বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ বেড়েছে বাসা ভাড়া

বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে কয়েক গুণ বেড়েছে বাসা ভাড়া

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম: ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার অংশগ্রহণকারী স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়নের মালিক-কর্মচারীরা আবাসনসংকটে পড়েছে। বাণিজ্য মেলার আশপাশে বসতবাড়ি কম থাকায় চাহিদামতো বাসাভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোথাও পাওয়া গেলেও বাড়ির মালিকরা আকাশচুম্বী ভাড়া চাচ্ছেন। ফলে অনেকেই মেলা শেষে বাধ্য হয়ে রাতে ঢাকায় ফিরছেন। এদিকে বাণিজ্য মেলায় অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গৃহস্থালি পণ্যের চাহিদা বেশি। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। এসব পণ্য ১০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকার মূল্যের হয়। নারীদের পছন্দ গৃহস্থালি ব্যবহারের পণ্য। ভারতীয় দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের গৃহস্থালি পণ্য বিক্রি হচ্ছে দেদার।

রাজধানীর পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তৃতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এর আগে আগারগাঁওয়ে শেরেবাংলা নগর মাঠে এই মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এখন পূর্বাচলে হওয়ায় মেলায় অংশগ্রহণকারী স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়নের মালিক-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা হচ্ছে। পূর্বাচল উপশহর এখনো গড়ে উঠেনি। ফলে বাণিজ্য মেলার সময় আশপাশের এলাকায় বাড়িভাড়ার জন্য বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়।

বাণিজ্য মেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম গোয়ালপাড়া, ফুলবাড়িয়া, দক্ষিণবাগ, হিরনাল, কালনী, ইউসুফগঞ্জ, শিমুলিয়া, গুতিয়াবো, বেইলারটেক, মধুখালী, পিতলগঞ্জ, কেয়ারিয়া, হারিন্দা, বাঘবেড়সহ আশপাশের এলাকায় মেলার স্টল মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চড়া মূল্যে ভাড়ায় থাকতে হচ্ছে। সুযোগ পেয়ে বাড়ির মালিকরাও বেশি ভাড়া আদায় করছেন। মেলার আগে যে ফ্ল্যাটের ভাড়া ছিল ৫ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে। সেই ফ্ল্যাটে এখন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় ভাড়া হচ্ছে। তা-ও পরিচিত ব্যক্তির সুপারিশ ছাড়া ভাড়া মিলছে না। স্টল ও প্যাভিলিয়নের বরাদ্দপত্র নিয়ে নিশ্চিত হয়েই বাড়ির মালিকরা ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া দিচ্ছেন।

হাতিল ফার্নিচারের সহকারী ব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম বলেন, পূর্বাচল উপশহরের ঘরবাড়ি নির্মাণ হয়ে গেলে এ সংকট থাকবে না। দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের বিক্রয় প্রতিনিধি শ্রী রমেশ কান্ত সরকার বলেন, ঢাকা থেকে ভোরে মেলায় আসা ও রাতে বাসায় ফিরে যাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই তুলনামূলকভাবে ভাড়া একটু বেশি হলেও মধুখালী এলাকায় তাদের প্যাভিলিয়নের অনেকেই বাসাভাড়া নিয়েছেন। ভিসতা ইলেকট্রনিকসের পরিচালক চিত্রনায়ক ইলিয়াছ কাঞ্চন বলেন, পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় মেলার প্যাভিলিয়নের কর্মচারীদের অনেকেই এখন ঢাকায় বসবাস করলে মেলায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে পারেন। ভারতীয় কাশ্মীরি শীতবস্ত্র স্টলের মালিক নিতাই চক্রবর্তী বলেন, শিমুলিয়া এলাকায় দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাট বাসা তিনি ৩৩ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছর স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ মূল্য অনেক বাড়ানো হয়েছে। বেড়েছে কর্মচারীদের বেতনও। সব খরচের পর মেলা করে আর্থিকভাবে কতটা লাভবান হওয়া যাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে তিনি লাভের আশাবাদী।

মুড়াপাড়া এলাকা থেকে সপরিবারে আসা গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, বাণিজ্য মেলায় কয়েক দিন আসা হয়। প্রতিদিনই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করি। তবে গৃহস্থালি পণ্য সব সময়ই কেনা হয়। এগুলো টেকসই ও মজবুত।

গুতিয়াবো এলাকার বাড়ির মালিক আব্দুল আজিজ ইত্তেফাককে বলেন, পূর্বাচল উপশহরের প্লটে ঘরবাড়ি নির্মাণ হলে আবাসনসংকট থাকবে না। এছাড়া সারা বছর আমাদের ফ্ল্যাট খালি থাকে। সারা বছরের বাড়ির খরচ মেটানোর জন্যই মেলার সময় বাড়িভাড়া কিছুটা বেশি নেওয়া হয়। বাড়ি ভাড়া বেশি নিলেও ভাড়াটিয়াদের সব সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ৩০০ ফুট সড়ক নামে পরিচিত ঢাকা-কুড়িল-কাঞ্চন সড়ক তথা, শেখ হাসিনা সরণির নির্মাণকাজ শেষ করা হয়েছে। সৌন্দর্য ও মনোমুগ্ধকর এ সড়কে চলাচল এখন আরামদায়ক। মাত্র ১৫ মিনিটে ঢাকার কুড়িল থেকে বাণিজ্য মেলাপ্রাঙ্গণে আসা যায়। পূর্বাচল উপশহরের অভ্যন্তরীণ সড়কও চলাচলের উপযোগী। সে কারণে এবারের বাণিজ্য মেলা দিনদিন জমে উঠছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *