বইয়ের শহর; ঢাকা ও বিশ্ব | আদিল মাহমুদ

বইয়ের শহর; ঢাকা ও বিশ্ব | আদিল মাহমুদ

বইয়ের শহর; ঢাকা ও বিশ্ব | আদিল মাহমুদ

১.

‘যে শহরে কোনো ভালো লাইব্রেরি নেই, সে শহরের মানুষেরা অন্ধ।’— এটা চীনের একটি প্রাচীন প্রবাদ। আমাদের ঢাকা শহর ভালো না লাগার হাজারটা কারণ দেখানো যেতে পারে। তবে এটা সত্য, ঢাকা শহরের প্রতিটি অলিগলিতে শোভা পায় বিভিন্ন স্বাদের ও বিভিন্ন মেজাজের অসংখ্য বইয়ের দোকান, সারি সারি পাঠাগার। এখনো বড়সড় বইয়ের বাজার বলতে পল্টন, বাংলাবাজার, নীলক্ষেত, মিরপুর-১০ নাম্বারের কথা মনে আসে সবার আগে। এসব জায়গা গেলেই নাকে খুশবু লাগে বইয়ের গন্ধের।

একসময় ফরাসিরা বিশ্বাস করত, কোন নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের মনন আর রুচির উৎকর্ষ নির্ণীত হয় সেই এলাকায় কতগুলো লাইব্রেরি আছে, তার উপর। আমাদের ঢাকা শহরের এমন কোন এলাকা নেই যেখানে বইয়ের দোকান নেই। এসব দোকান বইপ্রেমি মানুষের একচিলতে শান্তির আশ্রয়, প্রতিদিনের বিশুদ্ধ বায়ুসেবনের এক তৃষ্ণার্ত আহ্বান।

যারা আসলেই বইয়ের মধ্যে ডুবে যেতে পারে তাদের বই পড়ার জন্য স্থান–কাল বিবেচনায় না আনলেও চলে। তবে দিনবদলের হাওয়ায় ঢাকা শহরের বই বিপণন-ব্যবস্থায় এসেছে পরিবর্তন। বৈচিত্র্য এসেছে বইয়ের দোকানেও। সুন্দর পরিবেশ ও বিচিত্র বইয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহ নিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বড় বইয়ের দোকান। যেমন- বাতিঘর, বেঙ্গল বই, পাঠক সমাবেশ, দীপনপুর, পিবিএস, ছাড়াও বই পড়ার মত অনেক অনেক জায়গা চাইলেই খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকার আনাচে কানাচে।

এসব দোকান বইপ্রেমি মানুষের একচিলতে শান্তির আশ্রয়, প্রতিদিনের বিশুদ্ধ বায়ুসেবনের এক তৃষ্ণার্ত আহ্বান।

এসব দোকানে আছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার বইয়ের সংগ্রহ এবং শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা। এছাড়াও বইকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠান, প্রকাশনা উৎসব, সাহিত্য পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান, পাঠচক্র, সাহিত্য আড্ডা দেয়া ও ছোট পরিসরের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার সুযোগও আছে। সপ্তাহের প্রায় দিন বিভিন্ন বয়সী পাঠকের সমাবেশে এই লাইব্রেরিগুলোতে ভিড়বাট্টা লেগেই থাকে।

২.

অনেক আগে প্রথম আলোতে একটি ফিচার পড়ে ছিলাম- কিভাবে যারা বই পড়েন না বা পড়ার সময় পান না, তাদের আবার বইয়ের মোহনীয় জগতে আনতে পারবেন। ফিচারে ১৪টি নিয়ম বলা হয়েছিল যেগুলো মাড়ালে একজন বইবিমুখ মানুষকেও বইপ্রেমি করে তুলে দিতে পারে! নিয়মগুলো সংক্ষেপে নোট করে রেখেছিলাম। এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। হোম কোয়ারেন্টাইনের এই ফ্রি সময়ে চাইলে আপনি বইপ্রেমি হয়ে যেতে পারেন।

এক. সময় তৈরি করুন। প্রতিদিন নিদেনপক্ষে ৫ থেকে ১০ মিনিট পড়ার সময় তৈরি করতে হবে। মানসিকভাবে আপনাকে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যে শত ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি এই ৫-১০ মিনিট প্রতিদিন বইয়ে সময় দেবেন।

দুই. যেখানেই যান, বই সঙ্গে রাখুন। আপনি যেভাবে আপনার ঘরের চাবি, ড্রাইভিং লাইসেন্স সঙ্গে রাখেন, ঠিক সেভাবেই ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আপনি আপনার প্রিয় বইটি সঙ্গে নিয়ে নিন।

তিন. আপনি যে ধরনের বই পছন্দ করেন, তার একটা তালিকা তৈরি করুন। এই তালিকাটি আপনি আপনার ব্যক্তিগত নোটবুক, ডায়েরি অথবা জার্নালে টুকে রাখতে পারেন। এভাবে যখনই আপনি আপনার প্রিয় কোনো বইয়ের নাম শুনবেন, বইটির শিরোনাম টুকে নিন আর জুড়ে দিন আপনার প্রিয় বইয়ের তালিকায়।

চার. নিরিবিলি একটা জায়গা নির্বাচন করুন। প্রচুর বন্ধুবান্ধব, হই-হট্টগোলের মধ্যে বই পড়া সম্ভব হয় না। সে কারণেই আপনি আপনার পছন্দমতো একটা নিরিবিলি জায়গা নির্বাচন করতে পারেন, যেখানে আশপাশে অন্তত কোনো টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা এ ধরনের বিনোদনমূলক কোনো ব্যবস্থা থাকবে না।

পাঁচ. টেলিভিশন-ইন্টারনেটকে জয় করুন। মনে রাখবেন, বই পড়ার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো টেলিভিশন। অবশ্যই নিয়মিত টেলিভিশন দেখবেন, তবে মনে রাখতে হবে, এ নেশা যেন পেয়ে না বসে। কোনোভাবেই টেলিভিশন আর ইন্টারনেটে আসক্ত যেন না হন, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

ছয়. সন্তান ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বই নিয়ে আলোচনা করুন, তাদের বই উপহার দিন আর বইবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের মজাদার তর্কে নিজেকে জড়িয়ে রাখুন। দেখবেন, আপনি নিজেই এই তর্কে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন।

সাত. বইয়ের একটা লগবুক তৈরি করুন। আপনি যেসব বই পড়ছেন, তার আদ্যোপান্ত একটা ছোট্ট ইতিহাস (কখন পড়তে শুরু করলেন, কবে শেষ হলো, বইটির ওপর আপনার মন্তব্য ইত্যাদি) এই লগবুকে টুকে রাখুন।

আট. বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারুন। আপনার প্রিয় বইয়ের খোঁজে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে ঢুঁ মারুন। মনে রাখবেন, শুধু বই কেনার জন্যই আপনাকে বইয়ের দোকানের শরণাপন্ন হতে হবে, তা নয়। বরং দেখবেন, আপনার বইয়ের দোকানে আসা-যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সঙ্গে আপনি আত্মিকভাবে পরিচিত হয়ে উঠবেন। একজন বই পড়ুয়ার জন্য কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নয়. স্থানীয় পাঠাগারের সদস্য হোন। যদি সদস্য হওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে নিদেনপক্ষে সপ্তাহে অন্তত এক দিন হলেও পাঠাগারটিতে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

দশ. আপনার পছন্দসই বই পড়ুন। যে বই পড়লে আপনার ভালো লাগে, শুধু সেই বইগুলোই পড়ার চেষ্টা করুন। আপনার যদি বিজ্ঞান পড়তে ভালো লাগে, তাহলে সাহিত্যের পাতা না উল্টিয়ে আপনি বিজ্ঞানবিষয়ক আপনার পছন্দমতো বিভিন্ন রকম বই-পুস্তক পড়তে পারেন।

এগারো. আনন্দের সঙ্গে পড়ুন। আপনার পড়ার সময়টাকে যত সম্ভব উপভোগ করার চেষ্টা করুন। চা-কফি সঙ্গে রেখে, প্রিয় চেয়ারে হেলান দিয়ে, কম্বল জড়িয়ে অথবা যেভাবেই আপনি নিজেকে স্বতঃস্ফূর্ত মনে করেন, ঠিক সেই আনন্দের মানসিকতা নিয়ে বই পড়ার চেষ্টা করুন।

বারো. আপনি নিজের জন্য একটা অনলাইন ব্লগ তৈরি করতে পারেন। এই ব্লগে আপনি আপনার পঠিত পুস্তক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করতে পারেন। ব্লগে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সবাইকেই আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

তেরো. বই পড়ার জন্য একটি ঈপ্সিত লক্ষ্য তৈরি করুন। প্রতিবছর আপনি ৫০টি বই পড়বেন, এমন একটি ঈপ্সিত লক্ষ্য তৈরি করুন। বছরান্তে আপনি আপনার সাফল্য আর ব্যর্থতার একটা খতিয়ান তৈরি করে আপনি আপনার কাজের মূল্যায়ন করতে পারেন।

চৌদ্দ. প্রতিদিন পড়ুন। প্রতিদিন বই পড়ার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা, পারিবারিক দায়িত্ব, আতিথেয়তা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাদের গার্হস্থ্য-জীবনের অন্যতম এক বড় অংশ। মনে রাখবেন, এই ব্যস্ততার মধ্যে আপনি যদি বইয়ের একটি পাতা না-ও পড়তে পারেন, তবু অন্তত চোখ বুলিয়ে যান। তারপরও প্রতিদিন বই পড়ার জন্য সময় ব্যয় করুন।

৩.

বই ও বইয়ের দোকান নিয়ে এত কিছু বলার পরেও ঢাকা শহরকে কি আমরা বইয়ের শহর বলতে পারি! আমি জনিনা! তবে ঢাকা শহরকে বইয়ের শহর বলা না গেলেও বিশ্বে এমন অনেক শহর আছে; যাদের অনায়াসে বইয়ের শহর বলা যায়। সারাবাংলায় প্রকাশিত একটি ফিচার পড়ে এমন দশটি শহরের সন্ধান পেয়েছিলাম। সংক্ষেপে এই শহরগুলোর পরিচয় নোট করে রেখেছিলাম। চলুন, বইয়ের এই শহরগুলোর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

এক. বেলপ্রাট, স্পেন : স্পেনের কাতালনিয়ার ছোট্ট শহর বেলপ্রাটকে নানাভাবেই আদর্শ বইয়ের নগর বলা যায়। রাজধানী বার্সেলোনা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাতালনিয়ার অ্যানোইয়া অঞ্চলের ছোট্ট সুন্দর গ্রাম। চমৎকার মধ্যযুগীয় আবহে ঘেরা বেলপ্রাটের জনগণ বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের সাদরে আমন্ত্রণ জানাতে সদা প্রস্তুত। কাতালনিয়ার প্রথম বইয়েরও নগর এই বেলপ্রাট। জুনের প্রথম সপ্তাহে শহরের প্রধান উৎসবজুড়ে সাজসাজ রব পড়ে যায়। উৎসব চলাকালীন শহরের অসংখ্য বাড়ি সাময়িক বইয়ের দোকানে রূপান্তরিত হয়। ঢাকা-ঘেরা মার্কেটে স্থাপিত বইয়ের দোকান তো থাকেই। এখানে সেল বা ছাড়ও দেওয়া হয় অনেক বইয়ে—তবে তা শুধু কাতালনিয়ার বইগুলোতে।

দুই. ফন্তেনি-ওল্যা-জ্যুত, ফ্রান্স : স্ট্র্যাসবার্গ থেকে ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমের শহর ফন্তেনি-ওল্যা-জ্যুত শহরটির বুকসিটি হিসেবে পরিচিত হওয়ার আগে সাহিত্য কিংবা প্রকাশনার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না। ১৯৯৪ সালে লেস অ্যামি দ্যু লিভা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই শহরে সৃজনশীল লেখালেখি আর পড়াশোনার সূচনা হয়। ঠিক দুই বছর পর বুক টাউনটির অফিসিয়াল উদ্বোধন করা হয়। এ ব্যপারে ফ্রান্সের সাবেক কৃষিমন্ত্রী ফ্রান্সিস গিলাউম আর ফন্তেনি-ওল্যা-জ্যুতের মেয়র জিন-ম্যারি ভানোতের অবদান অনস্বীকার্য। এখানে আছে ১০টি বইয়ের দোকান আর একটা ক্যালিগ্র্যাফি স্টুডিও। প্রায় দুই দশক ধরে আয়োজন করা হয় লেখালেখির প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি জয়ী লেখকদের লেখা নিয়ে একটা শর্ট বইও প্রকাশ করা হয়।

তিন. গোল্ড সিটিজ, ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনাইটেড স্টেটস : ১৯৯৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় গোল্ড সিটিজ বুক টাউন তৈরি হয়। স্থানীয় অধিবাসী গ্রে স্টলেরি এবং জন হার্ডি হে-অন-ওয়াই ভ্রমণের অভিজ্ঞতায় অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের শহরে বুকসিটি বা বইনগরি শুরু করে। দুটো প্রধান এলাকা গ্রাস ভ্যালি আর নেভাদা সিটি ছাড়াও কাছাকাছি পেন ভ্যালির অস্থায়ী বইবিক্রেতারা, নর্থ স্যান জুয়ান, পাইন লেকের আশপাশে প্রায় ৩০টা বইয়ের দোকান অংশ নেয় এই উৎসবে।

চার. লিলিপুটম্যের, নরওয়ে : ঠিক ধরেছেন, সেই বিখ্যাত গালিভার আর লিলিপুটের গল্পের বই থেকে যেন উঠে এসেছে লিলিপুটম্যের। নরওয়ের এই ছোট্ট গ্রামটা আসলে একটা মিনিয়েচার বা ছোট আকারের ফ্যামিলি অ্যাডভেঞ্চার পার্ক। এখানকার বইবিক্রেতারা শুধু বাচ্চাদের বই বিক্রি করে।

পাঁচ. বিবলো টোয়েন, অসলো : ১০ থেকে ১৫ বছরের বাচ্চাদের জন্য বানানো হয়েছে এই লাইব্রেরি। এখানে ঢুকতে হলে জুতা খুলে নির্দিষ্ট তাকে রাখতে হয়। বয়স্কদের প্রবেশ নিষিদ্ধ এই লাইব্রেরিতে বাবা-মা আর শিক্ষকদের জন্য রেখা টানা আছে, যেটা পার হয়ে ভেতরে ঢোকার অনুমতি নাই বয়স্কদের।

ছয়. মনতেরিজিও, ইতালি : ইতালির তাসকানির মনতেরিজিওর বই বিক্রির হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। জ্যাকোপো দ্য ফিভিজ্জ্যানো ১৪৭১ সালে প্রথম ছাপাখানা বানান এখানে। আর ১৮৯০ সালে প্রথম বইয়ের দোকান চালু হয় মনতেরিজিওতে। এরপর পরবর্তী একশ বছরে স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকেই বই বিক্রি শুরু করেন।

সাত. ওবিদস, পর্তুগাল : পাহাড়চূড়ায় অবস্থিত দেয়ালঘেরা এই ঐতিহাসিক শহরটিতে এখনো মধ্যযুগীয় আবহ বিদ্যমান। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে সে যুগের খোয়ায় মোড়ানো রাস্তা আর ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি। শহরটি পর্তগালের রাজধানী লিসবন থেকে এক ঘণ্টার পথ। শহরটি আগে বাৎসরিক চকলেট উৎসবের জন্য পরিচিত ছিল। এখানেই চেরি থেকে জিনজিনহা নামক এক ধরনের পানীয়ের জন্যও বিখ্যাত এই শহর। হোসে পিনহো নামের এক বইয়ের দোকানের মালিক প্রথমবারের মতো এই শহরকে একটি বুকসিটি বা বইয়ের শহরে রূপান্তরর চিন্তা করেন।

আট. পাজু, দক্ষিণ কোরিয়া : উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের খুব কাছাকাছি অবস্থিত এই শহরে অসংখ্য বইয়ের দোকান, বুক ক্যাফে ও প্রাকশনা সংস্থা রয়েছে। এখানের প্রতিটি বাড়িতেই বই প্রকাশনা, বিক্রি ও কোরিয়ান বইয়ের প্রচারণার কিছু না কিছু কাজ চলে। আড়াইশরও বেশি প্রকাশক রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করছে এই শহর।

নয়. টোরাপ, ডেনমার্ক : ঠিক তথাকথিত বইয়ের শহর নয় এটি। শহরের পুরনো অংশে তিনশ’র মত বাসিন্দা যারা খ্রিস্টপূর্ব এগার শতাব্দি থেকে এখানে পুরুষানুক্রমিকে বাস করছেন। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে শহরের অন্য অংশটিকে ইকো-ফ্রেন্ডলি বা পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে যার নাম Økosamfundet Dyssekilde।

দশ. ব্রেডেফোর্ট, নেদারল্যান্ডস : জার্মানির সীমান্তে নেদারল্যান্ডসের অলটেন অঞ্চলে অবস্থিত ব্রেডেফোর্ট ২০০৩ সালে একটি বুক টাউন বা বইয়ের শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। এখানে প্রায় ৩০ টি বইয়ের দোকান ও বই-সংক্রান্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বুক টাউন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একটি ব্রেডেফোর্ট বুক টাউন। ব্রেডেফোর্টের মধ্যযুগীয় কেন্দ্রকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও শিক্ষক হেংক রুসিংক প্রথমবারের মতো এই বুক সিটি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। হে-অন-উয়াই ফেস্টিভ্যালে ভ্রমণের মাধ্যমে তিনি এমন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাহায্যে তিনি জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের শতাধিক বই বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও বই বিক্রির জন্য একটি নির্দিষ্ট দিন বেছে নেন।

৪.

বইপ্রেমিদের জন্য পড়ার একটি নিরিবিলি জায়গা হলেই হয়। আর নিজের ঘর ছাড়া এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনা আতঙ্কে প্রায় সবাই ঘরে আছেন, বলতে গেলে গৃহবন্দি। তাই এখনই বই পড়ার মুখ্যম সময়। পড়ুন। নিজের জ্ঞানের পরিধি সমৃদ্ধ করুন। মনে রাখবেন, একটা ভালো বই যেমন একটা মননশীল মানুষ তৈরি করে দিতে সাহায্য করে, উন্নত রুচিবোধের খোরাক জোগায়, আবার একটা সভ্য জাতিও তৈরি করে দেয়। ধন্যবাদ।

বইয়ের শহর; ঢাকা ও বিশ্ব ॥ আদিল মাহমুদ ॥ বিশ্ব বই দিবস ॥ বৃহস্পতিবার ॥ ২৩ এপ্রিল ২০২০ ॥ সিলেট ॥

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *