করোনাকালের খেলা
বাংলাদেশেও ফিরেছে ক্রিকেট
পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তিন জায়গায় চোখে পড়ল লেখাটা। প্রথমে স্টেডিয়ামের মূল ফটক ২ নম্বর গেটের বাইরে। কালো ব্যানারের ওপর মাঠে ফেরার ঘোষণা। গেটের ওপর দিয়ে স্টেডিয়ামের ভেতরে চোখ ফেলতেই আরেকবার। লম্বা কালো ব্যানার গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদ থেকে ঝুলে পড়েছে নিচের দিকে। সেখানেও ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট।’ শেষবার মিডিয়া গেট দিয়ে ঢোকার মুখে। লাল জমিনে সাদা লেখা, ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট।’
অতিমারি করোনাভাইরাসের বাধায় প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল খেলা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এরপর এক পা, দুই পা করে ফিরতে শুরু করে ক্রিকেট। ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত অনুশীলন দিয়ে শুরু। পর্যায়ক্রমে হলো জুটি বেঁধে অনুশীলন এবং পরে দলীয়। খেলায় ফেরার শুরুটা হয়েছে দুটি দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে। ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেটার আর দলের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা। শ্রীলঙ্কা সফর শেষ পর্যন্ত না হলেও সেটি সামনে রেখে করোনাকালের ক্রিকেটের আবশ্যকীয় শর্ত জৈব সুরক্ষাবলয়ের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে গেছে বাংলাদেশের। এই যে ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট’ বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) খেলায় ফেরার ঘোষণা, সেটি তো সম্ভব হয়েছে এই সবকিছুর যোগফলেই।
রোববার থেকে শুরু তিন দলের বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ তাই শুধু ক্রিকেটারদের নিজেদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা নয়, এটি নিজেই একটি ঘোষণা। করোনাকালে বাংলাদেশে ক্রিকেট ফেরানোর ঘোষণা। প্রস্তুতি ম্যাচের টুর্নামেন্টেও তাই কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকছে। চ্যাম্পিয়ন, রানার্সআপের সঙ্গে অন্যান্য পুরস্কার মিলিয়ে প্রাইজমানিই ৩৭ লাখ টাকার ওপরে। দিবারাত্রির খেলায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আবহ। প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা। প্রেসবক্সে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা। প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে প্রথম ম্যাচটা দেখলেন স্বয়ং বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসানও। শুধু গ্যালারিতেই দর্শক থাকল না। করোনাকালের ক্রিকেটের সেটিও একটি শর্ত।
সংবাদমাধ্যমে গত কয়েক দিনের প্রচারে এই সিরিজ নিয়ে দেশের ক্রিকেটামোদীদের মধ্যে ভালোই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ইউটিউবে লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে ম্যাচ, বিসিবির ফেসবুক পেজে হচ্ছে সরাসরি সম্প্রচার। ফেসবুকে ম্যাচটি ৩৭,৩৬, ৩৫৩ বার দেখা হয়েছে। এসবের মূল উদ্দেশ্য, ‘উই আর ব্যাক ইন ক্রিকেট’ ঘোষণাটাকে দেশের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া।
করোনাকালে প্রথম ক্রিকেট ফিরেছে ইংল্যান্ডে এবং সেটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ দিয়েই। উৎসমুখ খুলে যাওয়ার পর অন্যান্য দেশও তৎপর হয় মাঠে খেলা ফেরাতে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ হয়েছে। এখন তো সংযুক্ত আরব আমিরাতে সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলও হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ তো আর ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া নয় যে করোনাভাইরাসের মধ্যে ডাকলেই অন্যরা এখানে খেলতে চলে আসবে। বাংলাদেশের মতো দেশের নিজেদের প্রমাণের একটা চ্যালেঞ্জ সব সময়ই থাকে।
জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাংলাদেশ সফর করার কথা। দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে বিসিবি সেই সিরিজটিকেই পাখির চোখ করেছে এখন। তবে তার আগে প্রমাণ করতে হবে করোনাকালে বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলাটা নিরাপদ। বিসিবিও পারে অতিমারির শর্ত পূরণ করে খেলা আয়োজন করতে। প্রেসিডেন্টস কাপের পর ছয় দলের করপোরেট ক্রিকেট আয়োজন করে সে কারণেই খেলাটাকে দীর্ঘ মেয়াদে মাঠে রাখার চেষ্টা। এ দুই পরীক্ষামূলক টুর্নামেন্ট ঠিকঠাকভাবে হয়ে গেলে ডিসেম্বরের মধ্যে হয়তো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও মাঠে নামতে দেখা যাবে। তবে সবকিছুরই পূর্বশর্ত-দেশে করোনা পরিস্থিতির আর অবনতি না হওয়া।
বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ বাংলাদেশের অন্যান্য খেলার জন্যও একটা বার্তা। করোনা বিরতির পর ক্রিকেটের বাইরে ছোটখাটো দু-একটি খেলা মাঠে ফিরলেও বেশির ভাগ খেলাই এখনও ‘গৃহবন্দী’। খেলাটা যাঁদের পেশা, গত ছয়-সাত মাসের অবরুদ্ধ পরিবেশে টান পড়েছে তাঁদের জীবন-জীবিকায়। ক্রিকেটের মাঠে ফেরা এই খেলাগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ। যে বিসিবি কয় দিন আগেও বলেছে, ভ্যাকসিন না এলে ঘরোয়া ক্রিকেট নয়, নতুন স্বাভাবিকতার শর্ত মেনে তারাই যখন খেলা মাঠে নামাতে পেরেছে; অন্যরাও পারবে। অন্য খেলাগুলোর জন্য বরং তা আরও সহজ। খেলার ধরন, খেলোয়াড় সংখ্যা, সম্প্রচার, সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ-সব মিলিয়ে ক্রিকেটে সীমিত পরিসরও অনেক বড় পরিসর। অন্য অনেক খেলার জন্যই সেটি নয়।
দেশের সবকিছুই যখন নতুন স্বাভাবিকতার শর্ত মেনে চালু হয়ে গেছে, অতি সাবধানী হয়ে কিছু খেলার খেলোয়াড়দের জীবিকার পথ কেন বন্ধ রাখা!
বাংলাদেশের ক্রিকেটের মাঠে ফেরার ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। ক্রিকেটকে দেখে ‘উই আর ব্যাক’ স্লোগান বেজে উঠুক সব খেলায়।