পাথেয় ডেস্ক ● প্রতিবন্ধীদের প্রতিভার বিকাশে গত ২০১১ সালের ১লা জুলাই থেকেই প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঠাকুরগাঁওয়ের ফ্রীড মাতৃছায়া অটিস্টিক শিশু নিকেতন স্কুল।
বিদ্যালয়ের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের কেউ বাক প্রতিবন্ধি, কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি, কেউ শারীরিক প্রতিবন্ধি আবার কেউবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। এর পরেও সবাই একত্রিত হয়ে কম্পিউটার ল্যাবে ডিজিটাল পদ্ধতিত্বে পড়াশুনা করছে। কেউবা করছে গানের ক্লাস কেউবা করছে শিখছে আর্ট । অনেকই গরিব পরিবারের সন্তান। প্রতিবন্ধী এসব শিশু কখনও প্রত্যাশাও করেনি তারা লেখাপড়া শিখবে। জীবনে অনেক বড় কিছু হবে। এই ফ্রীড মাতৃছায়া অটিস্টিক শিশু নিকেতন তাদের জন্য দ্বার উন্মোচন করে দেয়াতে তারা এখন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। অনেকে হতে চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার। অনেক দেখছেন অনেক বড় কিছু হবার স্বপ্ন।
স্কুলটি সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রায় ৩৫ জন অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা স্কুল কমিটির সভাপতি তাহমিনা মোল্লা তার নিজ উদ্যোগে প্রতিবন্ধী স্কুলটি চালু করেন। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তাদের ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা। এর পরে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্কুলটির জাতীয়করণ হয়। শিক্ষারমান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ১৭টি ল্যাপটপ দিয়ে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের উদ্বোধন করা হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের আশপাশের ৪ উপজেলার প্রতিবন্ধী শিশুরা এই কেন্দ্রে লেখাপড়া করছে। বর্তমানে এই স্কুলের মোট প্রতিবন্ধি ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩০ জনের মতো। যাদের মধ্যে রয়েছে অটিস্টিক রয়েছে ১১২ জন, বাকপ্রতিবন্ধি ৬৩ জন, বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধি ১১ জন, শারীরিক প্রতিবন্ধী ১৪ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ২১ জন। প্রতিটি শিশুকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া হয় এখানে।
স্কুলের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বিজয় ও তার বন্ধু ইমন তাদের খাতায় লিখে জানান, স্কুলে আসতে আমাদের অনেক ভালো লাগে। আমরা পড়ালেখা করে ইঞ্জিনিয়ার হবো। তাই আমাদের কম্পিউটার চালাতে সাহায্য করছেন আমার ম্যাডাম। আমাদের শিক্ষকরা আমাদের সুন্দরভাবে পড়ালেখা শেখায়। সাবিনা ইয়াসমিন নামে শিক্ষিকা বলেন, এখানকার অনেক শিক্ষার্থী চলাফেরা বা হাঁটাহাঁটি করতে পারে না, কথা বলতে পারে না, কিছু বোঝে না তবু কষ্ট করে হলেও আমরা তাদের শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।
কথা হয় স্কুলে বাঁচ্চাকে নিতে আসা হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে তিনি জানান, আমার ছেলে ১ বছর যাবত এখানে পড়াশুনা করছে। প্রথমের দিকে তার অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলোনা। বর্তমানে সে অনেকটাই সুস্থ। তিনি আরো বলেন, একসময় প্রতিবন্ধীরা সমাজে এবং পরিবারে অনেকটা অবহেলার পাত্র ছিলো। বর্তমানে তা নেই। আমি মনে করি এভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সবাই কাজ করলে সমাজের মাঝে তাদের আর কেউ ছোট চোখে দেখবেনা।স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসহুরা বেগম হুরা বলেন, স্কুলের কক্ষ কম। বর্তমানে যারা আছেন তাদের ক্লাস নিতে আমাদের অনেক সময় হিমসিম খেতে হয়।