২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ , ১০ই রজব, ১৪৪৪ হিজরি
একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে বালেগ হওয়ার পর থেকেই পৃথিবীকে নতুনভাবে জানতে শিখে। নতুনভাবে সে অবলোকন করে পৃথিবীর হাল-হাকীকত। সে তখন পৃথিবীর নিয়মতান্ত্রিক উপক্রমা ও পরিবারতন্ত্র সম্পর্কে জানতে পারে। অজানা এক মোহে সে আকৃষ্ট হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে অন্য একটি মেয়ের প্রতি এবং একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মেয়ে অন্য এক ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আধুনিক পৃথিবীতে এরপরের ধারা আর উল্লেখ না করাই উত্তম। নাটক, থ্রিলার, ওয়েব সিরিজ, ড্রামা সিরিজ ও সিনেমার মাধ্যমে আমরা এরপরের কাহিনী জানি। আমরা আরেকটু পর থেকে জানবো।
বিয়ের মাধ্যমে শুধুমাত্র দুইটি সত্ত্বা নয় বরং দুইটি পরিবার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। মানুষকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন সামাজিক প্রাণী হিসেবে। মানুষ একজনের দেখাদেখি অন্যজন অনুকরণ করতে পছন্দ করে। ভালো কাজ হোক কিংবা খারাপ কাজ হোক, সে অনুকরণ করতে চায়।
একটি শিশু জন্মের পর তার মা-বাবাকে দেখে হাঁটার অনুকরণ করে, কথা বলার অনুকরণ করে। বিয়ের মাধ্যমে একটি হালাল সম্পর্ক তৈরি হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মল একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। দুজন দুজনকে বিশ্বাস করা, সুখে-দুঃখে পাশে থাকা, প্রয়োজনে উপদেশ দেয়া। কখনো বা মৃদু মনমালিন্য হওয়া। এসকল কিছুই একটি বন্ধনের জন্যই হয়। একজন স্বামী সর্বদা চায়, তার স্ত্রী ভালো থাকুক। তেমনি একজন স্ত্রীও চায় তার স্বামী ভালো থাকুক, শান্তিতে থাকুক।
বিয়ের আগেই কোনো একজন মাহরামকে সাথে নিয়ে যদি ছেলে মেয়েকে দেখতে যায় এবং পুরোপুরি মেয়ের সম্পর্কে জেনে নেয় এবং মেয়েও ছেলের সম্পর্কে জেনে নেয়, তাহলে বিয়ের পর আর তেমন ভুল বুঝাবুঝি হয় না।
একজন ব্যাক্তি সমাজ ও সামাজিকতা নিয়ে যেমন চিন্তাধারা পোষণ করে, এর অর্ধেক সে শিখে পরিবারের নিকট হতে। বাকী অর্ধেক সে শিখে শিক্ষার মাধ্যমে। ছেলে এবং মেয়ে যদি বিপরীত মেরুর চিন্তাধারায় অভ্যস্ত হয় তাহলে শান্তি এবং আনন্দ হয়তো কখনো দরজায় করাঘাত করবে না।
বিয়ের পূর্বেই একজন ছেলে ও মেয়ের এই জিনিষটি মনে রাখা আবশ্যকীয় যে, আমার জীবনের বাকী অংশ যার সাথে কাঁটাবো, তার চিন্তাভাবনা যেন পুরোপুরি আমার সাথে মিলে। আর যদি পুরোপুরি নাও মিলে অত্যন্ত ৮০% যেন মিলে। কারণ সকলের রুচি সৃষ্টিকর্তা একরকমভাবে তৈরি করেননি। পরষ্পরের চিন্তাধারা এক থাকলে একজন আরেকজনকে বুঝতে তাড়াতাড়ি। সে কি চায়, কি প্রয়োজন, তার পছন্দ-অপছন্দ কি, কখন তার মুড ভালো থাকে, কখন সে কথা বলতে পছন্দ করে, এসব প্রশ্নের উত্তর পরষ্পরের জেনে রাখা একান্ত কর্তব্য।
নবীজি সা. এর একটি হাদীস আছে, আবূ হুরাইরাহ রা. সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। তার ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা, তার রূপসৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারী। তবে তুমি দ্বীনদার নারী বিয়ে করো। অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে। (দাউদ শরীফের, ২০৪৭)
