পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : শ্রমিকদের শতভাগ পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সব পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে সরকার। গত বুধবার (১ জুলাই) থেকে বন্ধ কার্যকর করাসহ শ্রমিকদের পাওনা অর্থ এককালীন দেওয়া হবে। তবে পাওনার অর্ধেক অর্থ তাঁরা পাবেন নগদে। বাকি অর্থ পাবেন তিন মাসের মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. ইমরান আহমেদ।
এর আগে গতকাল বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান। এর আগে গণভবনে মুখ্য সচিব, অর্থসচিব, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন সরকারপ্রধান।
মুখ্য সচিব বলেন, ‘আজ যখন প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি খুব আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন।’
ধারাবাহিকভাবে লোকসানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী কর্মচারীর চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অবসানের সিদ্ধান্ত গত রবিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।
বস্ত্র ও পাটসচিব লোকমান হোসেন মিয়া সেদিন বলেছিলেন, শ্রমিকদের চাকরি অবসানের পর আগামী ছয় মাসের মধ্যে পিপিপির (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির) আওতায় আধুনিকায়ন করে এসব পাটকল উৎপাদনমুখী করা হবে। তখন এসব শ্রমিক সেখানে চাকরি করার সুযোগ পাবেন।
২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে আট হাজার ৯৫৪ জন পাটকল শ্রমিক অবসরে গেছেন, তাঁদের সব পাওনাও একসঙ্গে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন পাটমন্ত্রী।
তবে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন কয়েক দিন ধরে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মিছিল-সমাবেশ চালিয়ে আসছে। বিশ্বে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা যেখানে বাড়ছে, সেখানে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর আধুনিকায়ন হলে শ্রমিক ছাঁটাই নয়, বরং নতুন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে যুক্তি দিয়ে আসছেন প্রতিবাদকারীরা।
এ পর্যন্ত এই পাটকলগুলোর পুঞ্জীভূত ক্ষতির পরিমাণ ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা জানিয়ে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘এখানে কাউকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করে তাঁদের অবসরে পাঠানো হচ্ছে।’
২০১৫ সালের সর্বশেষ মজুরি কাঠামো অনুযায়ী প্রায় ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক অবসরকালীন সুবিধাসহ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাবেন জানিয়ে আহমদ কায়কাউস আরো বলেন, সে জন্য আগামী তিন দিনের মধ্যে শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন থাকা ২৬টি পাটকলের মধ্যে মনোয়ার জুট মিল ছাড়া সবগুলোতেই উৎপাদন চলছে। এসব কারখানায় ২৪ হাজার ৮৬৬ জন স্থায়ী শ্রমিকের বাইরে তালিকাভুক্ত ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক আছেন প্রায় ২৬ হাজার। বেসরকারি খাতের পাটকলগুলো লাভ দেখাতে পারলেও বিজেএমসির আওতাধীন মিলগুলো বছরের পর বছর লোকসান করে যাচ্ছে, যার পেছনে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।