পাপের ঘোরভাঙা চাটাই

পাপের ঘোরভাঙা চাটাই

পাপের ঘোরভাঙা চাটাই

আব্দুস সালাম ❑ মনের দেহে প্রেতচোখ জড়িয়েছে পাপের ঘোর৷ আত্মার অস্তিত্ব ঘিরে বইছে ঘুণে ধরা কর্দমাক্ত নদী। আমি আবার আসবো মাথা নুইয়ে বসতে নলখাগড়ার মলিন চাটাইয়ে। উপরে সাদা মেঘের শৈবাল শামিয়ানা। মাইকে মাইকে তৃষাতুর ইল্লাল্লার জিকির। মাটির নেশা ভুলে পাটালিগুড়ে মাছির আনাগোনা। ধান খেতে এঁটেল মাটির বাঁধ ভাঙলো বুঝি, কৃষক-কৃষাণীর জানার সময় কই? বাতাসে আহাম বয়ানের ঘ্রাণ, অন্তর তৃপ্ত হয় স্ফীত রুহানী সমুদ্রে । ধীরে ধীরে মানুষের ঢল নামছে ধুলোবালির মাঠপুকুরে। যেখানে রাত্রি গভীর হয়, একটি জেনারেটরের অনবরত করুণ সুরে দিকে দিকে ডুবে যায় কোলাহল, ক্রমশ উদাস হয় তাহাজ্জুদের অন্ধকার। চুইয়ে পরা শিশির চক্ষু ভেজায় গ্রাম্য মুসল্লির।

আম্রবৃক্ষের তলে পাতা কেদারায় সহস্র দৃষ্টির সম্মিলন। দূরের তালগাছে প্রতিধ্বনিত নরম কণ্ঠে মাওলা মাওলা ডাক। বাতাস মধুর হয় রোনাজারির আতসে। আধোঘুমে ঢুলুঢুলু মাথা দুলে উঠে ছয় তসবির জরবে। ততক্ষণে ধানের পাতায় জমে থাকা শিশির ফোঁটা রাঙতে শুরু করবে। ছুটবে আইল ধরে সারিসারি মাওলাপ্রেমীর স্রোত। মাথায় শুকনো লাকড়ির বোঝা। বুকে পুণ্য হওয়ার অপরাধবোধ। হাতে ঝুলছে মাছের রক্তাক্ত ঠোঁটে সেঁধিয়ে যাওয়া চিকন লিলেন রশি, যার অপর প্রান্ত ঠেকেছে রূপালী লেজে। একটি শিশুর হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া সেই পাঙ্গাস কি জানে আত্মশুদ্ধির পঞ্চতন্ত্র?

ঝিঁঝিঁ ডাকা সাঁঝের মাঠে ফিনফিনে কুয়াশার ধুতি। গাঁয়ের প্রান্তসীমায় অশ্বত্থের তলে, কলমির গন্ধভরা পুকুর পাড়ে বুনো হাওয়ায় ভেসে আসে দরুদের করুণ সুর। ইরি ধানের পাতা ছুঁয়ে, শুকনো হাওড়ের দাউ দাউ শ্মশানের পেরিয়ে ঝরে পড়া কুয়াশার পথ ধরে একসময় তা মিইয়ে যায় ফাল্গুনের কোন এক নিঝুম গোধূলির গাঁয়।

লেখক: অ্যাক্টিভিস্ট ও পর্যালোচক

পাথেয়/আ.মা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *