পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে মঙ্গলবার

পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে মঙ্গলবার

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : আরেক স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা-মাওয়া পরীক্ষামূলক রেল চলবে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল)। এছাড়া ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত সরাসরি যাত্রীরেল চলবে সেপ্টেম্বরে। ঢাকা-যশোর রেলপথে ট্রেন চলবে আগামী বছর। পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কের খবরে উচ্ছ্বাসিত নদীর দুই পাড়ের মানুষ। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই প্রকল্প ঘিরে বিরাজ করছে বিশেষ আমেজ।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা পুরনো রেল স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলক ট্র্যাককারটি রওনা হওয়ার কথা রয়েছে মঙ্গলবার বেলা ১২টায়। এটি পদ্মা সেতু অতিক্রিম করে দুপুর ২টায় মাওয়া স্টেশনে পৌঁছাবে। এই ট্রেনে থাকবেন রেলমন্ত্রী নরুল ইসলাম সুমন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনই প্রথমবারের মতো সেতু অতিক্রম করবে।

এর আগে গত ২৯ মার্চ সেতুর ২৫ নম্বর খুঁটির কাছে বাকি থাকা ৭ মিটার রেলপথ নির্মাণ শেষ হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর ট্র্যাক মহড়া হিসাবে সেতুতে রেল চলাচল করেছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নতুন ব্রডগেজ রেলপথে ট্র্যাক কারে জুরাইনে যাবেন রেলমন্ত্রী। নবনির্মিত বুড়িগঙ্গা রেলসেতু এবং ধলেশ্বরী রেলসেতু পরিদর্শন করবেন তিনি। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। আর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। পুরো প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ। যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ লেভেল ক্রসিংবিহীন রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন নির্মাণ। আর সেই রেলপথ সুচারুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় দেশের আধুনিক রেল নেটওয়ার্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ আহম্মেদ বলেন, গ্যাংকার দিয়ে ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত সাড়ে ৪১ কিলোমিটার রেলপথ পরীক্ষা করে দেখবো। এ পথে ডিজাইন-স্পিড ১২০ কিলোমিটার থাকলেও ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে পরীক্ষামূলক টেস্ট-রান চালানো হবে। পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু হলে আরও ১ শতাংশ জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। ট্রান্স এশিয়া রেলপথের সঙ্গে এ লাইনটি যুক্ত হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (সিআরইসি)। পুরো প্রকল্প তদারকি করছে সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ফাস্ট র্ট্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে রেল যোগাযোগব্যবস্থায় দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা এবং পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার নতুন এলাকাজুড়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-খুলনার মধ্যে ২১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট এবং উন্নত পরিচালন সুবিধার বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হবে।

এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি সাব-রুট স্থাপন এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে গতি ও লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে যশোর পযন্ত রেলপথ নির্মাণের অনুমোদন দেয়।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাংকার ট্রেনটি ভাঙ্গা থেকে রওনা হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে মাওয়া আসবে। ট্রেনটি মূলত নির্মিত রেলপথটি ইন্সপেকশনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এই ট্রেনে ভ্রমণ করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন নির্মিত রেলপথসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ পরিদর্শন করবেন। পুরোপুরি চালু হওয়ার আগে এ রেলপথ দিয়ে আমরা প্রকল্পের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করবো।

তিনি জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। অন্যদিকে প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের জুনে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে প্রাক্কলনটি তৈরি করেছে সিআরইসি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *