পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগে মোট বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। আসছে অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৮ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা বেশি।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বক্তব্যে একথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, ডুয়েল ফুয়েল, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পটুয়াখালি জেলার পায়রা, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত পাওয়ার হাবসমূহে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে জীবাশ্ম এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। আরও ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া, সরকার মোট ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কূটনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমেও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ আসবে নেপাল থেকেও। ভুটান হতে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত পর্যায়ে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এছাড়া, ২০৪১ সালের মধ্যে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ আমরা পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হতে সংগ্রহ করতে চাই। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিমি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছি। এর ফলে, সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ বর্তমানে ১৪ হাজার ৬৪৪ কিমি এ উন্নীত হয়েছে। এছাড়াও কমেছে সিস্টেম লস।
জ্বালানি খাত সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। ভারতের শিলিগুড়ি মার্কেটিং টার্মিনাল হতে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এর মাধ্যমে ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল স্বল্পসময়ে বাংলাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দেশের একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধনের ধারণ ক্ষমতা উন্নীত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার, স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ভোলা জেলার ইলিশা গ্যাস ক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কার হয়েছে। তেল ও গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। আশা করছি, এসব কূপ খনন শেষে দৈনিক অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। সমুদ্র অঞ্চলেও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলমান আছে। জ্বালানির বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য তরলীকরা প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি ও স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়া, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। গ্যাসের পাইপলাইন বৃদ্ধির পাশাপাশিএর অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
কয়লা সম্পর্কে বলেন, দেশে এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৫টি কয়লা ক্ষেত্রের মজুদ করা কয়লার পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার ৮২৩ মিলিয়ন টন। এর মধ্যে কেবল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করা হয়। খনিটির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক ৮ লক্ষ মে. টন। দেশের কয়লা ক্ষেত্রসমূহ হতে কয়লা সংগ্রহের কারিগিরি ও অন্যান্য সম্ভাবনা যাচাইয়ের কাজ চলছে।