পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : কেনাকাটায় অনিয়ম এবং অডিট আপত্তি নিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে জ্বালানি তেলের দাম শিগগির সমন্বয় করা হবে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানিয়েছে কমিটি।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে বিপিসির কার্যক্রম নিয়ে আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়। কমিটি সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ওমর ফারুক চৌধুরী, মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং জিল্লুল হাকিম বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, বিপিসিতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা খুবই কম। অনিয়মের যা চিত্র তাতে আমরা শকড্। কেনাকাটায় অনিয়ম আছে। অডিট আপত্তিও আছে। এসব আপত্তি ঠিকমতো নিষ্পত্তি করা হয়নি। দুদকেরও কিছু কথা তারা শোনেনি।
তবে বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বিপিসির অনিয়ম নিয়ে কার্যসূচি থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিপিসি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বিপিসিতে প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।
বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করতে এ দাম বাড়ানো হয়েছে।
আ স ম ফিরোজ বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। আমরা মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়েছি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা দাম বাড়িয়েছে। তা না হলে তেল এদিক-সেদিক হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল্য সমন্বয় করা হবে বলে মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে।
রাশিয়া থেকে সরকারি পর্যায়ে জ্বালানি তেল আমদানির চিন্তা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু প্রস্তাব এসেছে। তবে সরকার চাচ্ছে জি টু জি পদ্ধতিতে আমদানি করতে। মন্ত্রণালয় আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। রাশিয়ার ক্রুড অয়েল রিফাইন করার প্রযুক্তি আমাদের নেই। এ কারণে রাশিয়া থেকে রিফাইন অয়েল আমদানি করা হবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিশেষ অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার পরেও বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত করেনি বিপিসি। যা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। অডিট দপ্তর বলেছে, নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক হিসাব চূড়ান্ত না করার দায় যাদের ওপর বর্তায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের জ্বালানি তেলে স্টোরেজের বেশি তেল আমদানি করায় অতিরিক্ত জাহাজ ফ্লোটিং করে বাড়তি খরচ করায় ৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়। একই অর্থবছরে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ব্যয় না করে জমার অতিরিক্ত ঋণ (ওভার ড্রাফট) নিয়ে ব্যয় করায় ২৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। বিপিসির নিজস্ব তহবিলের অর্থ থাকা সত্ত্বেও ব্যাংক ঋণ নেওয়ায় সুদ বাবদ অর্থ ক্ষতি হয়েছে বলে সিএজি অফিস তখন জানিয়েছিল।
ওই অর্থবছরে সিএজি অফিস এক অডিট আপত্তিতে জানায়, অকার্যকর অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ এবং যথাযথ পর্যায়ের প্রত্যক্ষ তদারকির অভাবে বিপিসির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও পারফরমেন্সকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশে জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এছাড়া বিপিসির পরিশোধিত ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং আপদকালীন সময়ে পর্যাপ্ত তহবিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতেও সুপারিশ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের ন্যায় বাংলাদেশে জ্বালানি তেল অপারেশনে অটোমেশন পদ্ধতি দ্রুত চালু করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া, কমিটি প্রাতিষ্ঠানিক প্রভিশনাল ও চূড়ান্ত হিসাব যথাসময়ে প্রণয়নপূর্বক বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধিসহ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।