পুলিশ! পুলিশ! অতঃপর পুলিশ

পুলিশ! পুলিশ! অতঃপর পুলিশ

পুলিশ! পুলিশ! অতঃপর পুলিশ

মুহাম্মদ আইয়ূব ❑ পুলিশ নামে সারা দুনিয়াতেই একটা গোষ্ঠী আছে। মানব সেবায় এরা জড়িত থাকলেও এদের নিয়ে ট্রল আর নেতিবাচক সংবাদ শিরোনামের অভাব নাই। অবশ্য এর পেছনে অনেক কারণ আছে। ছোটবেলা থেকেই পুলিশ নিয়ে একধরনের ভীতি সবসময় আমার ভেতর কাজ করত। ভাবতাম পুলিশ মানেই পিস্তল, রাইফেল আর মুগুর নিয়ে টহল। কথার এদিক সেদিক হলেই গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে সরাসরি হাজত, ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে যাওয়া, ঘুষ মানে পুলিশ, পুলিশ মানেই ঘুষ ইত্যাদি ইত্যাদি।

২০০৩ বা ৪ সালের কথা। প্রথম আলোর জনপ্রিয় ম্যাগাজিন আলপিনে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে নিয়ে ব্যঙ্গ করা হল। রমজান মাস,প্রায় সব মাদ্রাসাই বন্ধ। শুক্রবার বায়তুল মুকাররমের সামনে বিক্ষোভ মিছিল হবে। রাজপথ গরম করতে হিযবুত তাওহিদ রেডি। আমি ও আমার বড় ভাই ইয়াকুব হাসান আব্বাকে ম্যানেজ করলাম ইসলামের জন্য জীবন দিব বলে। খতিব আল্লামা উবায়দুল হক্ব সাহেব বয়ানের মাঝেই জানিয়ে দিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক গতকাল রাতেই মাফ চেয়েছেন দেশবাসীর কাছে। সুতরাং কোন আন্দোলনের দরকার নাই। কে শুনে কার কথা! ফরজ দুই রাকাত শেষ হতেই তৌহীদী জনতা (?) সুন্নত না পড়েই লাফিয়ে পড়ল রাজপথে। কালিমা খচিত কালো পতাকা হাতে আমরা দুই ভাই আশপাশ গরম করতে থাকলাম মুখরোচক স্লোগানে। রমনা পার্ক আর শিশু পার্কের মাঝ দিয়ে তুমুল হৈ হুল্লোড়ে সামনে এগোতে থাকল তৌহীদী জনতা। শাহবাগের সামনে যেতেই শুরু হল পুলিশের টেয়ারশেল নিক্ষেপ। রোজা রেখে পুলিশের চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্দার করতে করতে রমনা পার্কের ভিতর দিয়ে কোনমতে জানটা নিয়ে ফিরে আসলাম সেদিন। সেদিনের সেই দৌড়টাই জীবনের হাইস্পিডের দৌড় ছিল।

তা ছাড়া সে সময় মহিলা লীগের কর্মীদের প্রকাশ্যে জড়িয়ে ধরা,ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনেদুপুরে ট্রাক থামিয়ে উৎকোচ নেওয়ার ছবি পত্র পত্রিকায় দেখে পুলিশের প্রতি ভয়ের পাশাপাশি ক্ষোভও জন্মেছিল। সবসময় পুলিশ থেকে একহাজার হাত দূরে থাকার চেষ্টা করতাম।

করোনার এই দুর্যোগে পুলিশ ভাইয়েরা এমন কিছু করে দেখালেন, যার কারণে আমি বলতে বাধ্য, পুলিশের মত জনতার সত্যিকারের বন্ধু আর কে হতে পারে?

২০১৪ সালের কথা। আমাদের বড় হুজুরের (আল্লামা ফরিদ উদ্দীন মাসঊদ দা.বা.) বেলংকার ইজতেমায় একদিন রাতে হুজুরের বাসভবনে থাকার সৌভাগ্য হল তা-ও আবার দুই পুলিশ সদস্যের সাথে, একদম এক খাটে ব্লু কালারের সেই পুলিশি পোশাকের সাথে লেগে লেগে। বাপরে বাপ! বিষয় হচ্ছে আমার প্রিয় উস্তায মাওলানা হুসাইনুল বান্না সাহেব ঢাকা থেকে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। হুজুরের সেবার জন্য আমি আর ইসমাঈল জিকু ভাই সেদিন সেখানে ছিলাম। সেই সুবাধে একদম কাছ থেকে পুলিশ ভাইদের দেখলাম, তাদের রাইফেল ধরলাম,আঞ্চলিক ভাষায় তাদের মজার মজার খোশগল্প শুনলাম।কিন্তু তাদের ভিতর ভয়ের কিছু দেখলাম না। অল ধীরে ধীরে তাদের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে থাকল তাদের কিছু ভাল কর্মকাণ্ডে। বিশেষকরে করোনার এই দুর্যোগে পুলিশ ভাইয়েরা এমন কিছু করে দেখালেন, যার কারণে আমি বলতে বাধ্য, পুলিশের মত জনতার সত্যিকারের বন্ধু আর কে হতে পারে?

গত ১১ এপ্রিলে ঝিনাইদহে করোনার লাশ দাফন নিয়ে ঘটে যায় মর্মান্তিক এক ঘটনা। বিষয়টা জানতে আমরা চলে যাব সরাসরি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জনাব আবুল বাশারের কাছে। জ্বী আমি আবুল বাশার, ঘটনা হচ্ছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের সামাদ আলী( ৫০) ফরিদপুরে শ্রমিকের কাজ করতেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি ফরিদপুর মেডিকেলে ভর্তি হন এবং গত শনিবার (১১ এপ্রিল) সকালে মারা যান। বিকালে তার ভাই লাশ নিয়ে ঝিনাইদহে আসেন।থানা থেকে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। জেলা প্রশাসক সরজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা শুভ ও পুলিশ লাশ নিয়ে মৃতের বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানের কেউ লাশ দাফনে এগিয়ে আসেনি। পরে গ্রামের কয়েকজনকে দিয়ে কবর খনন করা হয়। এরপরে লাশ গোরস্তানে আনলে জানাজা পড়ানোর জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ইউএনও জানাজার নামাজ পড়ান। জানাযায় অংশ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশেত, সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কয়েক সদস্য।

প্রিয় পাঠক! আপনার মতামত আপনার কাছে। তবে আমার মতামতটা একটু শুনুন। আমি কুরআন হাদিস পড়ুয়া একজন মানুষ ঠিক, তবে এই সব পুলিশ ভাইদের আমি আমার আগে রাখব। কারণ জানাযা পড়ানোর দায়িত্ব তাদের নয় আমার। জানের ভয়তে যখন আমি আমার এক মুসলিম ভাইয়ের জানাযা পড়াতে পারলাম না, আমার দায়িত্ব পালন করল এমন মানুষ যাদের আমি আজন্ম খারাপ ভেবে আসছি! তখন আমি কোন মুখে বলি বাংলাদেশের সবচাইতে ভাল মানুষ আমি? নো চান্স! মানুষের বিপদে যে পাশে দাঁড়ায়না সে যত বড়ই মাওলানা হোক সে আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) প্রিয় মানুষ হতে পারেনা। ও হ্যাঁ আল্লাহ রাসূলের (সাঃ) প্রিয় হতে বড় কোন মহাজ্ঞানী হওয়াও আবশ্যক না।

মোবারকবাদ হে পুলিশ ভাইয়েরা! দেশ ও জনতার কল্যাণে আজীবন কাজ করে যাবেন ইনশাআল্লাহ। আপনাদের দেখে দেখে আমরাও যেন বয়ানবাজি ছেড়ে সতস্ফূর্তভাবে দেশ গড়ার মহান কাজে শরিক হতে পারি। খোদা হাফেজ।

(দেশ ও দশের জন্য আর মাত্র কয়েকটি দিন ঘরে থাকুন সতর্ক থাকুন, সবাইকে বাঁচতে দিন। বেশি বেশি দোআ, তাওবা, ইস্তেগফার ও কান্নাকাটি করুন, মাহে রমজানের প্রস্তুতি নিন।)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *