বিরোধী দল কে হবে, জানতে চেয়েছে ইইউ : ওবায়দুল কাদের

বিরোধী দল কে হবে, জানতে চেয়েছে ইইউ : ওবায়দুল কাদের

দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে সেই প্রশ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল তুলেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফলই তা ঠিক করবে।

মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউয়ের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, উপ-দপ্তর সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত প্রমুখ।

বৈঠকের পর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন,‘নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়ে…দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কে হবে, সেই বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি, নির্বাচনবিরোধীদের অবস্থান ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুই সদস্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা বলার চেয়ে শুনতে আগ্রহী ছিলেন বেশি। নির্বাচন নিয়ে আমাদের উত্তরে তারা পজিটিভ (ইতিবাচক)। আমাদের কথাই তারা বেশি শুনেছেন।’

তিনি আরও বলেন,‘আমরা ইইউকে জানিয়েছি, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থেকে নির্বাচন করতে হচ্ছে। একে ঘিরে সারা দেশে ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা বিরাজ করছে। আশা করি, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক হবে। আমরা ইইউকে বলেছি, নির্বাচনের ফলাফলে বলে দেবে বিরোধী দল কে হবে। আমরা ওয়েস্ট মিনিস্টার গণতন্ত্রের নতুন একটা কৌশল এবং মডেল আমরা তৈরি করতে যাচ্ছি। এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কাজ করতেই পারেন। তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই।’

বাংলাদেশ নিয়ে পশ্চিমাদের এখন আর কোন মাথাব্যাথা নেই বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বিএনপি সহিংসতা করছে। বাংলাদেশে খোমেনি আদলে বিপ্লব হবে- এমন দুঃস্বপ্ন দেখছে তারা। কিন্তু এটা আদৌ সম্ভব নয়। কারণ, এদেশ নিয়ে বিদেশিদের এখন মাথাব্যথা নেই। ইউক্রেন, গাজা নিয়ে ভাবছে তারা।

তারেক রহমানকে দেশে এসে আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠে ভুয়া হয়ে গেছে বিএনপি। যে নারী দেখতে ভালো না, তার চলন বাঁকা, বিএনপির অবস্থা এই। নজরুল ইসলাম খানকে বলে দিও, পাগলের সুখ মনে মনে।’

এর আগে দলীয় কার্যালয়ে পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী পর্বে যোগ দেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণ নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘একটা বিষয় দুঃখজনক ও নিন্দনীয় যে, দায়িত্বশীল নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন। এমপি ছিল, মন্ত্রী ছিল; এমন লোকেরা এখনও ধমকের সুরে কথা বলে। এখনও ক্ষমতার দাপট যারা দেখায়, তাদের মুখ বন্ধ করতে হবে।’

পাথেয় টোয়েন্টিফোর ডটকম : তিনি আরও বলেন,‘ অসুস্থ পরিবেশ যারাই সৃষ্টি করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে কোনও হেলাফেলা চলবে না। রোজ পত্রিকা খুললেই দেখি, ধমক দিচ্ছে। সংসদীয় এলাকা কারও বাপ দাদার সম্পত্তি নাকি? এলাকা জনগণের, জনগণকে ভোট দিতে হবে, ভোটাররা যাতে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে যারা বাধা দেবে তাদের প্রতিহত করতে হবে।’

একাধিকবার নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম ও আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে সম্প্রতি কুমিল্লা-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ও বরগুনা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভুকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পৃথক চিঠিতে তাদের তলবের পাশাপাশি কেন প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন ইসির আইন শাখার উপসচিব মো. আব্দুছ সালাম।

এই বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এরা কিসের জনপ্রতিনিধি? যারা বাজে কথা বলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। যারা নষ্ট করবেন তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিলে আমরা অকুণ্ঠ সমর্থন জানাব। এখানে কোনও প্রকার আপস করব না।’

দলীয় পোলিং এজেন্টদের দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘এজেন্টরা অনেক সময় অকাজের হোতা হয়ে যায়। ভেতরে বসে অতি দরদ দেখাতে গিয়ে নির্বাচনের শৃঙ্খলা নষ্ট করে। এমন এজেন্টের দরকার নেই। দলের সুনাম যেন থাকে, এমন এজেন্ট আমাদের দরকার।’

তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আমরা খুব ভালোভাবে করতে চাই। নির্বাচন নিয়ে বদনাম নিতে চাই না। শেখ হাসিনা সত্যিকার অর্থে একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন চান। তার ইচ্ছাকে সার্থক করতে হবে। সে ব্যাপারে পোলিং এজেন্টদের নিষ্ঠার সঙ্গে করতে হবে। আমরা খুবই কঠিন সময় অতিক্রম করছি। সারা বিশ্বই সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশ্ব সংকটের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন নয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন আছে।’

পৃথিবীর অনেক দেশের রাজনৈতিক দল নির্বাচন থেকে সরে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বানচাল করার জন্য সহিংসতার প্রস্তুতি বিরল ঘটনা। বাংলাদেশে এটা হচ্ছে। নেতা নেই, রিমোট কন্ট্রোলে লিডারশিপ।’

পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ উপ-কমিটির আহ্বায়ক সাবের হোসেন চৌধুরী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *