পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি

পবিত্র রমজানের প্রস্তুতি

  • মাওলানা আবু আইমান

রমজানে একেবারে ছুই ছুই! জীবনের যে কোনো বিষয়ে সফলতা আনতে লক্ষ্য স্থির করাটা জরুরি। কারণ সেই অনুপাতে পরিকল্পনা-প্রস্তুতি লক্ষ্য পূরনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। চিন্তা করুন, কত রমজান এসেছে , আবার চলে ও গেছে। অনেক কিছুই করতে চেয়েছিলেন, বাস্তবে কিছুই করা হয়ে ওঠেনি। কেন? উত্তর একটাই, যেন-তেন পরিকল্পনা।

তাওফিক তো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়, তবুও শক্ত পরিকল্পনা আর প্রস্তুতি এক্ষেত্রে বড় ভুমিকা রাখে। রমজানের প্রস্তুতি আমাদের একেকজনের কাছে একেক রকম। যেমন ধরুন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরিকল্পনা ইফতার পার্টির নামে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করা। অনেক ব্যবসায়ীদের কাছে রমজানের প্রস্তুতি মানে হচ্ছে পন্যকে মজুদ করে রেখে মূল্য বৃদ্ধি করা। অনেকের ইফতার আর সেহরির নামে খাদ্য-বিলাস। যদি ও এসব কোনোটাই রমজানের প্রস্তুতি নয়।

আমরা দেখি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফল-সবজির মৌসুম আসে। গ্রীষ্মের সময় আম জাম কাঁঠাল লিচু না খেতে পারলে কষ্ট লাগে। আবার শীতকালে এলে বিভিন্ন শীতকালীন তরকারি খেতে না পারলেও আফসোস হয়। সেই আফসোস মেটাতে সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী কম করে হলেও নিজেদের ইচ্ছেটুকু পূরণ করেন। রমজানে তেমনি এবাদতের একটি মৌসুম। ইবাদাতের এই মৌসুমে নিজেকে ইবাদতের জন্য পূর্ব-প্রস্তুতি না রাখলেও আফসোস করতে হবে। তাই আসুন রমজানকে সামনে রেখে একটি শক্ত পরিকল্পনা দিয়ে একটি সফল রমজান কাটাই।

রমজানে প্রতিযোগিতা করি ইবাদাতের। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই এই প্রতিযোগিতার নির্দেশ দিয়েছেন, ‘প্রতিযোগিতাকারীদের উচিৎ এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।’ (সুরা মুতফফীন-২৬) অন্য আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘এমন সাফল্যের জন্য পরিশ্রমীদের পরিশ্রম করা উচিত।’ (সূরা সাফফাত-৬১)

রমজানের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হচ্ছে দোয়া করা। হজরত মুয়াল্লা ইবনে ফজল রাহমাতু্ল্লাহি আলাইহি নামে এক বিখ্যাত তাবেয়ি বলেন, ‘সালাফে সালেহিনগণ রমজানের ৬ মাস আগে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত হায়াত দান করেন। আর রমজান শেষে তারা বাকি ৬ মাস দোয়া করতেন- হে আল্লাহ! রমজানে যা আমল করেছি; তা আপনি কবুল করে নিন।’

তারপর প্রয়োজন একটি শক্তিশালী নিয়ত বা ইচ্ছা।আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করি না কেন সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী শব্দটা যুক্ত করার কারণ হলো, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সাহায্য আসার শর্তই হলো অদম্য ইচ্ছা আর পূর্ণ দৃঢ়তা। সুরা মুহাম্মদ এর ২১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়, তখন যদি তারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা সত্যে পরিণত করত, তবে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত।’

তাই গুনাহ থেকে বিরত থাকার একটি শক্ত শপথ আর দৃঢ়তাপূর্ণ তাওবার মধ্য দিয়ে আসুন রমজানকে স্বাগত জানাই। ভয় কি! আল্লাহ তায়ালা তো কথা দিয়েই রেখেছেন যে, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা যুমার : আয়াত, ৩৯)

আয়াতের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি ঈমান আনে অথবা সত্য হৃদয়ে তওবা করে প্রকৃত অর্থে সে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাবে, তার পাপ যদি সমুদ্রের ফেনা বরাবরও হয়, তবুও তা মাফ হয়ে যাবে। তাওবার পাশাপাশি হৃদয়কে শিরক, কুফর, বেদাতের মত ভয়াবহ অপরাধ থেকে হেফাজতের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যেমন রব্বে কারীম বলেন, ‘যে দিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি কোনো কাজে আসবে না। কেবল (সাফল্য লাভ করবে) সে ব্যক্তি যে বিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট আসবে।’ (সুরা শুয়ারা -৮৯)

আমরা অনেকেই ইবাদাতের প্রস্তুতি তো নেই ঠিকই। কিন্তু ইবাদাতের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এমন বিষয়গুলি খেয়াল করি না।যেমন রমজানে আপনার বাসায় ওয়াফাই, ডিশ চ্যানেল, ফেসবুক, ইউটিউব এইসবগুলি কে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার একটি চমৎকার রমজানের জন্য অত্যন্ত জরুরি। রমজানে বেশি করে দানের প্রস্তুতি এখন থেকেই নিন। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ হলেও অব্যাহত রাখুন। কারণ নিয়মিত অল্পদান আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দনীয় অনিয়মিত বেশি দানের চেয়ে। পকেটে সবসময় ভাংতি পয়সা/টাকা রাখতে পারেন। যাতে করে কেউ ফেরত না যায়।

অল্প করে হলেও অনেককেই দিতে পারবেন। মহানবী (সা.) রমজানে বেশি বেশি দান করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজানে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন, যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-০৬)

এবারের রমজানকে যদি আপনি চমৎকার ফলপ্রসূ করতে চান। তাহলে অবশ্যই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিন। রমজানের আগেই সব অলসতা দূর করে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওফিক কামনা করুন। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে চেষ্টা-সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)

পরিশেষে রবের কাছে ফরিয়াদ, হে আল্লাহ! এই রমজানে ইবাদাতের মধ্য দিয়ে বাকি এগারো মাসের জন্য নিজেদের ঈমান-আমলকে শান দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *