প্লাস্টিক বর্জ্য সহজে টুকরো টুকরো করা যাচ্ছে

প্লাস্টিক বর্জ্য সহজে টুকরো টুকরো করা যাচ্ছে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: সারা বিশ্বে দ্রুত বাড়ছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। কোনোভাবেই পৃথিবীকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে থেকে রক্ষার উপায় মিলছে না। আর তাই তো বর্তমানে বিজ্ঞানী আর পরিবেশবাদীদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক বর্জ্য। দীর্ঘদিন ধরেই প্লাস্টিক বর্জ্য ধ্বংস করতে বিশেষ ধরনের এনজাইম নিয়ে কাজ করছেন গবেষকেরা। ২০১০ সাল থেকে গবেষক সিনতাউই সুলাইমান জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্লাস্টিক নিয়ে গবেষণা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি পার্কের পচা পাতার স্তূপ থেকে এলসিসি নামের বিশেষ একটি এনজাইম আবিষ্কার করেছেন তিনি। এনজাইমটির নাম দেওয়া হয়েছে লিফ-ব্রাঞ্চ কমপোস্ট কিউনেস। এনজাইমটির মাধ্যমে প্লাস্টিক ধ্বংস করা যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সিনতাউই সুলাইমান। এ ধারণার পেছনে যৌক্তিক কারণও রয়েছে। একবার নতুন এক জোড়া হেডফোন কেনেন গবেষক সিনতাউই। হেডফোনের প্যাকেটের প্লাস্টিক অংশটি তিনি এলসিসি এনজাইমের সঙ্গে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। এক দিন অপেক্ষার পর প্লাস্টিকে ছিদ্র দেখা যায়। এমনকি পিইটি পলিমার ঘরানার প্লাস্টিকটি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে বেশ দুর্বল হয়ে যায়।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) রিপোর্ট বলছে, বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত প্লাস্টিকের ১০ শতাংশের কম প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহৃত হয়। প্রতিবছর বিশ্বের ৪০ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে। গত দুই দশক ধরে বিজ্ঞানীরা এনজাইমের বিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপায়ের সন্ধান করছেন। বিজ্ঞানী অ্যালাইন মার্টি ও তার দল ফ্রান্সের টুলুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এনজাইম নিয়ে কাজ করছেন। এরই মধ্যে প্লাস্টিকের বন্ধন ভেঙে ফেলতে সক্ষম এনজাইম তৈরিও করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘নতুন এনজাইম পিইটি পলিমারকে ভাঙতে বেশ পারদর্শী। ফলে মুক্তার মালার আদলে প্লাস্টিকও ভেঙে ফেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা এই এনজাইমে ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। আপনি এই এনজাইমকে আণবিক কাঁচি বলতে পারেন। আমরা যেমন মুক্তার মালা থেকে মুক্তা আলাদা করতে পারি, তেমনি এই এনজাইমও প্লাস্টিকের পলিমারকে মুক্তার মতো ভাঙতে পারে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, ভেঙে ফেলা পলিমারগুলো পুনরায় ব্যবহারও করা যায়।’

বিজ্ঞানী অ্যালাইন মার্টি বর্তমানে কার্বিওস নামের একটি বায়োকেমিস্ট্রি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি পিইটি প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণের কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে পলিয়েস্টারযুক্ত কাপড়। পলিয়েস্টার পিইটি প্লাস্টিকের অন্য একটি রূপ। বিশ্বে তৈরি পোশাকের প্রায় অর্ধেকই এই পিইটি প্লাস্টিক ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে। পলিয়েস্টারে তৈরি পোশাক ব্যবহার শেষে বেশির ভাগই পুড়িয়ে ফেলা হয়। কার্বিওস পলিয়েস্টারকে টুকরো টুকরো করে ফেলার কৌশল নিয়ে কাজ করছেন।

শুধু টেক্সটাইল পণ্য নয় দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজও করছে কার্বিওস। ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষায়িত একটি কারখানা চালু করবে যেখানে বছরে ৫০ হাজার টন পিইটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হবে। ফলে বছরে ৩০ কোটি টি-শার্ট বা ২০০ কোটি প্লাস্টিক বোতলের সমান বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করবে কারখানাটি। পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এনজাইম ইনোভেশনের বিজ্ঞানী অ্যান্ডি পিকফোর্ড বলেন, ‘এনজাইমকে পরিবর্তন করে প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কৌশলটি নতুন। আমি বেশ উত্সাহী হয়ে কাজটি পর্যবেক্ষণ করছি।’

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *