বাক্যে, শব্দের পরতে পরতে।

আচ্ছা! এমন কোন গ্যারান্টি যদি থাকতো যে, যারা যমযম পান করবে তাদের কপালেও হাউজে কাউসার থেকে আবে কাউসার জুটবে তাহলে এই হতভাগার জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকতো না৷

এত চিন্তা কেন? আল্লাহ পাক দয়ার সাগর। তাঁর নবীকে ও বানিয়েছেন রহমতের সাগর। যে মুখ শীতল হয়েছে আবে যমযমে তা সুমিষ্ট হবে আবে কাউসারের স্বাদে ইনশাআল্লাহ।

ক্রমশ…

লেখক, শিক্ষক ও মাদরাসা পরিচালক

Related Articles