মানুষ দ্বীনদারীতা শিখে ছোটবেলায় মক্তবে যাওয়া থেকে। কেউ বা শিখে আরো অনেক পরে। কেউ বা হঠাৎ হেদায়াত পায়। কেউ বা বিপদে পড়ে স্রষ্টার অনুগত্য করা শুরু করে।
একজন ব্যক্তি দ্বীনদার হওয়া মানে এই নয় যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। রমজানে রোজা রাখে। দ্বীনদার হওয়া মানে, সে ফরজ ইবাদাতের পাশাপাশি খারাপ কাজ থেকে কতুটুকু বিরত থাকে।
সে নিজেকে অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বিরত রাখে নাকি। নিজেকে সে গায়রে মাহরাম থেকে হেফাজত করে নাকি। নিজের দৃষ্টির হেফাজত করে নাকি। সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করে নাকি। চিন্তা-ভাবনা পরিশুদ্ধ নাকি। এমন আরো অনেক বিষয় আছে যা দ্বীনদারিতার মানদন্ড হতে পারে।
আপনি যদি ভেবে থাকেন একজন পুরুষ হিসেবে যে, গরীব দেখে কাউকে বিয়ে করে নিবো। নামাজ রোজা করে এমন কাউকে বিয়ে করে নিব। চেহারা একরকম হলেই হয়। বর্তমান যামানায় এমনটা ভাবলে একটা সময় নিজেই গুনাহে জড়িয়ে পড়বেন। সকল মানুষের পছন্দ এক নয়।
কেউ খুব সুন্দরী পছন্দ করে, কেউ হালকা সুন্দরী, কেউ শ্যামলা, কেউ খানিকটা গাত্রবর্ণের, কেউ কালো বর্ণের, কেউ খুব সাস্থ্যবান চায় আবার কেউ ফিট শরীর চায়, কেউ খানিকটা চিকন চায়, কেউ খানিকটা লম্বা চায় কেউ বা খাটো চায়।
একজনের পছন্দের সাথে অন্যের পছন্দ কখনোই মিলবে না। তাই বিয়ের আগে কোনো মাহরামকে সাথে নিয়ে মেয়েকে দেখে নিন। অভিজ্ঞ ও বড়দের সাথে পরামর্শ করুন। আশা করি জীবনে ঠকবেন না।
সবেমাত্র আপনার বিয়ে হলো। কি করবেন এখন? এতদিন একা একা সময় কাটিঁয়েছেন এখন কি ট্যুর, হানিমুনের জন্য উঠেপড়ে লাগবেন? একটা সমীক্ষায় বলা হয়, আমাদের জীবনের সবচেয়ে বেহুদা টাকা খরচ করি আমরা বিয়ের আগে ও পরের সময়গুলোতে। যেই জিনিষ প্রয়োজন নেই, সেটিও আমরা কিনি। যেটি দরকার, সেটিও আবেগের ঠেলায় মাত্রাতিরিক্ত সংগ্রহ করি। এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
কৃপণতা নয়। বুঝেশুনে খরচ করুন। একবার ভাবুন, সম্পদের হিসাব যদি আল্লাহ চায় তখন আপনি কিভাবে হিসাব দিবেন? পরষ্পর পরষ্পরকে সময় দিন। কিন্তু তাতে সমঝোতা রাখুন। জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। হয়তো মতামতের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারবেন।
আল্লাহ তাআলার অন্যতম এক উপহার হলো সন্তান। সন্তানকে বড় করা, তাকে নীতিবান করা ও আদর্শ শিক্ষা দেয়া বাবা-মায়ের দায়িত্ব। সন্তানকে শৈশবকাল থেকে ইসলামিক ছোট ছোট বিধানগুলো জানিয়ে দিন। তাকে মাঠে ও বন-বাদাড়ে খেলতে দিন। তাকে মিথ্যা ভয় দেখিয়ে মন মস্তিষ্ক নষ্ট করে দিবেন না। সাহসী করে তুলুন। সাহস তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
হয়তো আমার কথাগুলো আপনি পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারবেন না। তবে জ্ঞানীদের জন্য এতুটুকুই যথেষ্ঠ মনে করি। জ্ঞানীরা ইশারার মাধ্যমে মূল ভাবার্থ বুঝে নেয়।