পোড়া চিনি পড়ছে কর্ণফুলীতে, মরছে মাছ

পোড়া চিনি পড়ছে কর্ণফুলীতে, মরছে মাছ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: চট্টগ্রামে কর্ণফুলীর তীরে এস আলম গ্রুপের অপরিশোধিত চিনির গুদামের আগুন এখনও পুরোপুরি নেভেনি।

সোমবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টার আগে আগে কর্ণফুলী থানার ইছাপুর এলাকায় এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানার চারটি গুদামের মধ্যে একটিতে আগুন লাগে।

ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পুরোপুরি নেভেনি। বুধবার দুপুরের দিকেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের আগুন নেভানোর কাজ করেতে দেখা গেছে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে কারখানার পুড়ে যাওয়া চিনির বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে পড়তে শুরু করে। আর এতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু হয়েছে নদীতে। নদীতে মারা যাচ্ছে মাছ, কাঁকড়াসহ নানা জীববৈচিত্র।

এক প্রতিবেদনে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, নদীতে ভেসে থাকা মৃত এবং মৃতপ্রায় মাছগুলো ধরছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, “মঙ্গলবার রাত থেকে নদীতে মাছ মরে যাচ্ছে। এস আলমের পোড়া চিনি নদীতে পড়ার পর মাছ মরছে। এর আগে এ ধরনের ঘটনা কখনও ঘটেনি। পোড়া চিনির বর্জ্যগুলো কারখানা থেকে সরাসরি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। এভাবে থাকলে নদীর মাছ একটিও থাকবে না। সব মরে ভেসে উঠবে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলমের পোড়া চিনির বর্জ্য কারখানা থেকে সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এসব বর্জ্যে নদীর পানির রং পরিবর্তন হয়ে লালচে বর্ণে রূপ নিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর কয়েক কিলোমিটারজুড়ে পানির রং পরিবর্তন হয়েছে। যেসব স্থানে পানি দূষিত হয়েছে শুধু সেসব স্থানেই মরছে মাছসহ অন্যান্য জীব।

এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, “সুগার মিলের পোড়া চিনি কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে এমন তথ্য পেয়ে মঙ্গলবার আমাদের ল্যাব থেকে লোকজন গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ল্যাবের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য মারা যাচ্ছে বা দুর্বল হয়ে পড়ছে। অবশ্যই এটি নদীর জন্য ক্ষতির কারণ।”

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, “শিল্পকারখানা গড়ে তোলার আগে কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা ডাম্পিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখেনি। এ কারণে কারখানা থেকে পোড়া বর্জ্য পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এতে নদীর পানি দূষিত হবে। ক্ষতি হবে মৎস্যসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্য। এস আলম গ্রুপ হয়তো পুড়ে যাওয়া সম্পদের ক্ষতি একসময় পোষাতে পারবে। পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে তা আর পূরণ হবে না। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সজাগ হতে হবে।”

হালদা নদী গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, “পুড়ে যাওয়া চিনি নদীতে পড়লে অবশ্যই নদীর ক্ষতি হবে। চিনি হোক আর যা হোক এগুলো এক্সট্রা কেমিক্যাল। এগুলো পানির কোয়ালিটি নষ্ট করবে। এতে পানিতে অক্সিজেনের শূন্যতা সৃষ্টি হবে। এ কারণে পানিতে থাকা জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাই এসব যাতে নদীতে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে জোয়ার-ভাটার কারণে এই সমস্যা একসময় পূরণ হবে। তাও সময়সাপেক্ষ।”

তবে এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তাদের দাবি পোড়া চিনি কর্ণফুলীতে যাচ্ছে না কিংবা গেলেও কোনো ক্ষতি হবে না। এ প্রসঙ্গে এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিন) আকতার হাসান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, “আগুনে পোড়া চিনি কর্ণফুলীতে যাচ্ছে না। এসব নিজস্ব জমিতে ডাম্পিং করা হচ্ছে। আর নদীতে গেলেও তা নদী কিংবা জীববৈচিত্র্যের কোনো ক্ষতি হবে না। কেননা, এখানে কোনো ক্ষতিকারক রাসায়নিক নেই।’

এদিকে, বুধবার কোনো সংবাদকর্মীকে কারখানা এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। গেটের সামনে দায়িত্বরত কর্মচারীরা জানান, কর্মকর্তারা বলে দিয়েছেন যাতে কোনো সাংবাদিক ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *