ফ্যাড ডায়েট কেন ক্ষতিকর?

ফ্যাড ডায়েট কেন ক্ষতিকর?

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : এক মাসেই স্থূলতা কমিয়ে রোগা হওয়াটাই ফ্যাড ডায়েটের মূলমন্ত্র। প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসের বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে দ্রুত ওজন কমানোর পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্যাড ডায়েট।

মূলত দ্রুত ওজন কমানোর জন্য গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে জনপ্রিয় হয়েছে ডায়েটের এই ধরন। কিন্তু এটি বিজ্ঞানসম্মত নয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এই ধরনের ডায়েটকে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে।

ফ্যাড ডায়েটের কথা : ফ্যাড ডায়েটের ইতিহাসে অনেক দিন ধরে রয়েছে অ্যাটকিনস ডায়েট। এতে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিতে বলা হয়। যত ইচ্ছে প্রোটিন ও ফ্যাট খাওয়া যায়। বছর দশেক আগেও মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল অ্যাটকিনস। ‌এখন সেই স্থান নিয়েছে কিটো ডায়েট। আরও আছে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, ভিগান ডায়েট, প্যালিয়ো ডায়েট, মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট ও জোন ডায়েট।

১. এই ধরনের ডায়েটে খুব সহজেই কিছু খাবারকে ‘উপকারী’ ও কিছু খাবারকে ‘অপকারী’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বাস্তবে পূর্ণবয়স্ক মানুষের খাদ্যে সব রকম উপাদানেরই প্রয়োজন রয়েছে।
২. বিভিন্ন খাবার ও ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টকে ‘ফ্যাট বার্নার’, ‘মেটাবলিজম বুস্টার’ আখ্যা দেওয়া হয় এই ডায়েটে। অথচ নিয়মিত ব্যায়াম কিন্তু সবচেয়ে ভালো ফ্যাট বার্নার ও মেটাবলিজম বুস্টার।
৩. সুষম আহারের মধ্যে মূলত পাঁচটি খাদ্যের ভাগ রয়েছে— ফল, শাকসবজি, শস্য, প্রোটিন ও দুগ্ধজাত খাবার। ফ্যাড ডায়েটে যেকোনো একটি খাদ্যের ভাগকে সম্পূর্ণ বাদ দে‌ওয়া হয়।
৪. ফ্যাড ডায়েট মাত্রই ভুল ধারণা। এতে শরীরের ক্ষতি হয়। শর্করা কমিয়ে ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ালে শরীরে কিটোসিস হতে পারে। সম্ভাবনা থাকে ফ্যাটি লিভার হওয়ার। একটা সময়ের পরে বাড়তে থাকে রিভেঞ্জ ইটিংয়ের প্রবণতা।

ফ্যাড ডায়েটে যত ক্ষতি : প্রকৃতপক্ষে ফ্যাড ডায়েট মেনে চললে প্রাথমিক ভাবে যে ওজন কমে, তা আসলে আমাদের দেহের পানির পরিমাণ। এর ফলে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা থাকে। নিয়মিত পুষ্টিসম্মত ডায়েট ও ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানো বেশ কঠিন। আছে আরও বেশ কয়েকটি ক্ষতিকর দিক।

১. হঠাৎ করে খাওয়া কমিয়ে দিলে শরীরে এনার্জির ঘাটতি দেখা যায়। ফলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা যেতে পারে।
২. খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, হঠাৎ করে শুধু ফাইবার খাওয়া বা শুধু মাংস কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা না খেয়ে থাকা, ডেকে আনতে পারে গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যাও।
৩. ফ্যাড ডায়েটের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হলো অপুষ্টি। বিভিন্ন খাবার বাদ দেওয়ার কারণে প্রায়শই ক্যালসিয়াম, আয়রন ইত্যাদির অভাব দেখা যায়।

তাই বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন সুষম আহার। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খাদ্যের সব উপাদান গুরুত্বপূর্ণ। অবৈজ্ঞানিক প্রথায় ডায়েট করলে শরীরের সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে থাকে ধীরে-ধীরে। ওজন কমাতে মাঝেমধ্যে ফ্যাড ডায়েট মানা যেতে পারে, কিন্তু কখনওই এক মাসের বেশি নয়। আর তার জন্য অবশ্যই পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *