বাংলাদেশকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: মুনতাসীর মামুন

বাংলাদেশকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: মুনতাসীর মামুন

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ‘আমি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিতে চাই যে, আমাদের দেশ হবে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক দেশ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে,শান্তিতে থাকবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই উক্তি উদ্ধৃত করে এক স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘এটাই চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।’

মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতিতে নানাভাবে এটিকেই তিনি রূপ দিতে চেয়েছিলেন। সংবিধানে এই আদর্শগুলোই মূলনীতি হিসেবে প্রতিভাত হয়েছিল। তবে সংবিধানের এই নীতির কথা এখন আর কারও মনে নেই। প্রয়োজন না হলে কেউ সংবিধানের তোয়াক্কা করে না।’

মঙ্গলবার এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে সোসাইটির ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি বক্তৃতা ট্রাস্ট’ ওই স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে। ‘কী চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু?’—শীর্ষক বক্তৃতায় সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সূচনা বক্তব্যে এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিদ্বজ্জনদের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটি সোসাইটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞানচর্চায় কাজ করছে। এ পর্যন্ত সোসাইটিতে ৪৬টি ট্রাস্ট ফান্ড গঠিত হয়েছে। জাতীয় অধ্যাপক নূরুল ইসলাম ২০১২ সালে তাঁর নিজের নামে একটি এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি বক্তৃতা’ নামে একটি ফান্ড গঠন করেন।

মুনতাসীর মামুন তাঁর লিখিত প্রবন্ধে পাকিস্তান আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ভাষা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তার উন্মেষ থেকে স্বাধিকার আন্দোলন হয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন পালাবদল তথ্য-উপাত্তের আলোকে পর্যালোচনার ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আকাঙ্ক্ষার বিশ্লেষণ করেন।

মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের প্রণোদনা জুগিয়েছিলেন। এই প্রত্যয় নির্মাণ করতে তাঁর ২৫ বছর লেগেছিল। মানুষ তাঁকে শর্তহীনভাবে বিশ্বাস করেছিল। তিনি একটি আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর গণতান্ত্রিক বোধ এমন ছিল যে, তিনি সংখ্যালঘিষ্ঠের সঙ্গে জবরদস্তি করেননি। দ্বিতীয় প্রত্যয়টি ছিল জাতীয়তাবাদ, যা দিয়ে তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।’

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানের ধর্ম পালন করবে। হিন্দু তার ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টান তার ধর্ম পালন করবে। বৌদ্ধরাও তার ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নেই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে।’ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। আর সমাজতন্ত্র বলতে তিনি একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন, যেখানে উৎপাদনের ওপরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কিন্তু জনগণের কথা বলার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল সশস্ত্রদের ওপর নিরস্ত্রদের আধিপত্য বিস্তার করা।’

মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সংগ্রামী মানুষ যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা নস্যাতে ভূমিকা রাখেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া তা চূর্ণবিচূর্ণ করে দেন। বাংলাদেশের দর্শন নামে খ্যাত সংবিধানের চার মূল নীতি বাতিল করে দেন। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার চালু করেন এবং সমন্বয়ের রাজনীতির ঘোষণা করে খুনিদের সঙ্গে রাজনীতির প্রক্রিয়া শুরু করেন। পরে জেনারেল এরশাদও একই কাজ করেছেন।’

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক হারুন অর রশিদ বলেন, বাংলা ভাষা, বাঙালি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একসূত্রে গাঁথা। কাজেই বাংলাদেশকে বুঝতে হলে, ইতিহাসে বারবার পর্যালোচনা করতে হবে। গবেষণা করতে হবে। তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণা সত্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

স্মারক বক্তৃতা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন অধ্যাপক মাহফুজা খানম, মেজবাহ কামাল, আশফাক হোসেন, শুচিতা শারমিন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *