পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম (অনলাইন ডেস্ক) : ইশতেহার শব্দটির একটি ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে। আছে দারুণ তাৎপর্য। নির্বাচন এলে মাঠে মাঠে কত নেতা কত কর্মী কত ধরনের আগাম ঘোষণা দিয়ে থাকেন। যেগুলো তারা নির্বাচিত হলেই করে দেবে বলে প্রতিশ্রতি দেয়। বক্তি বা প্রার্থী যত খারাপই হোক না কেন তিনিও প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুত কাজ বাস্তবায়িত হয় আবার কখনো হয় না। এই না হওয়ার গল্পটার সঙ্গে এ দেশের মানুষের পরিচয় আছে যথেষ্ট। প্রত্যেক দলই দেশের জন্য মানুষের জন্য তারা কী করবে- এই তথ্য জানিয়ে একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। অনেক দল ইশতেহার ঘোষণা দিয়েও নতুন নতুন চমক নিয়ে আসতে পারে। এবার যেমন বিএনপি ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য বেতনের ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তারা তো এর আগেও ক্ষমতায় ছিল তা তারা করতে পারতো। স্বাধীনতার অর্ধবার্ষিকী উদযাপনের আর কিছু দিন বাকি আছে। এখনো এই সিদ্ধান্ত কেউ নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য এই ইমামদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের জন্য একটা ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। দিয়েছেন তাদেরকে সরকারি চাকুরিও। চমকের উপর কিন্তু চমক জরুরি। না হলে জনগণ পাবে কি?
আমরা জানি, ইশতেহারে রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতিফলন ঘটে। নির্বাচনে জেতার পর তারা কী করতে চায়; সরকার গঠন করে কিভাবে তারা ব্যক্ত অঙ্গীকার ও প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চায়-এসব বিষয় ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বাস্তবায়ন সম্ভব এবং নতুন কিছু অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা আরো বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব। ব্লু ইকোনমি ও সমুদ্রসম্পদের আহরণ ও উন্নয়ন নতুন বিষয়। জাতীয় উন্নয়নে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। এখন তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করে এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায় তারা। তবে দক্ষ জনপ্রশাসন ও জনহিতৈষী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলার বিষয়ে সন্দেহ করা যায়। জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা আকাশকুসুম কল্পনা নয়। নারী ও পুরুষের সমান মজুরি সমর্থনযোগ্য। নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার পরিসর বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করার কথাও বলা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় এখনো তারাই অগ্রবর্তী।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। এটা কথার কথা না হয়ে থাকলে ভালো উদ্যোগ বলতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। ফ্রন্টের মূল দুই শরিকের অতীতের ভূমিকা খেয়াল করলে এ অঙ্গীকারে আস্থা রাখা কঠিন। সামরিক ও পুলিশ বাহিনী ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরির বয়সসীমা তুলে দেওয়ার কথা এ মুহূর্তে বাস্তবসম্মত মনে হয় না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন ও সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি নতুন বিষয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা নয়, সংশোধন করাই নাগরিক সমাজের দাবি। গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রস্তাবটি ভালো। সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন কমানো ও সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম ২০ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। প্রাদেশিক সরকারের যৌক্তিকতা পরীক্ষা করে দেখবে তারা। বেকার ভাতা চালুর অঙ্গীকার অতি মনোরঞ্জনী বিষয় বলেই মনে হয়। সব দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে কার্যকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার থাকবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাসউদুল কাদির