পেটে পাথর বেঁধে হলেও মুসলমানদের উচিত আগে নিজ সন্তানদেরকে শিক্ষিত করা: মাওলানা আরশাদ মাদানী

পেটে পাথর বেঁধে হলেও মুসলমানদের উচিত আগে নিজ সন্তানদেরকে শিক্ষিত করা: মাওলানা আরশাদ মাদানী

পাথেয় টোইয়েন্টিফোর ডটকম: আধুনিক শিক্ষাকে বর্তমান সময়ের অতি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা আখ্যা দিয়ে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী মন্তব্য করেছন যে, জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ মোটেও আধুনিক শিক্ষার বিরুদ্ধে নয়। সমাজে জ্ঞানীগুণীদের যেমন প্রয়োজন আছে তেমনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানীরও প্রয়োজন রয়েছে। সেই সাথে ধর্মীয় শিক্ষাকেও অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা উচিত।তিনি জমিয়তে উলামা দিল্লি ও হরিয়ানা প্রদেশের জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রের সদস্যদের এক দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অবস্থান, আমাদের রাজনীতি, আমাদের কার্যবিধি সম্পূর্ণরূপে আমাদের পূর্বসূরি আলেমদের চেতনার ছাঁচে নির্মিত। তাদের আদর্শকে আমরা আমাদের পথচলার আলোকবর্তিকা মনে করি। তাদের চিন্তাধারা বাদ দিয়ে নতুন কোনো মতাদর্শ গ্রহণ করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। আর আমাদের আকাবিরগণ কখনো আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে ছিলেন না। তারা স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করেছিলেন। জান-মাল কোরবানি দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ধ্রুব সত্য এইযে, তারা প্রয়োজনের তাগিদে ইংরেজি শিক্ষার বিরোধিতা করেননি। বরং ইংরেজি ভাষাকে কাজে লাগিয়ে দাওয়াত ও কাজের পরিধি আরও প্রসারিত করেছেন।

যখন দেশ স্বাধীন হয় এই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নেতৃত্বেই তখন সরকারীভাবে মাদরাসা ও স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়। কারণ, তারা বিশ্বাস করতো যে, এই জাতিকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। আমাদেরও চিন্তাধারা এটাই যে, জীবন-জীবিকার তাগিদে সমসাময়িক শিক্ষাকে ভালোভাবে রপ্ত করা জরুরি। তবে এর পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাকেও প্রয়োজনীয় হিসেবে দেখতে হবে। কারণ, আমাদের সন্তান যদি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকে সেই সাথে যদি তার প্রয়োজন মাফিক ধর্মীয় ইলম থাকে তাহলে তার এই পেশাকে সে শরীয়তের মেজাজে পরিচালিত করতে পারবে এবং জীবনের শেষ মুহুর্তে  কালিমাটুকুও পড়ে নিতে পারবে।

১৯৪৭ সাল থেকে দেখে আসছি, সকল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক পার্টিগুলো মিলে মুসলমানদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে, আধুনিক শিক্ষা দীক্ষায় দক্ষিণ ভারতীয়দের মুসলমানদের যেই উপলব্ধি তা উত্তরের মুসলমানদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। আমরা উত্তর ভারতীয়রা বিয়ে শাদি ও নানান উৎসবে অঢেল টাকা পয়সা উড়াই কিন্তু শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য স্কুল কলেজ বানানোর প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করি না। অথচ দক্ষিণী মুসলমানদের চাইতে উত্তরের মুসলমানদের সহায় সম্পত্তি কোন দিক দিয়েই কম নয়। কমতি শুধু উপলব্ধি ও সদিচ্ছার। সেটা আমাদের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আজকাল একটি বিপজ্জনক ঘটনা অহরহ ঘটতে দেখা যাচ্ছে যে, মুসলিম মেয়েদের সঙ্গে হিন্দু ছেলেদের বিয়ে শাদী হচ্ছে। এসব স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে একটি চক্র সুকৌশলে আমাদের মুসলিম মেয়েদের ইমানহারা করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। অথচ এই কাজটি যদি কোনো মুসলিম ছেলে করতো। কোনো হিন্দু মেয়েকে যদি সে বিয়ে করতো তাহলে তার পুরো পরিবারকে তুলে নিয়ে জেলে চালান করে দেওয়া হতো। কিন্তু যখন এমন কাজ একজন হিন্দু করছে তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কোনো নেওয়া হচ্ছে না।

আজকাল একটি বিপজ্জনক ঘটনা অহরহ ঘটতে দেখা যাচ্ছে যে, মুসলিম মেয়েদের সঙ্গে হিন্দু ছেলেদের বিয়ে শাদী হচ্ছে

মাওলানা মাদানী আরও বলেন, মুসলিম ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলুন। যেখানে অবাধে ও নিরাপদে জাতির সন্তানরা ধর্মীয় পরিবেশে লেখাপড়া করতে পারবে। এখনই এর প্রতিকার না করলে দশ বছর পরে এই চিত্র ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।

পরিশেষে তিনি মন্তব্য করেন,  সরকার আপনাদের জন্য কিছু করবে এমন আশা করা উচিত নয়। কারণ ১৯৪৭ সাল থেকে দেখে আসছি, সকল সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক পার্টিগুলো মিলে মুসলমানদেরকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না দেওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্যই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও মুসলিমরা দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জাতি। তারা প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। সাচার কমিটির রিপোর্ট তারই প্রমাণ বহন করে।

সুতরাং এখনই সময়, মুসলমানদের উচিত পেটে পাথর বেঁধে হলেও নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করা। জাতির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কর্তব্য হলো, ধর্মীয় পরিবেশে যতটা সম্ভব ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল-কলেজ তৈরি করা। যাতে করে সেখানে অনায়াসে তারা পড়াশুনা করতে পারে।

সূত্র: ডেইলী সাহাফাত দিল্লী

উর্দু থেকে অনুবাদ, তামীম আব্দুল্লাহ

সম্পাদনা, আব্দুস সালাম ইবনু হাশিম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *