বছরে সারা বিশ্বে ৫৯ হাজার লোকের মৃত্যু হয় জলাতঙ্কে

বছরে সারা বিশ্বে ৫৯ হাজার লোকের মৃত্যু হয় জলাতঙ্কে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : প্রতিবছর বিশ্বে জলাতঙ্কে মৃত্যু হচ্ছে প্রায় ৫৯ হাজার মানুষের। এর বেশিরভাগই জলাতঙ্কের ভাইরাস বহনকারী গৃহপালিত কুকুরের কামড়ে।

গত ৮ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর এফএও এবং গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সহযোগিতায় ঢাকার সাভার এবং নরসিংদী পৌরসভায় ‘বাংলাদেশে কুকুরের টিকাদান প্রচারাভিযানের সময় ব্যবহৃত টেকসই কলারের সামাজিক ও মহামারী সংক্রান্ত প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য একটি কেস কন্ট্রোল স্টাডি’ পরিচালনা করে। যা কলারের দীর্ঘমেয়াদী এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করে। এই স্টাডির অধীনে সাভারে এক হাজার ১৪৬টি এবং নরসিংদী পৌরসভায় এক হাজার সাতটি-সহ আট দিনে পর্যায়ক্রমে দুই হাজার ১৫৩টি কুকুরকে জলাতঙ্কের টিকা দেয়া হয় ও মাইক্রোচিপ লাগানো হয়। সাভারের টিকাপ্রাপ্ত কুকুর কলার দিয়ে ও নরসিংদী পৌরসভার টিকাপ্রাপ্ত কুকুর রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এফএও জানিয়েছে, জলাতঙ্ক সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য। মানুষ ও প্রাণি উভয়ের জন্যই রয়েছে কার্যকর এবং নিরাপদ ভ্যাকসিন। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জলাতঙ্কে মৃত্যুর হার বেশি। যার ফলে বার্ষিক প্রায় আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাতঙ্ক শুধু জীবনই নিচ্ছে না, পাশাপাশি অর্থনীতিতেও ফেলছে বিরূপ প্রভাব। সংক্রমণ ঠেকাতে কুকুরের টিকাদান প্রচারাভিযানের মাধ্যমে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ টিকাদান কভারেজ নিশ্চিত করা উচিত। কিন্তু কুকুর টিকাদান প্রচারাভিযানের মূল্যায়ন বা টিকা কভারেজ নিশ্চিত করা বেশ চ্যালেঞ্জিং, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে যেখানে বেশিরভাগই রাস্তার কুকুর।

এফএও টিসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে, রেবিস অ্যাকশন সেন্টার অফ এক্সিলেন্স (আরএসিই) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং জাতীয় ট্রাই-আউট এর মাধ্যমে ৪২ টি দলের মধ্যে সেরা পাঁচটি দল বাছাই করা হয়। বিজয়ী দলের সদস্যরা ২০২১ সালে কুকুর ধরা এবং টিকা দেয়ার ওপর প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পায়। ওই জ্ঞান এবং দক্ষতা কাজে লাগিয়ে তারা জাতীয় পর্যায়ে জলাতঙ্ক নির্মূলে ব্যাপকহারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রমে (এমডিভি) গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পরে টিকা কভারেজ বাড়ানোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের একটি দল জাতীয় দলগুলোকে উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়।

এফএও ওয়ান হেলথ সহযোগী উদ্যোগের অধীনে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, বোহরিঙ্গার ইঙ্গেলহেইম, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের সিডিসি এবং স্থানীয় সরকার এ কর্মসূচিতে সহায়তা করে। চারটি জাতীয় দল কুকুর ধরা, টিকা দেয়া, মাইক্রোচিপ লাগানো এবং অবশেষে কলার বা রং দিয়ে টিকাপ্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিত করে। এই কেস কন্ট্রোল স্টাডিতে ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন এবং কলার ব্যবহার করা হয়। টিকাপ্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিত করা ছাড়া দুই জায়গার স্টাডির মধ্যে অন্য কোনো পার্থক্য নেই। সাভারে টিকাপ্রাপ্ত কুকুর কলার দিয়ে এবং নরসিংদীতে লাইভস্টক রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। দলগুলো শড়নড় টুলকিট এবং অ্যাপ ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করছে।

পরে জাতীয় দলগুলো পর্যায়ক্রমে দুটি এলাকা পরিদর্শন করবে এবং ১১ মাস ধরে টিকাপ্রাপ্ত কুকুর চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি কতটা টেকসই তার ওপর তথ্য সংগ্রহ করবে। কলার পরানো কুকুর সম্পর্কে কমিউনিটিতে মানুষের অভিমত বোঝার জন্য সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রকে নিযুক্ত করা হবে, যারা এ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যানাইন জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে সকল তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে এবং ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *