বঙ্গবন্ধুর ‘ইনশাআল্লাহ’ ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নেপথ্য গল্প

বঙ্গবন্ধুর ‘ইনশাআল্লাহ’ ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নেপথ্য গল্প

  • মুহাম্মাদ আইয়ুব

শীত এলেই গায়ে কোট জড়াই। কোট হচ্ছে শীতকালীন ব্যক্তিত্বের যুতসই অনুষঙ্গ। তবে এবার কোট নাই। ইঁদুর ষড়যন্ত্র করে শেষ করে দিয়েছে। তাই অভিমান করে চাদরেই পৌষ পেরিয়ে মাঘে ঢুকেছি। সহকর্মী একজন বললেন, কোট ছাড়া আপনাকে বেমানান মনে হয়। ক্ষণিকের জন্য কথাটা কাঁটা হয়ে বিঁধল। কিন্তু পাই টু পাই বেতনে সাধের কোট কিনি কেমনে? ভালোবাসা আর মনের টানে কেমনে কেমনে জানি কোট একটা কিনেই ফেললাম সেদিন। বউকে চমকে দিতে রাতে নতুন কোটে ঘরে ঢুকলাম। দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে বঙ্গবন্ধু পোজ দিয়ে বললাম- আমাকে কি বঙ্গবন্ধুর মতো লাগছে? গিন্নির সপাট উত্তর, বঙ্গবন্ধুর মুখে দাড়ি ছিল না। একদম চুপ হয়ে গেলাম। খানিক নিরব থেকে বললাম, তবে তিনি কিন্তু দাড়িওয়ালাদের খুব ভালোবাসতেন। একথা মানতে হবে। ইতিহাস বলে বঙ্গবন্ধু নামাজ পড়তেন, কুরআন শুনতেন, হুজুরদের শ্রদ্ধা করতেন, মসজিদ, মাদ্রাসার প্রতি মনের গভীরে ছিল তাঁর বিশেষ অনুরাগ।

বড়দের মুখে শোনা বইয়ের পাতায় পড়া কয়েকটি কথা তোমাকে শুনাই তাহলে-

ফিদায়ে মিল্লাত সাইইয়েদ আসআদ মাদানী রহ. এর কথামতো স্বাধীনতার পর এ দেশের বন্ধ মাদ্রাসাগুলো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই খুলে দেয়া হয়েছিল

কুরআন হাদীস  ও ইসলামী জ্ঞানের প্রচার প্রসারের জন্য বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন

দ্বীনি দাওয়াতের নিরব আন্দোলন  তাবলীগ জামাতের ইজতেমার জন্য টঙ্গীর জায়গা, কাকরাইলের জায়গা তিনিই দিয়েছিলে

তবে মজার আরেকটি অধ্যায় রয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পটভূমি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুনেছ তুমি নিশ্চয়ই। মনকাড়া হৃদয় জুড়ানো সে ভাষণের সবশেষে কিন্তু তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, রক্ত যখন দিয়েছি আরো দিব তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।’ এই যে আল্লাহর প্রতি চূড়ান্ত আস্থা অবিচল ভালোবাসা এটা কে কোন ভাষায় প্রকাশ করবে? বাংলাদেশ স্বাধীনের পিছনে বঙ্গবন্ধুর ‘ইনশাআল্লাহ’ মূল নেয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।  তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন মুসলিম বাঙালি। কথাবার্তায়, চালচলন বা দেশ শাসন সবখানে তাঁর মুসলিম বাঙালি সত্তার ছিল প্রবল উপস্থিতি। বঙ্গবন্ধুর এক ‘ইনশাআল্লাহ’ বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে আল্লাহর প্রতি কতটা অবিচলতা আর বিশ্বাস ছিল বঙ্গবন্ধুর ভাবতেই ভালো লাগে। আমরা তো এ দেশ  পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর ‘ইনশাআল্লাহ’র শক্তিতে।

আমরা তো এ দেশ  পেয়েছি বঙ্গবন্ধুর ‘ইনশাআল্লাহ’র শক্তিতে

আজকাল বঙ্গবন্ধুর বাংলায় মনের কষ্ট জমা হয়ে গেছে পাহাড়সম। এখানে দেশদ্রহী রাজাকার ইসলামের শত্রুরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে বুক ফুলিয়ে। আরো সুখে আছে ধর্মীয় ডাকাত কাদিয়ানীরা। শেষ নবীর নবুওয়াতকে যারা রীতিমতো ডাকাতি করে চলেছে স্বাধীনদেশে গলা উঁচিয়ে।এখানে একটি ব্যাপার স্পষ্ট না করলেই নয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় ত্রিশ লাখ মানুষ শহিদ হওয়ার পেছনেও এই কাদিয়ানীদের হাত ছিলো। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু বলেন ‘আসলে বিষয়টি হল, এই দেশে যে পাকিস্তানি আর্মিরা এসেছিল তাদের কমান্ডে যারা ছিল তারা অনেকেই ছিল কাদিয়ানী। আর কাদিয়ানীরা আমরা যারা সুন্নী মুসলমান তাদেরকে মুসলমান মনে করে না। তারা তাদের হত্যা করা কেবল জায়েজই নয় বরং সওয়াবের কাজ মনে করে! সুতরাং এই সুযোগে তারা যত পেরেছে হত্যা করেছে নির্বিচারে হত্যা করেছে, জ্বালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে -তাই সংখাটি এত বেড়েছে।’  (আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ দা. ,স্মৃতির মলাটে ফিদায়ে মিল্লাত রহ.- পৃ. ২৪)

দেশের সাথে এত বড় গাদ্দারি বেঈমানী করে সেই কাদিয়ানীরা স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়ে এভাবে বীরদর্পে কাজ করে ভাবতে অবাক লাগে। অথচ প্রধানমন্ত্রী গণভবনে যখন ব্রিফিং করেন তখন তাঁর ঠিক পিছনে সোনার হরফে মুসলমানদের কালিমা জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল’ তাহলে কি বুঝলাম, মনেপ্রাণে প্রধানমন্ত্রীর ও একই বিশ্বাস তাহলে তাঁর রাজ্যে কাদিয়ানীরা কেন দম্ভভরে ডাকাতি করে চলে? বিষয়টি ভাববার অনুরোধ রইল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

লেখক: শিক্ষক, অনুবাদক ও মাদরাসা পরিচালক

তাড়াইল ইজতিমার অডিও বয়ান শুনতে ক্লিক করুন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *