পারাপারের সময় ভাবতাম, সুদিন কবে আসবে?

পারাপারের সময় ভাবতাম, সুদিন কবে আসবে?

  • পারাপারের সময় ভাবতাম, সুদিন কবে আসবে? সেই সুদিন আগামীকাল আসছে।
  • একটি দেশ অগ্রযাত্রায় তখনই পৌঁছে, যখন দেশের সর্বসস্তরের জনগণ এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণের অবাধ সুযোগ লাভ করে।
  • এই পদ্মাসেতু প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে ইনশাআল্লাহ।

আগামিকাল ২৫ জুন শনিবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের পদ্মাসেতু। যে সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মনে যেন আনন্দের রঙ লেগেছে—সাজ সাজ রব পড়েছে। লাখো লাখো মানুষ দেশের জন্য স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিনটি উদযাপনের জন্য অপেক্ষা আছে। কখন ভোর হবে, কখন ভোর হবে—ভেবে ভেবে যেন তাদের আজ রাতের ঘুম পালিয়েছে পদ্মা সেতুর ঝলমলে আলো থেকেও বহুদূর।

পদ্মাসেতুর এই উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণাঞ্চলের দেশেবরেণ্য আলেম, ইসলামী আলোচক, বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার সাংগঠনিক সম্পাদক, জামিআ মাদানিয়া আসআদুল উলূম খুলনা মাদানীনগর মাদরাসার পরিচালক, রাজধানীর ইকরা বাংলাদেশের সিনিয়র মুহাদ্দিস ও আফতাবনগর আবাসিক প্রকল্পের গাজী মসজিদের খতীব ‘মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী’ দামাত বারাকাতুহুম একটি সাক্ষাৎকারে নিজের আনন্দ, উচ্ছাস ও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন ‘পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম’ এর কাছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ‘আদিল মাহমুদ’। সাক্ষাৎকারের চম্বুকাংশ তুলে ধরা হলো—

পাথেয়: আগামীকাল পদ্মাসেতুর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মার ওপারের বাসিন্দা হিসাবে আপনার কেমন লাগছে?

মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী: সেই ২০১৪ সাল থেকে—যখন পদ্মা সেতুর প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলো, তখন থেকেই পথ চেয়েছিলাম যে, এই বিড়ম্বনার শেষ কবে হবে, সুদিন কবে আসবে? সেই সুদিন আগামীকাল ঘনিয়ে আসছে, আলহামদুলিল্লাহ।

ইনশাআল্লাহ এবারই শেষবার, আর সেই বিড়ম্বনা আমাকে পোহাতে হবে না, পদ্মাসেতুর আগে যে বিড়ম্বনা আমরা ভোগ করেছি। লঞ্চ পারাপারের বিড়ম্বনা, স্পীড বোট, যাত্রী-ফেরীর বিড়ম্বনা, ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা। আবার কখনও আবহাওয়া যদি প্রতিকূল হয়ে যায়, তাহলে নদী পাড়াপাড় বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও আরও অনেক ধরণের কষ্ট আমরা সয়েছি।

এই তো সেদিনও ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিলো, বৃষ্টির মাঝেই লঞ্চে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ছিলাম। ভয় কাজ করছিলো অন্তরে, কখন হুট করে কী হয় এই ভেবে। আর ভাবছিলাম, এই দুর্দিন আর কতো কাল!

আল্লাহ তাআলার মেহেরবানী, পদ্মাসেতুর মাধ্যমে সাধারণ যাত্রীসহ পদ্মাপারের সর্বস্তরের লোকদের জন্য রাজধানীর সাথে এক সেতুবন্ধন গড়ে দিলেন। যা অত্যন্ত আনন্দের, ভালোলাগার মতো একটি বিষয়।

পাথেয়: ওপারের জনজীবনে এই সেতু কেমন প্রভাব ফেলবে?

মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী: আসলে দক্ষিণবঙ্গের প্রতিটি মানুষই এর সুফল ভোগ করবে। বিশেষভাবে ঐ শ্রেণীর মানুষ, যাদের রাজধানীর সাথে প্রায়ই যোগাযোগ করতে হয়, বিভিন্ন প্রয়োজনে আসতে হয়, তাদের সুফলের কোনো শেষ নেই। এমন অনেক ওলামায়ে কেরামও আছেন, যারা প্রতিনিয়ত রাজধানীতে বিভিন্ন কাজে আসেন। এই যাত্রীদের মাঝে আমিও একজন। প্রত্যেক সপ্তাহে রাজধানীর আফতাবনগর গাজী মসজিদে জুমার নামাজ পড়ানোর উদ্দেশ্যে আমি আসি। দাওরায়ে হাদীসে দরসও প্রদান করতে হয়। অনেক সময় এমনও হয় যে, সপ্তাহে একাধিকবার বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাকে ঢাকায় আসতে হয়।

বহু মানুষ এমন আছেন, যারা এপারে থাকেন, কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের সন্তান, বারবারই বাড়ি ফিরে যেতে মন চায়, দেশের মানুষকে দেখতে মনে চায়, দেশের স্বজনদের বিয়েশাদী, জন্মমৃত্যুসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে মন চায়, কিন্তু পদ্মা পারাপারের বিড়ম্বনার কারণে ওনারা যেতে পারেন না, এখন ওনারা অত্যন্ত সহজে যেতে পারবেন।

আবার দক্ষিণবঙ্গের এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা ফেরী পারাপারের বিড়ম্বনায় রাজধানীতে আসতে চান না, ওনারা সহজেই এখন আসতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ছাত্র ও চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অনেক বড় সুবিধা হবে। যাদের রাজধানীতে পরীক্ষা থাকে বা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হয়, তারা খুব সহজেই আসতে পারবেন।

সারাদেশ থেকে বহু মানুষ সুন্দরবনে যেতে চান, খাজা খান জাহান আলীর দরবারে যেতে চান, দক্ষিণবঙ্গ ভ্রমণে যেতে চান, কিন্তু পদ্মা পারাপারের বিড়ম্বনার কথা ভেবে আগ্রহ থাকা সত্বেও যেতে পারেননি, তারাও এখন অতি সহজে যেতে পারবেন।

পাথেয়: দক্ষিণবঙ্গের অবহেলিত জনপদের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনে পদ্মাসেতু কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করছেন?

মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী: এই বিষয়টা নিয়ে বিশেষভাবে বলতে চাচ্ছি। একদিকে যেমন দক্ষিণ বঙ্গের অসংখ্য-অগণিত মানুষের জন্য পদ্মাসেতু সুফল বয়ে আনছে, এর সাথে সাথে যেদিন এই সেতুর প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হলো, সেদিন থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জায়গা-জমির ব্যাপারে এক প্রতিযোগিতার শুরু হয়ে গেলো। সেতু-সংলগ্ন মহাসড়কের ডানে-বাঁয়ে এখন আর কোনো জায়গা বিক্রয়ের জন্য নেই।

এখানে বিভিন্ন শিল্পের কল-কারখানা গড়ে উঠছে। অনেক কারখানার নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে, অনেকগুলো সমাপ্তির পথে। এসব কল-কারখানায় বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এটা বিশাল বড় এক অগ্রযাত্রা। দক্ষিণবঙ্গের অগ্রযাত্রার মধ্য দিয়ে এটা দেশেরও অগ্রযাত্রা। কারণ, একটি দেশ অগ্রযাত্রায় তখনই পৌঁছে, যখন দেশের সর্বসস্তরের জনগণ এই অগ্রযাত্রায় অংশগ্রহণের অবাধ সুযোগ লাভ করে।

আমি মনে করি, এই পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে ইনশাআল্লাহ। প্রগতির অগ্রযাত্রায় যাদের সামনে বাধা ছিলো, সেই বাধা দূর হয়ে গেলো।

আর ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রেও যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হলো দেশের অন্যান্য অংশের সাথে, এটা অনেক বড় সুফল বয়ে আনবে। কারণ, আগে অনেক পঁচনশীল দ্রব্য দীর্ঘক্ষণ ফেরীতে আটকে থাকায় নষ্ট হয়ে যেতো। পদ্মা সেতুর কারণে এখন অত্যন্ত সহজে এপারে চলে আসবে। এপারের মাল ওপারে যাবে। ওপারের মাল এপারে আসবে। এতে বানিজ্যের ক্ষেত্রেও দেশ এগিয়ে যাবে। সার্বিকভাবেই এই সেতু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

পাথেয়: সবশেষে পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের উদ্দেশ্যে যদি কিছু বলতেন।

মাওলানা এমদাদুল্লাহ কাসেমী: পাঠকদেরকে আমি দক্ষিণবঙ্গ ভ্রমনের দাওয়াত দিচ্ছি। আমি তো গত কয়েকদিন যাবৎ অনেক উৎফুল্ল হয়ে ঢাকার ওলামায়ে কেরামদের, বিশেষ করে ‘বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা’র সাথে সংশ্লিষ্ট ওলামায়ে কেমরামদের দক্ষিণবঙ্গে দাওয়াত করছি। সেতুর উপর দিয়ে উনারা অত্যন্ত সহজে আমাদের খুলনায় আসবেন এবং সেতু পারাপারে আল্লাহর নেয়ামতের একটা উপলব্ধি উনারা করবেন। আল্লাহ তাআলা সবাইকে যাওয়ার তাওফিক দান করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *