মুহাম্মাদ আইয়ুব :: অতি সম্প্রতি চীন আমাদেরকে তাদের দেশে রপ্তানি হওয়া আমাদের বাংলাদেশী ৫১৬১টি পণ্যে শুল্ক না নেওয়ার কথা বলেছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে চীনে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯৭ শতাংশকেই শুল্কমুক্তির সুবিধা দিল বেইজিং। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
এদিকে আমাদের এপ্রাপ্তি দেখে হিংসার অনলে জ্বলতে শুরু করেছে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারত! তাদের আনন্দবাজার পত্রিকা শুল্কমুক্তির ঘোষণার পরদিনই পত্রিকার শিরোনাম করেছে ‘খয়রাতির টাকা ছড়িয়ে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা চীনের’। এই হচ্ছে আমাদের বন্ধুর মধুর আচরণ! ওদের এই শিরোনাম দেখে আমার খুব লেগেছে কারণ আমি বাংলাদেশী। আমি আমার দেশকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি। বাংলাদেশ আছে বলেই আমার অস্তিত্ব আছে, যার দেশ নেই তার আবার কিসের অস্তিত্ব?!
সুতরাং আমার দেশকে কেউ হেয় করুক, লাঞ্চিত করুক, ছোট করুক, গালি দিক এটা আমি আদৌ বরদাশত করতে পারি না। তবে কেউ আমাকে গালি দিলে সেটা সহজে হজম করে ফেলতে পারি। আমার দেশের হাফেজরা যখন আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতায় ৭০/৮০ দেশকে পিছনে ফেলে সেরার মুকুট অর্জন করে বিদেশ থেকে দেশে ফেরে তখন আমি খুব গর্বিত হই কারণ বাংলাদেশ যে জিতেছে।
খেলাধুলার প্রতি আমার নেশা কম। তবে বাংলাদেশ যখন খেলে তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। ঘন ঘন স্কোর দেখি, তামিম আউট হয়নি তো? যাক সাকিব এখনো আছে! মাহমুদউল্লাহ যাতে আউট না হয়! বলে কে রুবেল মামা? একেবারে ভাইঙ্গে দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন এত উত্তেজনা, কেন এত এক্সাইটেড?! কারণ খেলছে যে বাংলাদেশ! আর বাংলাদেশ মানেই তো আমরা ষোল কোটি বাঙালি।
সুতরাং এমন দেশপাগলদের দেশ নিয়ে যদি কেউ তার খয়রাতি পত্রিকায় খয়রাতি ভাষায় খয়রাতি শিরোনাম করে তাহলে কি তাকে ছেড়ে দেওয়া যায় পাঠক? তাই ভারতকে এই যাত্রায় আমি ছাড়তে পারছি না সরি! আমরা কেন খয়রাতি হতে যাব খয়রাতি তো তোমরা। রেললাইনের উপর এখনো রাতের আধারে পায়খানা করে বেড়াও কারণ তোমরা খয়রাতি! একটা টয়লেট দেওয়ার ক্ষমতা তোমাদের নেই! পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ এখনো স্যান্ডেল ছাড়া হাঁটে, কারণ এত বড় খয়রাতি যে, স্যান্ডেল কেনার টাকা নেই! বাড়িতে কেউ আসলে বল, ‘খেয়ে এসেছেন নাকি গিয়ে খাবেন?’ একখানা বিস্কুট দিয়ে বল, ‘পুরোটাই খেতে হবে কিন্তু!’ ইয়া মা’বুদ!!!
আসলে খয়রাত করে খাওয়া যার অভ্যেস সে আবার অন্যকে কি খাওয়াবে?! খয়রাতির চোখে সারা দুনিয়ার সবাই খয়রাতি। আমাদের বর্তমানের জীবনমান তোমাদের থেকে হাজার গুণ ভাল এটা তোমাদের সত্যান্বেষী পত্রিকাগুলো বারবার রিপোর্ট করেছে, তোমাদের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমৃত্য সেন একাধিকবার স্বীকার ও করেছে। তারপরও বলবে আমরা খয়রাতি?!
আমরা মানুষকে খাওয়াতে জানি, সমাদর করতে জানি, তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের আতিথিয়েতার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে কিন্তু তোমরা? তোমরা পেরেছ বিদ্বেষ বাড়াতে, সিমান্তে একের পর এক আমাদের লাশ উপহার দিতে। আন্তর্জাতিকভাবে তোমাদের বন্ধু রাষ্ট্র কয়টা আছে? আমেরিকা, রাশিয়া? ওরা তো তোমার চেয়েও বড় ধান্ধাবাজ। কারণ ওদের অস্ত্র বিক্রি করতে হয় তাই নইলে তুমি ভারত!
তোমার উগ্র আচরণের কারণে উঠতে বসতে কিল ঘুসি, লাত্থি গুতা খেতে। তবে ইদানীং শুরু হয়ে গেছে উষ্ঠা লাথি। নেপালের মত দেশ তোমাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে! আমাদের স্বাধীনতার সময় তোমাদের অবদান আমরা কোনদিন ভুলব না তবে এখন ভুলতে শুরু করেছি। তোমার আচরণ এখন আর বন্ধুর মত নেই, আর কোনদিন ছিল বলে আমার মনে পড়ে না।
স্বাধীনতার সময় যেমন তুমি তোমার স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছ আজও ঠিক দিয়ে যাচ্ছ। তাহলে তুমি আমার কোন কাজে আসলে?! চীন যদি আজ পণ্য রপ্তানিতে ৯৭ ভাগ ছাড় দিতে পারে তাহলে বন্ধু হিসেবে তুমি কি ৫০ ভাগ ছাড়তে দিতে পারতেনা? তুমি তো ছাড় দিলেই না আবার কেউ ছাড় দিলে তখন বলছ খয়রাতি! এ কেমন আচরণ বন্ধু?! এমন দ্বিমুখী ব্যবহার যার তাকে কি বন্ধু বলা সাজে?! আদৌ না। তারপরও যে বলছি? কারণ আমরা কারো উপকারের কথা ভুলে যাওয়া জাতি নই। কিন্তু আসলে বন্ধু হওয়ার যে যোগ্যতা তা তুমি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছ তোমার হঠকারিতা, গাদ্দারি আর ধোঁকাবাজির কারণে।
যাকগে ওসব এমন হানিকর শিরোনাম আর করোনা প্লিজ! বন্ধু বন্ধুর মতো থাক। আর চীনের প্রতি একটু খেয়াল রেখ চেঙ্গিস খানের জাতি ওরা। সবেমাত্র ২০/২৩ জন মেরেছে আরো কতজনকে যে পরপারে পাঠিয়ে দেয় তার কিন্তু হিসাব নেই। সুতরাং আমাদের কথা না ভেবে নিজের চরকায় আগে তেল দাও।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক