পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: কিশোরগঞ্জ শহরের আলোচিত পাগলা মসজিদের নয়টি দানবাক্স খুলে পাওয়া গেছে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এটা দানবাক্স থেকে একসঙ্গে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে গণনা শুরু হয়ে শেষ হয় রাত সাড়ে ১০টায়। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট ৮টি দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার, ৩২৫ টাকা। যা আগে পাওয়া সর্বোচ্চ টাকা।
গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় খোলা হয় দানবাক্সগুলো। তিন মাস অন্তর খোলার নিয়ম থাকলেও সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিসহ নানা কারণে এবার খোলা হয়েছে তিন মাস ২০ দিন পর। দানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এবার সিন্দুক একটি বাড়ানো হয়েছিল। তার পরও প্রতিটি সিন্দুকই ঠাকায় ঠাসা।
মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজের উপস্থিতিতে সিন্দুকগুলো খোলা হয়। এরপর মসজিদের দোতলার সুপরিসর ফ্লোরে ঢেলে করা হয় গণনা। মসজিদ কমপ্লেক্স মাদ্রাসার ১৩৪ জন ছাত্র, ১০ জন শিক্ষক ও রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন স্টাফ গণনায় অংশ নিয়েছেন। দেশি মুদ্রার পাশাপাশি সিন্দুকে বিদেশি মুদ্রাও পাওয়া গেছে। ছিল সোনা-রুপার অলঙ্কারও। কিছু চিঠি ও চিরকুটও পাওয়া গেছে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন ছিল পর্যাপ্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য।
ফ্লোরে ঢেলে টাকাগুলো মান অনুযায়ী আলাদা বান্ডেল বাঁধা হয়। আর রুপালী ব্যাংকের আধুনিক গণনা মেশিনে গুণে সেগুলি ট্রাঙ্কে ভরা হয়। গণনা শেষে টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা করা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. রফিকুল ইসলাম।
এই পগলা মসজিদের প্রচার দিন দিনই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আর নানা ধর্মের, নানা শ্রেণির, নানা বয়সের মানুষ এখানে এসে সিন্দুকে টাকা ফেলে যান। অনেকে মানি অর্ডারের মাধ্যমেও টাকা পাঠান। এছাড়া গবাদি পশু আর হাসঁমুরগিও দান করেন অনেকেই। সেগুলি প্রকাশ্য ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করে এসব টাকাও ব্যাংকে জমা করা হয়।
সিন্দুকে অনেক চিঠি আর চিরকুটও পাওয়া যায়। তাতে বিচিত্র রকমের মনোবাঞ্ছার কথা লেখা থাকে।
কথিত আছে, জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই পাগলা মসজিদ। মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, কিছু দালিলিক সূত্রে জানা গেছে, শহরের হয়বতনগরের জমিদার জিলকদর দাদ খান প্রায় পৌনে দুইশ বছর আগে এই জায়গায় নরসুন্দার পাড়ে নামাজ আদায় করতেন। এক পর্যায়ে একটি ছোট্ট মসজিদ তৈরি করে তাতে নামাজ পড়তে শুরু করেন। তাকে সবাই পাগলা জমিদার বলে ডাকতেন। তার নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ হয়ে যায় ‘পাগলা মসজিদ’। তবে মসজিদের কোথাও এর প্রতিষ্ঠা কালের সন-তারিখ লেখা পাওয়া যায়নি।