বালাগাল উ’লা বি-কামালিহী, কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহী

বালাগাল উ’লা বি-কামালিহী, কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহী

  • ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ

হাবীবে খোদা রাসূল কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন হচ্ছে ইনসানে কামিল বা মানবতার পরিপূর্ণ রূপায়ন। সকল সৃষ্টির প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ, এর তুলনা কখনো সম্ভব নয়। মানুষের কল্যাণকামীতায় পরিপূর্ণ ভরাট ছিল তাঁর মন। তাঁর পবিত্র হৃদয়ের সারাটা জুড়েই ছিল সমস্ত সৃষ্টির প্রতি খায়ের-খাহীর ব্যঞ্জনায় আপ্লুত। মানুষের দুঃখে ব্যথা পেতেন নিজের চেয়েও বেশী। কি বিপুল আকুলতায় অতিন্দ্রিয় মনের আবেগ তাড়নায় জীবনের সব আকাংখা চাওয়া-পাওয়া কেন্দ্রীভূত করেছিলেন কল্যাণকামীতাকে ঘিরেই। কি করে সকলের কল্যাণ হবে, উচ্ছ্বল হয়ে উঠবে সকলের হামেশার যিন্দেগী, হিদায়েতে অভিসিক্ত হয়ে উঠবে জীবন কানায় কানায়, আল্লাহর বান্দা হিসেবে পরিবর্তিত হয়ে উঠবে সকলেই, এর জন্যই মাঠে মাঠে মরু বিয়াবানে-‘উকাজ’ বাজারের গলিতে গলিতে দেখা গেছে তাঁকে। এমনকি তাঁর এই প্রবল আকুতির জোয়ারের মাঝে আল্লাহ তাআলা স্নেহার্দ্র ইতাব করেছেন। বলেছেন, ‘লায়াল্লাকা বাখিউন নাফসাকা’, আপনার জান কি হালাক করে দিবেন হে রাসূল! কেন এরা হেদায়াত গ্রহণ করছে না এই দুঃখে।

সারা আলমের রহমতের ধারা বইত তাঁর সব কিছুতেই। তাঁর চাওয়া ছিল রহমত, উঠা বসা ছিল রহমত, কথা ছিল রহমত, ধরা ছিল রহমত। কারণ তিনি তো ছিলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন। তাঁর আশ্রয়ে নির্মম শত্রু ও পেত সুশান্ত আশ্বাস। কাছে আসলেই হতাশামুক্ত বিমল প্রশান্তির অনুভূতিতে ভরে উঠতো সকলের মন। তাঁর মাঝেই পেতো জীবনের নয়া অর্থ।

আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখি-হিজরতের মতো কঠিনতম সময়েও ঘাতক কুরাইশদের আমানত পৌঁছে দেয়ার জন্যই কেবল প্রিয়তম ভাই হযরত আলী রা. কে জীবনের ঝুঁকির মাঝেও রেখে যাচ্ছেন ঘরে। আমরা হলে ইসলামের নামে কি করে এ আমানত আত্মসাত করা যায় এর হাজারো অজুহাত খুঁজতাম। মালে গনীমত হিসেবে অনেকের পকেটস্থ হতো তা। হয়তো এ-ও মনে করতাম কাফেরদের হাতে এ সম্পদ পৌঁছলে তারা কুফরীর কাজে ব্যয় করবে। সুতরাং ইসলামের রাহে ব্যয়ের জন্য এগুলি আমার সাথেই নিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু নবীজী ছিলেন তো বিশ্বস্ততার সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত। কিয়ামত পর্যন্তের জন্য আমাদেরকে দেখিয়ে গেলেন ইসলাম অত্যন্ত সহজ ও সরল উপলব্ধির নাম। খোড়া অজুহাত তোলার অবকাশ নেই এতে।

আজকের হানাহানী, সংঘাতময় পৃথিবীর অশান্ত মানব সমাজ খুঁজে ফিরছে একটি আশ্রয়কেই। আজকে কারো কাছে গিয়ে কোনো আদর্শে তৃপ্তি পাচ্ছে না, ভরসা পাচ্ছে না কেউ। যেখানেই যায় অগ্নিকুণ্ডের উষ্ণ হলকার তোড়ে ছিটকে পড়তে হচ্ছে।

মানবতার এমন কোন রূপ নেই যার শ্রেষ্ঠতম ও সুন্দরতম নমুনা ছিলেন না তিনি। প্রেম, ভালবাসা উদারতা, সাহসিকতা, নেতৃত্ব, সততা, সত্যবাদিতা, সরলতা, নিরাড়ম্বরতা এমন কোনো গুণ নেই যার পরিপূর্ণ বিকাশ তাঁর মাঝে ছিল না। গুণ ও রূপ সৌন্দর্যের যে কোন আঙ্গিকেই তাঁর জীবনকে পর্যালোচনা করা যায় না কেন, সেখানেই পাওয়া যায় পূর্ণতম বিকাশ। তায়েফের কঠিন অবস্থার মুহূর্তে তিনি যেমন ছিলেন উসওয়াতুন হাসানা উচ্চতম শিখরে, মদীনার খেজুর পাতায় ছাওয়া শান্ত গৃহ কোণেও তাঁর আসন ছিল সেইখানেই। দরিদ্র, পীড়িত, শোষিত নির্যাতিত আর্ত বিক্ষুব্ধ মানুষ তাঁকে পেয়েছিল সকল ক্ষেত্রে সকল কাজে রাহমাতুল্লিল আলামীন রূপেই ।

আজকের হানাহানী, সংঘাতময় পৃথিবীর অশান্ত মানব সমাজ খুঁজে ফিরছে একটি আশ্রয়কেই। আজকে কারো কাছে গিয়ে কোনো আদর্শে তৃপ্তি পাচ্ছে না, ভরসা পাচ্ছে না কেউ। যেখানেই যায় অগ্নিকুণ্ডের উষ্ণ হলকার তোড়ে ছিটকে পড়তে হচ্ছে। সবখানে হিংসা, বিদ্বেষ, চক্রান্ত, রেষারেষী ও অশান্তির আবহ। আস্থা আনতে পারছে না কোথায়ও। আজ চাই ‘উসওয়াতুন হাসানা’ মায়াময় স্মিত হাসি, যাঁর কাছে জুড়াবে এই মন, এই প্রাণ, আস্থার পেলব সুখময়তার জুড়াবে সকল তাপ। গড়ে উঠবে ব্যক্তি, পরিবার, রাষ্ট্র, সমাজ। আজ সেই যাত কই? সেই মহানতম সত্তা কই? দিকে দিকে তাঁরই একান্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুন: উদ্ভাসিত রেখায়িত চিত্রের সমক্ষে

নবিজীর শানে গাওয়া জুনায়েদ জামশেদের ‘ইয়া হাবিবী’ নাতটি শুনুন।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *