বন্যায় পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, গতি ফিরবে সেপ্টেম্বর শেষে

বন্যায় পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, গতি ফিরবে সেপ্টেম্বর শেষে

বন্যায় পিছিয়ে যাচ্ছে পদ্মাসেতুর কাজ, গতি ফিরবে সেপ্টেম্বর শেষে

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : পদ্মাসেতুর কাজের গতি থেমে গেছে। করোনাকালেও এর চেয়ে বেশি গতি ছিল কাজে। কিন্তু এবারের বন্যা সেই গতিকে বলতে গেলে থামিয়ে দিয়েছে। পদ্মার পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবং প্রখর স্রোতের কারণে বসানো যাচ্ছে না কোনো স্প্যান। এমনকি নদীতে মূল সেতুর ওপর সড়কপথের কাজও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে চলতি আগস্টেও কোনো স্প্যান উঠানোর সম্ভাবনা দেখছেন না প্রকল্প কর্মকর্তারা।

পদ্মাসেতুর প্রকৌশলীরা জানান, বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তিন চারমাস গত বছরও তেমন কাজ হয়নি। এ সময় পানি বেড়ে যাওয়া এবং ভাঙন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। নদীর পানির গতি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে না বলে স্প্যানও ওঠানো যায় না।

পদ্মাসেতু প্রকল্প সূত্র জানায়, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অন্তত পাঁচটি স্প্যান উঠানোর কথা ছিল। সেখানে এখন পর্যন্ত একটি স্প্যানও উঠানো যায়নি। তবে সেপ্টেম্বর শেষে নদীর পানি কমে যাবে। তখন স্রোতের গতিও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। আর ওই সময়ই সেতুর কাজে গতি ফিরবে।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা নদীর প্রতিকূল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি কমেছে। তবে আগামী বছর সেতু চালু করতে যে ডেটলাইন রয়েছে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করার চেষ্টা করব।’

তবে বাস্তবে সেতুর কাজ অন্তত এক বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। করোনায় প্রথম দফায় গতি ছিল শ্লথ। আর জুলাইয়ের মধ্যে টার্গেট ছিল সব স্প্যান বসানো। কিন্তু সেটিও হয়নি। এখন ডিসেম্বরের মধ্যে সব স্প্যান উঠানো সম্ভব নাও হতে পারে।

সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চায়ানা মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি জানায়, মাত্র ১০ স্প্যান উঠানো বাকি। কাজ সর্বোচ্চ গতিতে চললে প্রতি মাসে তিনটি স্প্যান উঠানো যায়। সে হিসেবে ডিসেম্বরের মধ্যে এই ১০টি স্প্যান খুঁটিতে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন তারা।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেতুর শরিয়তপুরের জাজিরা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩১টি স্প্যান বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি রয়েছে মাওয়া অংশে ১০টি স্প্যান বসানোর কাজ। এরপর পুরো সেতু একসঙ্গে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দেখা যাবে। আর স্প্যানের উপর সড়কপথের কাজ শরিয়পুরের জাজিরা থেকে শুরু হয়ে মাঝ নদীতে চলে এসেছে। এখন এটি মাওয়ার দিকে আসছে।

তবে সেতুর প্রায় অর্ধশত রোডস্লাব নদীভাঙনের কবলে হারিয়ে গেছে । এতে ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতি হলেও এজন্য কাজে বিলম্ব হবে না। কারণ এগুলো প্রি-ক্লাস্ট স্লাব। আবার এগুলো তৈরি করা যাবে। তবে মূল সেতুতে সেপ্টম্বর শেষ হওয়ার আগে কোন গতি আসবে না।

এদিকে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পদ্মা মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৮৯ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। মূল সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান রয়েছে, যার সবগুলো মাওয়ায় এসেছে। এর মধ্যে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এরপর দৃশ্যমান হয়েছে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার। মাওয়া প্রান্তে আর ১০ টি স্প্যান স্থাপন বাকি। এর মধ্যে ৫টি স্প্যান উঠানোর প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
এছাড়া মূলসেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোপওয়ে স্লাবের মধ্যে ৭৫০টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ২৫৬টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপারটি গার্ডারের মধ্যে ১৭১টি স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *