নিজস্ব প্রতিবেদক ●নিষিদ্ধ পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বন্ধ ও পণ্যে পাটের মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে ১৫ মে থেকে সপ্তাহজুড়ে সারা দেশে দ্বিতীয় দফায় বিশেষ অভিযান চালাবে সরকার। ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ সুষ্ঠু বাস্তবায়ন, পর্যালোচনা ও ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে রোববার সচিবালয়ে এক সভায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এই তথ্য জানান।
নির্ধারিত ১৭টি পণ্যে পাটের মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আগামী ১৫ মে থেকে সপ্তাহব্যাপী সারা দেশে দ্বিতীয় দফায় বিশেষ অভিযান চালাবে সরকার। তিনি বলেন, ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনিসহ সরকার নির্ধারিত বিভিন্ন পণ্য সংরক্ষণ ও পরিবহনে প্লাস্টিকের বস্তার ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এগুলো মনিটরিংয়ে আগামী ১৫ মে থেকে সারা দেশে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযান শুরু হবে।
ধান, চাল, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি সংরক্ষণ ও পরিবহনে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর আদেশ জারি করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এরপর গত জানুয়ারিতে দুই দফায় আদেশ দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডাল, আলু, আটা, ময়দা, মরিচ, হলুদ, ধনিয়া এবং তুষ-খুদ-কুড়াসহ ১৭টি পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়।
‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন’ অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত পণ্যে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের মোড়ক ব্যবহার না করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদ- বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- হবে। একই অপরাধ আবার করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ দ-ের দ্বিগুণ। দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালাতে সব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মির্জা আজম। তিনি বলেন, এই আইন বাস্তবায়নে সড়কপথ, জলপথ, স্থলবন্দর, মালামাল পরিবহনকারী যানবাহন, উৎপাদনকারী, প্যাকেটজাতকারী এবং আমদানী ও রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। স্বরাষ্ট্র, পরিবেশ ও বন, সড়ক পরিবহন ও সেতু, নৌ, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও র্যাবের সহায়তায় এই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালিত হবে বলেও জানান মির্জা আজম। পাটের অতীত গৌরবের কথা তুলে ধরে পাট প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আগ্রহেই আবারো আমরা সোনালি আঁশের সুদিন এবং এর বহুমুখী ব্যবহার ফিরিয়ে আনব, যাতে জনগণ পাট উৎপাদনে আগ্রহী হয়। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে দেশে প্রতি বছর ১০০ কোটি পাটের বস্তার চাহিদা সৃষ্টি হবে। স্থানীয় বাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়বে এবং পাট চাষীরা পাটের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অভিযানে এক হাজার ৬০৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে একা কোটি ৫১ লাখ টাকা অর্থদ- এবং ২ জনকে কারাদ- দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জুলাই থেকে গত মার্চ মাস পর্যন্ত আরও ৮৪৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭৬ লাখ ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে বলে সভায় জানানো হয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোছলেহ উদ্দিন, বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. মাহমুদুল হাসান ,বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওর্নাস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ট্রাক এজেন্সি সমিতি, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, লঞ্চ মালিক সমিতির প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।