বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ দল ঢাকায়

বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ দল ঢাকায়

বাংলাদেশ ও উইন্ডিজ দল ঢাকায়

ভুলের মাশুল দিলো বাংলাদেশ

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম :  চরম ও কঠিন ভুলের মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এদিকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফিরেছে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুদল। সিরিজের শেষ ওয়ানডে ও প্রথম টেস্ট খেলতে দুই সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম গিয়েছিল দুদল। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডে জিতে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। তবে একই মাঠে প্রথম টেস্ট অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে যায় টাইগাররা। চোটের কারণে চট্টগ্রাম টেস্টে ইনজুরিতে পড়া সাকিব আল হাসানকে আগামী দুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সংশয় আছে তার শেষ টেস্টে খেলা নিয়েও।

চট্টগ্রামে চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের লক্ষ্য দিয়েও হারতে হবে-এমন ভাবনা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি বাংলাদেশ দল। কাইল মেয়ার্সের ব্যাটে চড়ে সে অসম্ভবকেই কাল সম্ভব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে এটাও ঠিক, বাংলাদেশ দলের কিছু দুর্বলতার সুযোগ নিয়েই অবিশ্বাস্য এই জয় পেয়েছেন মেয়ার্সরা। একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেই দুর্বলতাগুলো।

স্পিনারদের বলে স্পিন কই : কাল টেস্টের পঞ্চম দিনে প্রায় চার শ রান তাড়া করে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। বাংলাদেশ দলের তিন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসানেরই মূলত দায়িত্ব ছিল ম্যাচ জেতানোর। কিন্তু তিনজন মিলে ১১৪.৩ ওভার বল করেও পারেননি ক্যারিবীয়দের অলআউট করতে।

‘পৃথিবীর যে প্রান্তেই খেলা হোক, পঞ্চম দিনের উইকেটে স্পিনারদের জন্য কিছু না কিছু থাকেই’-কথাটা সাবেক পাকিস্তানি স্পিনার সাকলায়েন মুস্তাকের। অথচ কাল স্পিনাররা যেন সাগরিকার উইকেটে কিছুই খুঁজে পেলেন না! বল বাঁক খেলেও গতি ছিল মন্থর। থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানদের জন্য সেই বাঁক সামলানো কঠিন কিছু হয়নি।

এমন উইকেটে দরকার গতি ও ফ্লাইটের বৈচিত্র্য, ক্রিজের ব্যবহার আর নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশ দলের স্পিনারদের বলে এসব কিছুই দেখা যায়নি। টেস্টে মিরাজের বেশির ভাগ সাফল্য এসেছে স্পিন–সহায়ক উইকেটে, এ রকম ফ্ল্যাট উইকেটে নয়। নাঈমও ছিলেন অধারাবাহিক। ঠিক জায়গায় যতক্ষণ বল করছেন, তাঁকে খেলা মুশকিল ছিল। কিন্তু নাঈম প্রায় প্রতি ওভারেই শর্ট বল দিয়ে বাটসম্যানদের বাউন্ডারি মারার সুযোগ দিয়েছেন। তাইজুলই যা একটু চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু একা আর কতই–বা সম্ভব!
সাকিবের শূন্যতা : চোটের কারণে সাকিব আল হাসান না থাকায় বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণটা হয়ে যায় দুর্বল। ফ্ল্যাট উইকেটে ব্যাটসম্যানকে আউট করার কৌশলটা সাকিবের চেয়ে ভালো জানা নেই কারও। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এই শিল্প রপ্ত করেছেন তিনি, যখন ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশ টেস্ট খেলত ড্রর জন্য। অন্যদিকে মিরাজরা ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই খেলছেন স্পিন–বান্ধব উইকেটে। ব্যাটিং–বান্ধব উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আউট করার শিল্পটা যে এখনো শেখা বাকি তরুণদের! তার ওপর এই সিরিজে তাঁদের শেখানোর বা ভুল ধরিয়ে দেওয়ারও কেউ নেই দলে। করোনার কারণে গত মার্চ থেকেই দলের সঙ্গে নেই স্পিন কোচ। এই সময়ে দলের সঙ্গে স্পিন পরামর্শক ডেনিয়েল ভেট্টোরি থাকলে হয়তো মিরাজ–তাইজুলদের পরিকল্পনাটা আরও ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে পারতেন তিনি।

একাকী মুমিনুল : অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর মুমিনুল হক কাল শেষ হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টেই প্রথম পূর্ণ শক্তির দল পেয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরা সাকিব আল হাসান ফিরেছেন। ছিলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমও। কিন্তু প্রথম ইনিংসেই চোটের কারণে সাকিব ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েন। শেষ দিন তামিমও মাঠে ছিলেন না দিনের অধিকাংশ সময়। মুশফিক ছিলেন কখনো ফাইন লেগে, কখনো থার্ড ম্যানে। চাপের মুখে মুমিনুলকে মাঠে বেশ একাই মনে হয়েছে।

ছোট ভুলের বড় মাশুল : চট্টগ্রাম টেস্টজুড়ে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডারদের হাত ছিল পিচ্ছিল। দুই ইনিংসেই উইকেটের আশপাশের ফিল্ডাররা ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। আর পুরো টেস্টেই রিভিউ নেওয়ায় বাংলাদেশ দল ছিল এলোমেলো। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সময় বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ভালোই ভুগিয়েছে বাংলাদেশকে। বড় ক্ষতিটা হয়েছে টেস্টের পঞ্চম দিন। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ম্যাচ জেতানোর দুই নায়ক এনক্রুমা বোনার ও কাইল মেয়ার্সকে রিভিউ নিয়ে ফেরানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্তহীনতায় দুটি সুযোগই হাতছাড়া করে বাংলাদেশ দল।

স্কোরকার্ড

বাংলাদেশ: ৪০৩ ও ২২৩/৮ ডি.
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৯ ও
দ্বিতীয় ইনিংস (লক্ষ্য ৩৯৫ রান)
(৪র্থ দিন শেষে, ১১০/৩; বোনার ১৫*, মেয়ার্স ৩৭*)
রান বল ৪ ৬
বোনার এলবিডব্লু ব তাইজুল ৮৬ ২৪৫ ১০ ১
মেয়ার্স অপরাজিত ২১০ ৩১০ ২০ ৭
ব্ল্যাকউড ব নাঈম ৯ ১১ ০ ১
দা সিলভা ব তাইজুল ২০ ৫৯ ২ ০
রোচ ক অতি. ব মিরাজ ০ ১২ ০ ০
কর্নওয়াল অপরাজিত ০ ১ ০ ০

অতিরিক্ত (বা ১১, লেবা ৪) ১৫

মোট (১২৭.৩ ওভারে, ৭ উইকেটে) ৩৯৫

উইকেট পতন: ৩–৫৯ (মোসলি, ২৪.২ ওভার), ৪–২৭৫ (বোনার, ৯৭.৬), ৫–২৯২ (ব্ল্যাকউড, ১০২.৪), ৬–৩৯২ (দা সিলভা, ১২৪.৩), ৭–৩৯৪ (রোচ, ১২৬.৫)।

বোলার: মোস্তাফিজ ১৩-১-৭১-০, তাইজুল ৪৫-১৮-৯১-২, মিরাজ ৩৫-৩-১১৩-৪, নাঈম ৩৪-৩-৪-১০৫-১।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কাইল মেয়ার্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *