পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রথমবারের মতো এক গবেষণায় মানুষের রক্তে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষা করা প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এ থেকে দেখা যাচ্ছে, রক্তের মাধ্যমে প্লাস্টিক কণা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে এবং দেহের ভেতর যে কোনও অঙ্গে জমা হতে পারে।
বিশ্ব জুড়ে প্লাস্টিক দূষণ যে কতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এই গবেষণা ফল সন্দেহাতীতভাবে তার সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ। এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে গভীর সগারের অন্ধকার তলদেশ, কোথা নেই প্লাস্টিক!
ভাবুন তো একবার, আপনার রক্তে ছুটে বেড়াচ্ছে অতি সুক্ষ্ম প্লাস্টিক কণা। রক্তে ভেসে ভেসে সেগুলি আপনার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে যাচ্ছে। মানবদেহের জন্য এটা কতটা ক্ষতিকর তা এখনও জানা যায়নি।
তবে, গবেষণাগারে পরীক্ষা দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানব কোষের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম।
দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার ফলে এমনিতেই কোটি কোটি বস্তুকণা আমাদের দেহে প্রবেশ করছে, যার মধ্যে প্লাস্টিক কণাও রয়েছে। যা প্রতি বছর লাখো মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমাদের কারণেই প্রতিবছর যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে জমা হচ্ছে তাতে পুরো পৃথিবীই আজ মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণে দূষিত হয়ে পড়েছে।
আমরা এখন জানি, প্রতিনিয়ত খাবার এবং পানির মাধ্যমে অসংখ্য প্লাস্টিক কণা আমাদের দেহে ঢুকে পড়ছে। শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক সবার মলেই এখন প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায়।
এবার বিজ্ঞানীরা রক্তের ভেতরও প্লাস্টিক কণা খুঁজে পেয়েছেন। এজন্য গবেষকরা ২২ জন অজ্ঞাতনামা রক্তদাতার রক্তের নমুনা পরীক্ষা করেন। তাদের সবাই প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
এই ২২ জনের মধ্যে ১৭ জনের রক্তেই প্লাস্টিক কণা শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের রক্তে ভেসে বেড়াচ্ছে প্লাস্টিক কণা।
ওই ১৭ জনের মধ্যে অর্ধেকের রক্তে পিইটি প্লাস্টিক কণা পাওয়া যায়। এ ধরনের প্লাস্টিক সাধারণত পানির বোতলে ব্যবহার করা হয়।
এক-তৃতীয়াংশের রক্তে পাওয়া গেছে পলিস্টাইরিন, যেটা খাদ্য এবং অন্যান্য পণ্যের মোড়কে ব্যবহার করা হয়। এক-চতুর্থাংশের রক্তে পাওয়া গেছে প্লাস্টিক ব্যাগ তৈরিতে ব্যবহৃত পলিথিলিন।
গবেষকদের একজন নেদারল্যান্ডসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোটক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক ডিক ভেথাক বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণাতেই প্রথম মানুষের রক্তে পলিমার কণা থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এটা একটি যুগান্তকারী গবেষণা ফল।”
‘‘কিন্তু আমাদের আরও বিস্তারিত গবেষণা করতে হবে এবং পরীক্ষার জন্য নমুনার সংখ্যাও আরও বাড়িয়ে দেখতে হবে কী পরিমাণ পরিমার কণা পাওয়া যায়।”
এ বিষয়ে আরো গবেষণা এরইমধ্যে শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি কতটা উদ্বেগের যে বিষয়ে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অধ্যাপক ভেথাক বলেন, ‘‘নিশ্চিতভাবেই এখানে উদ্বেগের কারণ আছে। রক্তে প্লাস্টিক কণাগুলো রয়েছে এবং সেটি পুরো শরীরে ভেসে বেড়াচ্ছে।”
এর আগে বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মলে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি ১০ গুণ বেশি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, শিশুদের প্লাস্টিকের বোতলে খাবার দেওয়ার কারণে এমনটা হয়।
অধ্যাপক ভেথাক বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত এটাও জানি যে, নবজাতক এবং শিশুরা রাসায়নিক এবং প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এটা আমাকে খুবই দুঃচিন্তায় ফেলেছে।”
নতুন এ গবেষণা প্রতিবেদনটি ‘দ্য জার্নাল ইনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল’ এ প্রকাশ পায় বলে জানিয়েছে ‘দ্য গার্ডিয়ান’।
গবেষক ভেথাক বলেন, ‘‘আমাদের শরীরে কী ঘটছে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। প্লাস্টিক কণাগুলো কী শরীরের ভেতর জমা হচ্ছে? নাকি তারা কোনো নির্দিষ্ট অঙ্গে স্থানান্তরিত হচ্ছে? যে পরিমাণ প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে সেটা কী রোগের ঝুঁকি বাড়াতে যথেষ্ট?
‘‘এজন্যই আমাদের জরুরি ভিত্তিতে আরও গবেষণা করতে হবে যাতে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর পাই।”