পাথেয় ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাঙালির সব আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরণা ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তার সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোকেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে।
শনিবার দুপুরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার-ডিলিট ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে নজরুলের কবিতা ও গান প্রেরণার উৎসমূল ও শাণিত তরবারি হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, শুধু ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে নয়, পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তার কবিতা ও গান পূর্ব বাংলার জনমানুষকে একটির পর একটি ন্যায্য আন্দোলন, সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত করেছিল।
মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের অন্যন্য প্রতিভার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কবি নজরুল ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, নাট্যকার, নাট্যাভিনেতা, সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সৈনিক। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার বাণী তার বচন ও আচরণে প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাসাহিত্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা সাহিত্যের আকাশে নতুনের কেতন উড়িয়ে ধূমকেতুর মতোই ছিল বিদ্রোহী কবির আগমন। বাংলা সাহিত্যকে তিনি সোনার ফসলে ভরিয়ে রেখে গেছেন।
নজরুলকে সাহিত্যের কবি আর শেখ মুজিবকে রাজনীতির কবি উল্লেখ করে প্রধনামন্ত্রী আরও বলেন, বাংলার ইতিহাসের এই দুজন ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্বের চরিত্রে ছিল দারুণ মিল।
তিনি বলেন, চিন্তাচেতনা ও জীবনদর্শনের দিক থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ও আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবস্থান একই মেরুতে। উভয়েই শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন।
জয় বাংলা কবিতার স্লোগান জাতির পিতা কবি নজরুলের কবিতা থেকে গ্রহণ করেছিলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা ভাগ হলেও রবীন্দ্র-নজরুল ভাগ হয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাঙালিরা ভাগ্যবান যে আমরা রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের মত দুই মহান কবি পেয়েছি। তারা শুধু আমাদের ভাষা, সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকেই সমৃদ্ধ করেননি, তারা আমাদের মূল্যবাধ এবং জীবনাচারণেও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বাঙালির চরিত্রে কোমলতা আর দ্রোহের যে মিশ্রণ তা সম্ভবত এই দুই কবির কাছ থেকে পাওয়া।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নজরুল আমাদের সবার। বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষের প্রাণের অন্তঃস্থলে তিনি রয়েছেন।
তিনি বলেন, সত্যই তো নজরুল ভাগ হয়নি। আর তারই প্রতিফলন কবির নামে পশ্চিমবঙ্গে যেমন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেও তার নামে বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।