বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে, বেড়েছে মৃত্যুহার : বিবিএস

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কমেছে, বেড়েছে মৃত্যুহার : বিবিএস

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে। বর্তমানে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ বছর। ২০২০ সালের জরিপে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। তার আগে ২০১৯ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৬ বছর। বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জরিপে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে স্থূল মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৫ দশমিক ৭ জন। ২০২০ সালে ছিল ৫ দশমিক ১ জন। অর্থাৎ মৃত্যুহার বেড়েছে। বর্তমানে পুরুষের গড় আয়ু এখন ৭০ দশমিক ৬ বছর, আর নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ১ বছর। অর্থাৎ পুরুষের তুলনায় নারীদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ভবনে প্রতিবদেন প্রকাশ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনা মহামারির কারণে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কিছুটা কমেছে। তবে পরিসংখ্যানগত দিক থেকে এটাকে কম বলে না।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন। আরো বক্তব্য দেন ডেমেগ্রোফিক অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মাসুদ আলম।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক বছরের নিচের বয়সি শিশুর মৃত্যুহার প্রতি হাজারে মোট ২২ জন, যা ২০২০ ছিল ২১ জন। প্রতিবেদনে দেখা যায়, শহর থেকে গ্রামে ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। পল্লি হতে শহরে স্থানান্তর ৩০ দশমিক ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩ জন। অন্যদিকে শহর হতে পল্লিতে স্থানান্তর আট জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। এক্ষেত্রে শহর থেকে গ্রামে মানুষের ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি পরিবারের (খানা) সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৩ জন। এটি আগের জরিপেও একই ছিল। খানা প্রধানের শতকরা পুরুষের হার ৮৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ পরিবারের প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। যেটি ২০২০ সালে ৮৫ শতাংশ। কিন্তু নারী প্রধানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৫ শতাংশ।

পরিবারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্যাপ এবং নলকূপের খাবার পানি ব্যবহার করে ৯৭ শতাংশ মানুষ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নত উৎস থেকে খাবার পানি ব্যবহার করে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ। নিরাপদ খাবার পানি ব্যবহার করে ৭৩ দশমিক ১ শতাংশ। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে শতকরা ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ। সোলার ব্যবহার করে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার শতকরা ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্মুক্ত স্থানে মল ত্যাগ করে ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

দেশের সাত বছর থেকে তার ওপরে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। ১৫ বছর ও তার ওপরে জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ।

গত বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৭ কোটি ১২ লাখ ৯৭ হাজার জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৬৪ লাখ ৫৩ হাজার জন এবং নারী ৮ কোটি ৬৪ হাজার ৫৪ জন। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের মতো ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। হিন্দুসহ অন্য ধর্মাবলম্বী কমে হয়েছে ১১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। তাই এটি আগামীতে প্রকল্পের আওতায় না করে বিবিএসের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের হাঁড়ির খবর উঠে এসেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *