প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ

প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাতাসে কমে গেছে আর্দ্রতা। প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। সন্ধ্যা-সকাল কুয়াশার চাদর মুড়ে দিচ্ছে চারপাশ। ঘাসের ডগায় দেখা মিলছে শিশিরের ‘মুক্তোর দানা’। হেমন্তের পর প্রকৃতিতে শীতল পরশ নিয়ে এলো পৌষ।

পৌষ ও মাঘ দুই মাস শীতকাল। এই শীতে রূপ লাবণ্যের পাশে রিক্ত প্রকৃতিকে আমরা নতুন করে আবিষ্কার করি। এক অদ্ভুত আচ্ছন্নতা ঘিরে রাখে প্রকৃতিকে। দিনের সূর্য ঢেলে দিচ্ছে মায়াবী রোদ। খালবিল থেকে বর্ষার পানি শুকোচ্ছে। আকাশে ছন্নছাড়া নীল মেঘের ভেলা। কাঁশবনের শনশন শব্দ আর পাখপাখালির কিচিরমিচিরে জনপদ মুখর। গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে মাছ ধরার উৎসব। গ্রামীণ জনপদের আবহাওয়া বলে দিচ্ছে শীত এসেছে।

এ সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করে বলে বাংলাদেশে সূর্যের রশ্মি তির্যকভাবে পড়ে। তাপমাত্রার পরিমাণ কমতে থাকে। রাত বড় আর দিন ছোট হয়। শীতকাল অন্য ঋতুগুলোর চেয়ে একেবারেই আলাদা। নবান্নের ঋতুর হাত ধরেই আসে শীতকাল। মাঠে মাঠে সোনালি ধান গোলায় ভরার উৎসবে মেতে থাকা মানুষের শরীরে লাগে শীতের কাঁপন। আদিগন্ত মাঠজুড়ে হলুদ সরষে ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য।

নতুন ধানের পিঠা-পায়েস নিয়ে সকালের মিঠে রোদ্দুরে পিঠ ঠেকিয়ে রসনা তৃপ্তি শীতের সে এক অন্যরকম অনুভূতি। খেজুরের মিষ্টি রসের হাঁড়িতে পাটকাঠি ডুবিয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েদের চুকচুক করে রস খাওয়ার সেই দৃশ্য আজও বদলায়নি। খেজুরের রস, পাটালি গুড়, কোঁচড়ভর্তি মুড়ি-মুড়কি, পিঠা-পায়েস, খড়-পাতার আগুনে শরীর গরম করা, গমের খেতে পাখি তাড়ানো, লেপ-কম্বলের উত্তাপ, কুয়াশাঢাকা ভোরে ও সন্ধ্যায় আনন্দ-কষ্টের মিশেল নিয়ে আমাদের জীবনে শীতকাল উপস্থিত হয়।

শীতকে কেউ কেউ ‘নীরবতা ও অন্ধকারের অনুভূতি’ বলে প্রকাশ করেছেন। শীতের প্রচণ্ড দাপট কখনো কখনো ক্ষণিকের জন্য আমাদের জীবনকে আড়ষ্ট করে তুললেও বাড়িয়ে দেয় মনের সজিবতা। অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় ঋতু হলো শীত। ষোড়শ শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বলেছেন, ‘পউষের প্রবল শীত সুখী যে জন।/ তুলি পাড়ি আছারি শীতের নিবারণ/ ফুল­রার কত আছে কর্মের বিপাক।/ মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক’ পরবর্তীকালে আধুনিক কবিরাও শীতকালের বন্দনা কিংবা বর্ণনা করেছেন।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন : ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর ওই ডালে ডালে…’ তিনি ‘শীতের প্রবেশ’ কবিতায় লিখেছেন : ‘শীত, যদি তুমি মোরে দাও ডাক দাঁড়ায়ে দ্বারে।/ সেই নিমেষেই যাব নির্বাক অজানার পারে।’ জসীম উদ্দীনের কবিতায় ‘ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে/ সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।’

শীতের অতিথি পাখিরাও আসছে। শীতের পোশাকের বিক্রিবাট্টার ধুম পড়েছে। ঢাকার ফুটপাতে বসেছে নানারকম মুখরোচক পিঠেপুলির পসরা। বছরের অন্যান্য সময় বাজারে টাটকা সবজি কম পাওয়া গেলেও শীতকালে বাজারে প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন শাকসবজি পাওয়া যায়। প্রকৃতিতে শীতের আগমনি বার্তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের পর্যটন এলাকাগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে। শীতের সময়ে চলে পিকনিকের ধুম। শীতকাল উপভোগ্য হলেও এই মৌসুমটাতে নানান রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে ঠাণ্ডাজনিত নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *