পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানানোয় সৌদি আরবের ক্লাব আল ইত্তিহাদের ফুটবলার করিম বেনজেমাকে অকথ্য কটূক্তি করেছেন ইসরায়েলের ফুটবলার ও লা লিগার সাবেক গোলরক্ষক ডুডু আওতে।
গত গ্রীষ্মে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে আল ইত্তিহাদে যোগ দেন বেনজেমা। গত সপ্তাহ থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চালানো হামলার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন তিনি।
বেনজেমা বলেন, “আমাদের দোয়া গাজার স্থানীয় জনগণের জন্য, যারা ফের অন্যায় বোমাবর্ষণের শিকার হচ্ছেন। যা থেকে এমনকি শিশু এবং নারীরাও নিরাপদ নয়।”
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলায় সোমবার পর্যন্ত ২,৭৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৯,৬০০ জন।
এ ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। বিভিন্ন তারকারাও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। যে অল্প সংখ্যক ফুটবলার এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারমধ্যে একজন বেনজেমা।
অপরদিকে ডুডু আওতে ইসরায়েলি গোলরক্ষক। গত ১১ বছর ধরে স্পেনে রেসিং স্যান্টান্ডার, দেপোর্তিভো লা করোনা ও ২০০৩-২০১৪ সালে রিয়াল মালোর্কার হয়ে খেলেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে হিব্রু, ফরাসি, ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় তিনি অপ্রকাশযোগ্য গালি দেন। পোস্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা যুক্ত করা ছিল।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা করে হামাস। একযোগে পাঁচ হাজার রকেট ছোড়ে তারা। এর অল্প সময়ের ব্যবধানে পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
হামাসের এই হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকাকে “জনমানবশূন্য দ্বীপে” পরিণত করার হুঁশিয়ারি দেন।
এরমধ্যে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের জন্য গাজা সীমান্তে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করেছে ইসরায়েল। এতে গাজায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে গাজার বাসিন্দাদের আবারও ভয়ানক মানবিক সঙ্কটের মুখে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলে স্থল হামলা শুরু করেছে তেলআবিব। তারা হামলায় “সাদা ফসফরাস” ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিন। এতে মানবিক সংকট ও ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় অন্তত ৪ লাখ ২৩ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ১,৩০০ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
জেনেভায় ওসিএইচএর মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন, “সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আরও বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটতে পারে।”
জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, “ইসরায়েলি বিমান হামলা গাজা জুড়ে বাসস্থান, স্কুলে আঘাত করেছে। এমনকি তারা বড় টাওয়ার ব্লক, গাজার স্কুল ও আবাসিক ভবনে হামলা চালাচ্ছেন। এতে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে স্পষ্ট বলা আছে, হামলার ঘটনা ঘটলেও তাতে বেসামরিক জনসংখ্যা এবং বেসামরিক বস্তুকে রক্ষা করতে হবে।”
ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজার হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রবেশ নিশ্চিত করার জন্য একটি নিরাপদ করিডোর করার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের বাসস্থান, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি হাসপাতাল পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। ভয়াবহ খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানি সংকটসহ মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে ফিলিস্তিনিরা।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে দুই ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে হত্যা করেছে।