পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : টানা শৈত্যপ্রবাহের শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের মানুষ। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে কুয়াশার আবরণে ঢাকা রয়েছে সূর্য। সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকালের চেয়ে সামান্য তাপমাত্রা বাড়লেও অব্যাহত রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের শীতের দাপট। সকাল থেকে ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমেল হাওয়ায় বাড়ছে শীতের তীব্রতা। টানা শৈত্যপ্রবাহের শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে এ সীমান্ত জনপদের সাধারণ মানুষ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মঙ্গলবার গতকাল রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা বাড়লেও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীত অনুভূত হচ্ছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
বিভিন্নস্থান ঘুরে দেখা যায়, হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে শীত। প্রয়োজনে অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও শীত দুর্ভোগে নানান শ্রমজীবী-কর্মজীবী গরীব অসহায় মানুষ। চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক, ভ্যান চালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহনের চালকরা পড়েছেন বিপাকে। পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বেড়িয়ে পড়েছেন দিনমজুর, পাথর ও চা শ্রমিক, ভ্যান চালকসহ নিম্ন আয়ের মানুষগুলো।
জীবিকার তাগিদেই তারা কেউ নদীতে পাথর তুলতে, কেউ চা-বাগানে, কেউ পাথর ভাংতে আবার গেরস্থের বাড়িতে দিন হাজিরার কাজে যেতে দেখা গেছে। শীতের কারণে তাদের আয়-রোজগার কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে তাদের এই স্বল্প উপার্জনে চলছে না সংসার। অভাব-দারিদ্রতা ভর করায় আমিষ খাবারও জুটছে না অনেকের।
চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক ও দিনমজুর মানুষগুলো জানান, প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে তারা ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। কাজ না করলে জীবনও চলছে না। তাই তারা শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেড়িয়েছেন। দিনশেষে কাজ করে যা মজুরি আসছে তা দিয়ে কোনোভাবে তুলে দিচ্ছেন পরিবারের মুখের আহার।
শীতের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও। স্কুল শিক্ষার্থীরা জানায়, শীতের কারণে তাদের পড়ালেখা করতে কষ্ট হচ্ছে। পড়ার টেবিল প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে বরফ হয়ে উঠে। ভোরে কুয়াশা আর কনকনে শীতে পড়তে-লিখতে হাতপা অবশ হয়ে আসে। স্কুল-কলেজে যেতে কষ্ট হচ্ছে।
শীত প্রকোপে বেড়েছে নানান শীতজনিত রোগ। ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। জেলা সদর ও উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় গতকালের তুলনায় সামান্য তাপমাত্রা বেড়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকাল রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে। জেলার ওপর দিয়ে এখন মৃদু শৈত্যপ্রাবাহ হচ্ছে।