পাথেয় রিপোর্ট : পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের বালাকোটে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার ঘন্টাকয়েক পরই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় গোখলে সাংবাদিকদের বলেছেন, বালাকোটের জঙ্গি-আস্তানা ধ্বংস করা হয়েছে এবং বিশাল সংখ্যক জঙ্গিকে হত্যা করা হয়েছে। বিমান হামলায় পাকিস্তানের কেউ মরেনি।
এই তথ্য প্রচারের আলোয় আসার পর প্রায় সব নামজাদা বিদেশি সংবাদমাধ্যম সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘুরে জানায়, সেখানে ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোনো চিহ্নই নেই। মাত্র একজন আহত হয়েছে বলে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স। আর ধ্বংস হয় কিছু গাছপালা। এরপর সেই খবর বিতর্ক সৃষ্টি করে। সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রশ্ন তো বটেই, ওই অভিযানে আদৌ কারো মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বিদেশি মিডিয়ার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রশ্ন তোলেন, ঠিক কত জন মারা গেছে বা কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ্যে আসা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার তা জনগণকে জানাক। মুখ্যমন্ত্রীর এই বিবৃতির পর তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে। কেন্দ্রের শাসক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা একসুরে সমালোচনা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং বা অন্য কেউই বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। ফলে, বিদ্রোহীদের নিহত হওয়ার বিষয়টি এখনো স্বচ্ছ হয়নি। ঠিক সেই সময়ই এ প্রসঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং দার্জ্জিলিং-এর বিজেপি সাংসদ এসএস আহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য এই বিতর্ককে আরও উস্কে দিয়েছে। তিনি গতকাল স্পষ্টভাবে বলেছেন, এয়ারস্ট্রাইকে পাকিস্তানের ক্ষতি না হওয়ার কারণ, কোনো মানুষ মারার ইচ্ছাই ছিল না ভারতের। আমরা শুধু দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যে আমরা চাইলেই তোমাদের ধ্বংস করে দিতে পারি।
এভাবেই বালাকোটে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া। জীনিউজ, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ইন্ডিয়া টুডে ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম আহলুওয়ালিয়ার এই মন্তব্য প্রকাশ করেছে। গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে। বৈঠক শেষে গোখলে মুখ না খুললেও কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী এবং দার্জিলিংয়ের সাংসদ এস আহলুওয়ালিয়ার স্পষ্ট জানিয়েছেন, বালাকোট হামলায় কোনও প্রাণহানি হয়নি। প্রাণহানি না হওয়ার কারণ, ভারত জীবনহানি চায়নি।
২০০-৩০০ জন নিহত হওয়ার খবরের দায় মিডিয়ার উপর চাপিয়ে আহলুওয়ালিয়ার বলেন, বালাকোট ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য তিনি শুনেছেন। প্রধানমন্ত্রীকে একবারও জঙ্গি মৃত্যুর কথা বলতে শোনা যায়নি। এমনকি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বা বিজেপির কোনও মুখপাত্রও এমন কথা বলেননি। সরকারের তরফেও কেউ এই দাবি করেননি।
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী আহলুওয়ালিয়ার বলেন, ভারত শুধু পাকিস্তানে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটির সামনে ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলে দেখিয়ে দিতে চেয়েছে, ভারত চাইলে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দিতে পারে।
ওদিকে ভারতের এয়ারস্ট্রাইক প্রসঙ্গে পাকিস্তান দাবি করেছে, খালি বনভূমি ধ্বংস হওয়া ছাড়া আর কোনও ক্ষতি হয়নি পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। সেই দাবি এদিন কার্যত মেনে নিলেন আহলুওয়ালিয়ার। পরোক্ষে তিনি স্বীকার করে নিলেন, এয়ারস্ট্রাইকে খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি জঙ্গিরা।