পদ্মা রেল প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন চলতি বছরেই

পদ্মা রেল প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন চলতি বছরেই

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুতে সড়ক ও রেল একই সঙ্গে চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু সড়ক অংশ চালু হলেও উদ্বোধন হয়নি রেল চলাচলের।

ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ পাচ্ছে না পদ্মা সেতুর পূর্ণ সুফল। তবে এ আক্ষেপ এ বছরেরই দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ণ হতে চলছে। চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের প্রচরণায় প্রভাব ফেলতে ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভোট নিজেদের দিকে টানতে তার আগেই আংশিক উদ্বোধন হবে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প।

যদিও যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল সংযোগ নিরবিচ্ছিন্ন ও দ্রুতগামী করতে ঢাকা-যশোর ১৬৯ কিলোমিটারের এই রেললাইন নির্মিত হচ্ছে।

এই পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। দ্রুত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ রুটটি চারটি অংশে ভাগ হয়ে কাজ চলছে।

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গেন্ডারিয়া স্টেশন পর্যন্ত পুরাতন লাইন বদলে ফেলে নির্মাণ করা হচ্ছে ডাবল লাইনের তিন কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ।

এ কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার জন্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল চলাচল বন্ধ করে তিনমাসের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশে রাজধানীর গেন্ডারিয়া স্টেশন থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এ অংশে নির্মিত হচ্ছে ৪টি স্টেশন।

তৃতীয় অংশে কাজ চলছে মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৪২ কিলোমিটার। এ অংশে ব্রডগেজ রেলপথ এবং ৫টি স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে।

সর্বশেষ অর্থাৎ চতুর্থ অংশে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। এ রুটে নির্মিত হচ্ছে নতুন করে ১০টি স্টেশন।

এ বিষয়ে পদ্মা সেতু রেল লিঙ্কের প্রকল্প পরিচালক আফসাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশের রেল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। এই পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ।

২০২৩ সালেই পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে ট্রেন: পদ্মা রেল সংযোগের পুরো প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই উদ্বোধন করা হবে পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল।

নির্ধারিত সময়ের আগেই পদ্মা রেল সেতু অংশের কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়ে কাজ এগোচ্ছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যেই পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আফসাল হোসেন।

এদিকে পদ্মা সেতুর অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৩ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। রেলপথের কংক্রিটের স্লিপার বসানোর বাকি কাজও দ্রুতগতিতে বসানোর কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা উভয় প্রান্তেই দ্রুত কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রকল্পের দেশি-বিদেশি কর্মীরা।

মূল সেতুতে রেললাইন স্থাপনে কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। আগামী জুনে সেতুতে পুরো রেললাইন স্থাপনের টার্গেট রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আশা, নির্ধারিত সময়ের আগেই রেললাইন স্থাপন কাজ শেষ হবে।

কাজের অগ্রগতির বিষয়ে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহমেদ বলেন, যেভাবে কাজ করা হচ্ছে শত বছরেরও বেশি সময়ের স্থায়ীত্ব হবে। পাথরবিহীন এ রেললাইন তৈরির কাজে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপন করা হবে। এর জন্য চারটি দলে ভাগ হয়ে ২০০ কর্মী নিরলসভাবে কাজ করছেন।

অন্যদিকে প্রকল্প পরিচালক আফসাল হোসেন বলেন, এই বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তবে এই রুট দিয়ে কোন কোন ট্রেন চলবে সেটা এখনও ঠিক করা হয়নি।

এর আগে গত ১ নভেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর আগের স্টেশন জাজিরা পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার রেলপথে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চলানো হয়েছে।

সে সময় ভাঙ্গা স্টেশন ম্যানেজার মো. শাহজাহান জানিয়েছিলেন, এই ৩১ কিলোমিটার রেলপথের চার কিলোমিটার পাথরবিহীন এবং ২৭ কিলোমিটার পাথরসহ রেল লাইন। এর মাধ্যমে নতুন এই রেললাইনের সঙ্গে ভাঙ্গার পুরোনো রেললাইন যুক্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন বসানো এবং স্টেশন ও অন্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া রেলপথ ব্যবহার করতে পারবে ফরিদপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষ। ফলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল হবে ঢাকার সঙ্গে।

সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *