পদ্মা সেতুর সাফল্য ছোঁয়ায় রঙিন হোক বাংলাদেশ

পদ্মা সেতুর সাফল্য ছোঁয়ায় রঙিন হোক বাংলাদেশ

স্বপ্ন লেগেছে জোড়া

পদ্মা সেতুর সাফল্য ছোঁয়ায় রঙিন হোক বাংলাদেশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এত বড় স্বপ্ন কীভাবে দেখা যায়, তা-ই বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সাহসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য এরচেয়ে বড় অবদান আর কী হতে পারে? অসম্ভব বিস্ময়কর সাফল্যচূড়ায় অধিষ্ঠিত এখন বাংলাদেশ। অবহেলিত জনপদ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক দিন ছিলো। পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি বসেছে। দেশের জন্য এক গৌরবের দিন এটি। অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এই সেতুর মাধ্যমে পদ্মার দুই পারকে সংযুক্ত করতে পেরেছি। প্রমত্তা পদ্মার বুকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দৃশ্যমান হলো প্রায় সোয়া ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি। সেতুর স্টিলের অবকাঠামো পদ্মার দুই পারের মানুষের মনে স্বপ্নের মেলবন্ধ ঘটিয়েছে। আনন্দের হিল্লোল বইছে মানুষের মনে। একই সঙ্গে সমৃদ্ধ দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্নও বাস্তবের বড় কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন সেতুর এই অবকাঠামোর ওপর বসবে সড়ক স্ল্যাব, আর নিচে বসবে রেলওয়ে স্ল্যাব। এ কাজগুলোও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সড়কের ওপর পিচ হবে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ হবে। অপটিক্যাল ফাইবারের সংযোগ হবে। ইলেকট্রিক ট্রেনের অবকাঠামো হবে। সব মিলিয়ে এক বিশাল আয়োজন। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের বিজয় দিবসের আগেই সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়, তারপরও দেখতে দেখতে চলে যাবে এ কটা দিন।

ষড়যন্ত্র না হলে পদ্মা সেতু অনেক আগেই সম্পন্ন হতো, এত দিনে সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করত। সেতুর ২৯০ কোটি ডলারের প্রথম বাজেটের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছিল; কিন্তু ২০১২ সালে হঠাৎ করেই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রকল্প থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। যাওয়ার আগে বিশ্বব্যাংক ও তাদের স্থানীয় অনুসারীরা গণমাধ্যমে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে এক বিশাল ধূম্রজালের সৃষ্টি করেছিল। তারা শর্তের পর শর্ত দিয়ে যাচ্ছিল। একজন মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে, একজন সচিব ও একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে জেলে নিয়েও তাদের শর্ত পূরণ করা যায়নি। তাদের অভিযোগ ছিল, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ পেতে কানাডার একটি কম্পানি ঘুষ দিতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ব্যাপারে দুই দফা তদন্ত করেও অভিযোগের সত্যতা পায়নি। পূর্বোক্তরা তখন দুদককেও এক হাত নিয়েছিল। বিষয়টি কানাডার আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। আদালত অনেক বিচার-বিবেচনার পর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে নিছকই অনুমান ও গুজব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এভাবে কেটে যায় প্রায় দুটি বছর।

অবশেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই সাহসী ঘোষণা আসে। তিনি জানিয়ে দেন যে কারো অর্থে নয়, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থেই আমরা পদ্মা সেতু করব। তাতেও থেমে যাননি ফরমায়েশি অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলতে থাকেন, নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু বানাতে গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। দেশ মহাসংকটে পড়বে। কিছুই হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েক গুণ বেড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।

শুধু পদ্মা সেতু নয়, বর্তমান সরকারের গৃহীত আরো কিছু পদক্ষেপ দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। তার মধ্যে রয়েছে পায়রা সমুদ্রবন্দর, পটুয়াখালীতে বিদ্যুৎ হাব, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আরো কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনা। পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনেরও পরিকল্পনা হচ্ছে। তার পরও প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুত উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন অবশ্যই দ্রুততর হবে এবং তা দেশের উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করবে বলে আমরা আশাবাদি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *