ফররুখ আহমদ

ফররুখ আহমদ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ত্রিশের কবিদের নিয়ে আমাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। সেই কবিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চল্লিশের দশকে আশ্চর্য সুন্দর নান্দনিক কবিতা যিনি লিখেছেন, তিনিই ফররুখ আহমদ। প্রথম থেকেই ১৮ মাত্রার সনেটে স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন তিনি। মুক্তক ছন্দ, অক্ষরবৃত্ত আর ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্তেও তাঁর দখল ছিল বিস্ময়কর। ফররুখ আহমদের মধ্যে আমরা বিষ্ণু দেকেও কিন্তু খুঁজে পাই। বিষ্ণু-ভক্ত ছিলেন ফররুখ আহমদ।

ফররুখ যখন কবিতা লিখতে শুরু করলেন, তখন গদ্য কবিতাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে মানুষ। কিন্তু ফররুখ গদ্য কবিতার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেননি। তাঁর সমাজতন্ত্রী-বামপন্থী কবিতাগুলোয় গদ্য ছন্দের ব্যবহার নেই। পরিচয়, অরণি, স্বাধীনতা কবিতাগুলোর কথা ভাবলেই এ কথার সাক্ষ্য মিলবে।

মুসলিম পুনরুজ্জীবন ছিল কবি ফররুখ আহমদের আদর্শ। পরের দিকে তাঁর কবিতায় আমরা সেই আদর্শের জয়গানই দেখতে পাই। এ জন্য তাঁকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। তবে তাঁর আদি গ্রন্থ ‘হে বন্য স্বপ্নেরা’ কবির নান্দনিক সত্তাকে উন্মোচিত করেছিল। অবশ্য ‘সাত সাগরের মাঝি’তে একেবারে অন্য এক ফররুখ যেন উঠে আসেন। ১৯৪৩ সালের আগপর্যন্ত বাংলা রেনেসাঁয় বাঙালি-মুসলমানের যোগসূত্র হলেন কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্‌দীন ও ফররুখ আহমদ। এরপর থেকে তিনি কিন্তু ইসলামের ঝান্ডাধারী লেখক।

বালিগঞ্জ হাইস্কুলে ফররুখ আহমদ ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের সহপাঠী। ফররুখের মধ্যে কিটসের প্রভাব ছিল। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, তিনি আকৃষ্ট হয়েছেন ক্ল্যাসিক্যাল বা ধ্রুপদি কবিদের দিকে। মধুসূদন পড়তে বলতেন তিনি। বলতেন মিলটন, এলিয়ট পড়তে। তাঁর লেখা ‘ডাহুক’ বাংলা সাহিত্যের এক অনবদ্য সৃষ্টি। অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর। মধুসূদন থেকে একটানা মুখস্থ বলে যেতে পারতেন আড্ডায়।

আর হ্যাঁ, শিশুদের জন্য ফররুখ আহমদের লেখাগুলোও মনোযোগ আকর্ষণ করার যোগ্য। ‘পাখীর বাসা’ বইটিতে যে কত ধরনের ছন্দের পরীক্ষা রয়েছে, তা যাঁরা পড়েছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন।

১৯৭৪ সালের এই দিনে কবি ফররুখ আহমদের জীবনাবসান ঘটে।

 

সূত্র: আজকের পত্রিকা  

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *