বাবার চোখে জল

বাবার চোখে জল

বাবার চোখে জল

মুহাম্মাদ আইয়ুব ❑ সাদাসিধের যদি কোন সমার্থ শব্দ থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে বিলাস পুরের শহর মিয়া। আর গ্রাম্য সহজ সরল শহর মিয়ার হৃদয় খোলা সারল্যমিশ্রিত হাসিই তার সাদাসিধে পরিচয়টা প্রবলভাবে মেলে ধরে।

নাতিপুতি দিয়ে আশপাশ বোঝাই থাকলেও কুচকুচে তিনটি ছাগলই তার সবসময়ের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। নাতিনাতকুরের সব আদর এরা একাই দখল করে নিয়েছে।

প্রবল বাতাস ও ঝড়ো হাওয়ার সন্ধ্যেয়ও শহর মিয়া এদের জন্য কোটা দিয়ে গাছের কচি কচি ডাল কটাৎ কটাৎ করে ভাঙ্গে, ভরদুপুরে গলা পানি দাপিয়ে বিল থেকে সযতনে জলজ লতাগুল্ম কেট নিয়ে আসে আদুরে কালো মানিকদের জন্য। শহর মিয়া স্বপত্নীক তার ছোট ছেলে শবে বরাতের ঘরে থাকতেই সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ শহর আর শবে বরাত উভয়ের মানসিকতা একই ধাতুতে গড়া, এখানে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ বা আরবের লু হাওয়ার অনধিকার চর্চা চলে না। তাই শহর মিয়া দম্পতি শবে বরাতেই শান্তি খুঁজে পায়।

বদরুল সাহেব শহর মিয়াকে তার ফোকলা দাঁতের হাসির কারণেই বেশি ভালবাসেন। তাছাড়া উত্তরপাড়ায় সেই অতি নিয়মিত মুসল্লি। প্রায়সময় সোৎসাহে ঝাড়ু হাতে মসজিদটাকে ঝাঁট দেয়। মসজিদের গামছাগুলোও প্রায়সময় সে ধুয়ে ফকফকা বানিয়ে রাখে। কি আশ্চর্য! এ সময়েও তার অমায়িক হাসিতে কোন ভাটা পড়ে না!

বদরুল সাহেব আনমনে ভাবেন শান্তির পতনোন্মুখ এ যুগেও কি সুখের জীবন ব্যাটার! বেশ কয়েকদিন যাবত বদরুল সাহেব দেখলেন শহর মিয়া নামাজে অনিয়মিত, ফোকলা দাঁতের হাসিতে নেই ঐতিহ্য, নিশ্চিত ফোকলায় কেউ নগ্ন থাবা বসিয়েছে।

চেহারা দেখেই বোঝা যায় সপ্ত আসমান একই সময় তার সরল মুখখানার উপর আচমকা ভেঙে পড়েছে! একদিন বিকেলে বদরুল সাহেব শহর মিয়াকে তার রুমে নিয়ে গেলেন। বড় ভক্তি আর শ্রদ্ধা জড়িত কন্ঠে সম্বোধন করলেন চাচা! মনে হয় মনে সুখ নেই, ব্যাপারটা কি? একবুক হতাশা আর অভিমান নিয়ে বললেন হুজুর! কি বলতাম?! আমরার কি সেই মুখ আছে? শবে বরাতকে নিয়ে আমরার বড় আশা আছাল, স্বপন আছাল। আমরা কায়া না কায়া তারে মানুষ করার কথা ভাইবাআছালাম।

অন্য ফুলাফাইনরে মানুষ করতে যে ছরম দিছি হের লাগি এর ডাবল করছি, বহু কষ্টে মাইনশের হাতে ফায়ে ধইর‌্যা হেরে কুয়েত পাঠিয়েছি অথচ আজ এই শব বরাইত্যা বউয়ের কথায় আমরারে ছাইর‌্যা শশুর বাইত্যে চইলা গেল! ঘরজি থাইকব তারফরও আমরার সাথ থাইকব না! আমরা বুরাবুরি এই বয়সে কি করাম কি কায়াম?! তাই মনডা আগের মতন বালা না।

বদরুল সাহেব লক্ষ্য করলেন শহর মিয়ার চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু বিদ্রোহী অশ্রুর মিছিল, গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায় আছে। কি আশ্চর্য! শহর মিয়ার চোখে জল?! শবে বরাতের বাবার চোখে জল!! এ ও কি সম্ভব??? শকুনদের এই মর্ত্যে আজ বোধহয় সব ই সম্ভব। এখানে আলিশান বিল্ডিং দেখে কেউ স্বামী সন্তানকে ফেলে দেয় কেউবা আবার কারো রূপের ধাক্কায় বিশ বছরের সংসারকে তছনছ করে ছাড়ে। সেখানে বউয়ের কথায় মা-বাবা ত্যাগ করা তো পানি ভাত। আজ সবখানেই সেই পানি ভাতের হোলি উৎসব!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *