সম্পাদকীয় : প্লাস্টিক এমন একটি পণ্য যা সহজে নষ্ট হয় না। পানিতে ফেললেও তা গলে যায় না। মাটিতে মিশে না। ফলে জলে স্থলে সমানভাবে পরিবেশ নষ্ট করে এই প্লাস্টিক। আর মাটির উর্বরতা তো নষ্ট করেই। প্লাস্টিক বর্জ্যরে ভারে নুব্জ আমাদের পরিবেশ, চারপাশ। ধ্বংস করছি আমরা নিজেরাই। তাই নিজেদেরকে সবার আগে সতর্ক হতে হবে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আগামী দিনের শিশুকে রক্ষা করতে এই প্লাস্টিকের বিরুদ্ধেও আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। অন্যথায় মানুষ বাঁচানো যাবে না।
সমগ্র বিশে^ই এখন প্লাস্টিক বর্জ্য বড়ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাটিদূষণ, জলাশয়ের চরিত্র বদলে দেওয়া, পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা, জলজ প্রাণী ধ্বংস করাসহ বহুবিধ ক্ষতি হচ্ছে এই প্লাস্টিক দিয়ে। প্লাস্টিকের এই অবাধ প্রবাহ বন্ধ করা না গেলে আগামী দু-তিন দশকের মধ্যে বিশ্ব এক বিপর্যয়কর অবস্থায় চলে যাবে। বলছেন বিজ্ঞানীরা। বিশ^ব্যাপী প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা শুরু হয়েছে। আশার কথা হলো, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে অনেক ধরনের প্লাস্টিকের দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে সেগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের। আমরা সুন্দরটুকু, চাকচিক্যটুকু খুব সহজে, আন্তরিকভাবে গ্রহণ করি। কিন্তু এর পাশর্^প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের খুব জানাশোনা থাকে। হিসাব মিলিয়ে দেখি না। আমাদের দেশেও সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারিভাবে, ব্যক্তিপর্যায়ে-প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে যে কোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হবে। এমন অবস্থায় একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের প্রধান ও রাষ্ট্রদূত রেঞ্চা টিয়েরিংকসহ ইইউ মিশনের কর্মীরা। তাঁরা গত বৃহস্পতিবার ঢাকার হাতিরঝিল লেক এলাকায় ঘুরে ঘুরে ১০ বস্তা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক-পলিথিনদ্রব্য সংগ্রহ করেছেন।
বাংলাদেশে আইনত পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ; কিন্তু সেটি কাগজে-কলমে। বাস্তবে আমরা বাজারে বা দোকানে গিয়ে এক হালি ডিম কিনলেও তা পলিথিন ব্যাগে দেওয়া হয়। বাসায় নিয়ে পলিথিনটা যেখানে-সেখানে ফেলে দিই। খাদ্যদ্রব্য কিনলেও প্লাস্টিক বা পলিথিনে দেওয়া হবে। যেখানে বসে খাব, সেখানেই ফেলে দেব প্লাস্টিকের কাপ বা ব্যাগ। তা না হলে হাতিরঝিল লেক এলাকায় ১০ বস্তা পলিথিন জমবে কেন? উন্নত দেশগুলোতেও প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রয়েছে। ক্রমেই সেগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। মানুষ তা মেনে চলছে। অনেক দূর হেঁটে গিয়েও নির্দিষ্ট স্থানে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে। কেউ অন্যথা করলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই সচেতনতা কোথায়? আইন মানানোর উদ্যোগ কোথায়?
প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতা এখন ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর প্রধান ভোগান্তি। এর মূল কারণ প্লাস্টিক জমে ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং বৃষ্টির পানি নামতে না পারা। জলাবদ্ধতায় আটকা পড়লে আমরাই গালাগালি করি জনপ্রতিনিধিদের। মূলত দায়, আমার নিজেরও। তখন সাধারণ মানুষ সরকারকে দোষ দেয় আর সরকার যত্রতত্র পলিথিন ফেলার জন্য মানুষকে দোষ দেয়। চলতে থাকে দোষারোপের খেলা। কিন্তু এতে ভোগান্তির কোনো হেরফের হয় না। এটা ঠিক, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান দায় সরকারের। কিন্তু আমাদের দায়ও অস্বীকার করার উপায় নেই। কেন আমরা পলিথিনের ব্যবহার কমাতে পারছি না? যত্রতত্র পলিথিন ফেলার বদ-অভ্যাসটি কেন ত্যাগ করতে পারছি না। ইইউ রাষ্ট্রদূত যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন, আমরা কি তা অনুসরণ করতে পারি না? আমাদের বাসস্থান, আমাদের এলাকা অন্য কারো নয়, আমাদেরই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ইনসার্ট
বাংলাদেশে আইনত পলিথিনের ব্যাগ উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ; কিন্তু সেটি কাগজে-কলমে। বাস্তবে আমরা বাজারে বা দোকানে গিয়ে এক হালি ডিম কিনলেও তা পলিথিন ব্যাগে দেওয়া হয়। বাসায় নিয়ে পলিথিনটা যেখানে-সেখানে ফেলে দিই। খাদ্যদ্রব্য কিনলেও প্লাস্টিক বা পলিথিনে দেওয়া হবে। যেখানে বসে খাব, সেখানেই ফেলে দেব প্লাস্টিকের কাপ বা ব্যাগ।